সিলেট ভ্রমণ: জাফলং খাশিয়া পল্লী ভ্রমণ
আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
বুধবার, ১৪ ই মে ২০২৫ ইং
সকালের নরম আলোয় যখন পাহাড়ের পেছনে সূর্য জেগে ওঠে, ঠিক তখনই আমাদের যাত্রা শুরু হয় জাফলং এর উদ্দেশ্যে। সিলেট শহরের ব্যস্ততা পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে চলি সবুজে মোড়া পথ ধরে। যখন জাফলং পৌঁছাই, তখন সূর্য মাথার ওপরে, কিন্তু মন জুড়ে ঠাণ্ডা এক প্রশান্তি। স্বচ্ছ জলের নিচে পাথরের সারি আর ভারতের পাহাড়ি দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। নৌকায় করে নদী পার হতে হতে দূরের মেঘে ঢাকা পাহাড় যেন আরও কাছে এসে যায়। নৌকা থেকে নামতেই দেখা মেলে এক বাঁশের সাঁকো, যেটা পেরিয়ে যেতে হয় খাশিয়া পল্লীতে পৌঁছাতে। সেখানেই শুরু হয় এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
খাশিয়া পল্লীতে পা রেখেই মনে হলো যেন আরেকটি ভুবনে প্রবেশ করেছি। চারপাশে ছিমছাম কাঠের ঘর, প্রতিটিই তৈরি উঁচু মাচার মতো করে, যেন বৃষ্টির পানি আর বন্যা থেকে ঘর রক্ষা করা যায়। ঘরের আশপাশে ছড়িয়ে আছে সুপারি গাছ, যা খাশিয়া পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। নারীরা সকালের আলোতে পানের খাঁচিতে সুপারি সাজিয়ে রাখছেন, কেউবা আঙ্গিনায় পাতা শুকাতে দিয়েছেন। বাচ্চারা দৌড়ে খেলছে, তাদের হাসির শব্দ ঘুরে বেড়াচ্ছে বাতাসে। খাশিয়ারা সাধারণত খাসিয়া ভাষায় কথা বলেন, তবে অনেকেই বাংলাও বুঝতে পারেন। ছোট ছোট কথোপকথনে বোঝা যায়, তারা অতিথিপরায়ণ ও সহজ সরল মানুষ।
একজন বয়স্ক খাশিয়া মহিলার সঙ্গে গল্প করতে করতে জানতে পারি তাদের সংস্কৃতির কথা। খাশিয়ারা মাতৃতান্ত্রিক সমাজে বাস করে, অর্থাৎ সম্পত্তির উত্তরাধিকার যায় মেয়েদের দিকে। তাদের বিয়ে, উৎসব, খাবার ও ভাষার রয়েছে স্বতন্ত্রতা। তারা বিশ্বাস করে প্রকৃতি তাদের আশ্রয়দাতা, তাই গাছপালা কাটা বা পরিবেশ নষ্ট করার প্রবণতা তাদের মধ্যে নেই। এই পল্লীতে ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক চর্চা পাশাপাশি চলে, যেখানে আধুনিকতা ঢুকলেও মূল শিকড় অটুট। আমাদের শহুরে জীবনের চাপে যেসব মূল্যবোধ হারিয়ে যায়, সেগুলো এখানকার প্রতিটি মানুষের জীবনধারায় অক্ষুণ্ণভাবে বর্তমান।
কিছু ঘরে দেখা যায় হাতে তৈরি ঝুড়ি, পাপড়ি বা কাঠের তৈরি ঘরোয়া সামগ্রী। এখানকার মানুষ কাজপাগল, প্রতিদিন নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরাই সবকিছু তৈরি করেন। ছেলেরা মাঠে বা জঙ্গলে গিয়ে সংগ্রহ করে কাঠ, আর মেয়েরা ঘরে বসে সামগ্রী তৈরি করে। এই স্বনির্ভর জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে প্রতিটি ঘরের কোণে। পর্যটক হিসেবে আমরা শুধু সৌন্দর্য দেখি, কিন্তু এখানকার মানুষের চোখে ধরা পড়ে শ্রমের রঙ। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ নয়, বরং সমঝোতার পথেই তাদের জীবন এগিয়ে চলে। এই জীবনের গল্পগুলো মনকে ছুঁয়ে যায়।
সন্ধ্যায় যখন ফেরার সময় আসে, মনটা ভার হয়ে ওঠে। পল্লীর শান্ত পরিবেশ, মানুষের আন্তরিকতা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। গাড়ি ছুটে চলে শহরের দিকে, কিন্তু মন পড়ে থাকে খাশিয়া পল্লীর কোন এক বাঁশঝাড়ের ছায়ায়। সেখানে যে প্রশান্তির দেখা মিলেছিল এই পল্লীতে। জাফলং ঘুরে আসা মানে শুধু প্রকৃতি দেখা নয়, বরং এক অন্যরকম জীবনচর্চার সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়া। সেই জীবন, যা সহজ, নির্ভেজাল আর সত্যিকারের। হয়তো এ কারণেই খাশিয়া পল্লীর স্মৃতি দীর্ঘদিন মনে থেকে যায়।খাশিয়া পল্লীতে কাটানো সেই মধুর মুহূর্ত গুলো এখন ও আমার মনে পড়ছে। ভবিষ্যতে জাফলং গেলে আবার সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করবো।
সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Device | iPhone 11 |
---|---|
Camera | 11+11 MP |
County | Bangladesh |
Location | Rangpur, Bangladesh |
Vote@bangla.witness as witness
Daily task
Link
https://x.com/Riyadx2P/status/1922587158520488114?t=6VSfayEW6p-RKnpIEoW__g&s=19
https://x.com/Riyadx2P/status/1922587438523854907?t=6VSfayEW6p-RKnpIEoW__g&s=19
Screenshot
সিলেট ভ্রমনের অনেকগুলো পর্ব আপনার কাছ থেকে একের পর এক দেখে আসছি৷ আজকে আরো একটি সুন্দর পর্ব আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন৷ আজকে আপনার কাছ থেকে এত সুন্দর একটি সিলেট ভ্রমণের মুহূর্ত শেয়ার করেছেন দেখে খুব ভালো লাগছে৷ যেভাবে আপনি আজকের এই সিলেট ভ্রমনের সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন তা খুবই সুন্দরভাবেই শেয়ার করেছেন৷ অনেক ভালো লাগলো আপনার কাছ থেকে এত সুন্দর একটি পোস্ট দেখে৷ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে৷