কৃঞ্চনগর বাজার- স্মৃতির ভেলায় ভেসে আসা এক অভিজ্ঞতা।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বাংলার মাটিতে প্রতিটি গ্রামীণ বাজারই যেন একেকটি ইতিহাসের অংশ, একেকটি গল্পের বাহক। ঠিক তেমনই একটি গল্পের সাক্ষাৎ পেলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কৃঞ্চনগর বাজারে। ছোটবেলা থেকে এই বাজারের নাম বহুবার শুনেছি, বিশেষ করে এর বৈশিষ্ট্যগুলো আমাকে সবসময় মুগ্ধ করেছে। কিন্তু নানা কারণে কখনো সরাসরি এই বাজারে পা রাখা হয়নি। অবশেষে গত মাসে ঈদের ছুটিতে সেই স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত চলে আসে।
কৃঞ্চনগর বাজারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই বাজার চারদিক দিয়ে পানি দ্বারা পরিবেষ্টিত। বাজারে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম নৌকা। আশেপাশের দূরদূরান্তের মানুষ নৌকায় করে বাজারে আসে। নদীপথের সঙ্গে বাজারের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাজারটিকে অন্য বাজারের তুলনায় আলাদা করেছে। আমি যখন বাজারে গিয়েছি, তখন ঘাটে অসংখ্য নৌকা বাঁধা ছিল। স্থানীয়দের কাছে নৌকাই প্রধান বাহন, যা গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্যকে আজও ধরে রেখেছে।
বাজারের কেন্দ্রে রয়েছে এক বিশাল পুরাতন বটগাছ। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বৃটিশ আমল থেকেই এই বটগাছকে কেন্দ্র করেই বাজারের সূচনা হয়েছিল। গাছটি শুধু বাজারের সৌন্দর্যই বাড়ায়নি, বরং প্রমাণ করেছে সময়ের সাক্ষী হিসেবে তার অবস্থান। তার বিশাল শাখা-প্রশাখা বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য প্রাকৃতিক ছায়ার ছাউনি তৈরি করেছে। গরম উতপ্ত রোদের মধ্যেও এখানে শান্তির বাতাস পাওয়া যায়। বাজারের এক পাশে রয়েছে কৃষ্ণনগর আবদুল জব্বার স্কুল এন্ড কলেজ। আর বিশাল বড় খেলার মাঠ। সকালে ও বিকালে মাঠেও বাজার বসে।
এই বাজারের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো এখানে কোনো চাষের মাছ বিক্রি হয় না। সরাসরি নদী থেকে ধরা তাজা মাছ বাজারে আনা হয়। মাছের ঝুড়ি থেকে ভেসে আসা সেই কাঁচা গন্ধ, নদীর স্মৃতি এবং প্রকৃতির ছোঁয়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা। গ্রামের মানুষের জন্য এই তাজা মাছের বাজার যেন এক স্বর্গরাজ্য।
ঈদের ছুটিতে এক বড় ভাইয়ের বাড়িতে বেড়ানোর সময় কৃঞ্চনগর বাজারে নামার সুযোগ হয়। সেদিনের সকালটা ছিল মেঘলা, হালকা বাতাস বয়ছিল নদীর বুক জুড়ে। বাজারে নামার সাথে সাথে এক অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতি হলো। চারদিকে পলিথিনে মোড়া দোকান, সবজির স্তূপ, রঙিন ছাতার নিচে বসা বিক্রেতারা আর পাশে বাঁধা নৌকার সারি সবকিছু মিলিয়ে এক অন্যরকম দৃশ্য।
আমি বাজারে কিছু সদাইও কিনলাম। নতুন জায়গার মানুষ হিসেবে দোকানিরা বেশ আগ্রহ নিয়ে কথা বলছিলেন। স্থানীয়দের আন্তরিকতা সত্যিই মন ছুঁয়ে গেল। ঘুরতে ঘুরতে আমি সেই পুরনো বটগাছটার কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাবছিলাম, কত মানুষ, কত গল্প, কত ইতিহাস এই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে। আজ তারা নেই কিন্তু কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে বটগাছটি।
বাজারের মানুষের মুখে শুনলাম, এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। নবীনগর উপজেলার সাথে ব্রিজ রাস্তা হচ্ছে। যদি তা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বাজারে যাতায়াত আরও সহজ হবে। তবে মনে মনে ভাবছিলাম, ব্রিজের সুবিধা আসলেও, হয়তো হারিয়ে যাবে এই নৌকা-কেন্দ্রিক জীবনের সৌন্দর্য।
কৃঞ্চনগর বাজারে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল বহুদিনের। সেই ইচ্ছা পূরণ হওয়ার আনন্দ এখনো মনে গেঁথে আছে। এটি শুধু একটি বাজার নয়, বরং গ্রামীণ জীবনের চিরন্তন ঐতিহ্যের প্রতীক। নদী, নৌকা, বটগাছ আর তাজা মাছের সমাহারে এই বাজার সত্যিই অনন্য। যারা প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবনের সৌন্দর্য ভালোবাসেন, তাদের জন্য কৃঞ্চনগর বাজার হতে পারে এক অনবদ্য অভিজ্ঞতার স্থান।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | রিয়েলমি সি-৫৩ |
ফটোগ্রাফার | @joniprins |
স্থান | কৃষ্ণনগর বাজার, নবীনগর , ব্রাহ্মনবাড়িয়া |
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
ভাই আপনার ইপুশ ব্যালেন্স মাইনাস দেখাচ্ছে, পুশ পাওয়ার আপ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ধন্যবাদ
পুশ পাওয়ার আপ করা হয়েছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
https://x.com/RamimHa74448648/status/1945323626963853567?t=bYp-Rxn7xPB3r9s1OjDnHw&s=19