শব্দ দূষণে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে

in #krsuccess3 years ago

সাকিবুল ইসলাম

আমরা সকলেই শব্দ দূষণ নামক শব্দের সাথে পরিচিত। এই শব্দদূষণ মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু দিন দিন এই শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে আরো বেড়ে চলেছে। যত দিন যাচ্ছে পরিবহন বৃদ্ধি পাচ্ছে, রাস্তায় তত বেশি শব্দ দূষণ হচ্ছে। কিন্তু এর সমাধান কোথায়?
উচ্চ মাত্রার শব্দ মানুষের মানসিক অবস্থা বদলে দেয়। দীর্ঘ সময় এর মধ্যে থাকলে মানুষের মেজাজের পরিবর্তন ঘটে, যাকে বলা হয় মুড ডিজঅর্ডার। এর ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়ে, মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। আর বিশেষ করে শিশুদের শব্দের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। উদ্বেগ, মানসিক চাপ বাড়ার ফলে তাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে শিশুর ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গর্ভের শিশুর ব্যক্তিত্বের গড়ন, আচরণ ও চিন্তায় প্রভাব ফেলতে পারে।মানুষের সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম দরকার। কিন্তু সারাক্ষণ উচ্চ মাত্রার শব্দের মধ্যে থাকার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

শব্দ দূষণে বিশ্বের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম; রাজধানী ঢাকায় এই দূষণের মাত্রা অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে বেশি, আর রাজশাহী রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২: নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় শব্দের সর্বোচ্চ তীব্রতা ১১৯ ডেসিবল, যা এ প্রতিবেদনে আসা শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৯৯ সালের গাইডলাইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকার জন্য শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৫৫ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবল। ২০১৮ সালের সর্বশেষ হালনাগাদ গাইডলাইনে সড়কে শাব্দের তীব্রতা ৫৩ ডেসিবলের মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ করা হয়।
এই হিসাবে ঢাকার বাসিন্দাদের পথ চলতে গিয়ে জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সীমার দ্বিগুণ মাত্রার শব্দের অত্যাচার সহ্য করতে হয়।
সুইস সংস্থা আইকিউ এয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বের কোনো দেশই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে পারেনি; আর দূষণের মাত্রার বিচারে সবার উপরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।
শব্দ দূষণের কারণে ইউরোপে প্রতিবছর ১২ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হয়, রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাতজনিত হৃদরোগীদের তালিকায় ৪৮ হাজার নতুন রোগী যুক্ত হন। এ ছাড়া শব্দের কারণে ইউরোপের ২ কোটির বেশির মানুষ বিরক্তিতে ভোগেন।

শব্দ দূষণ মানসিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলে। তাই দুর্ঘটনার পেছনে এর প্রভাব থাকতে পারে। অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে উচ্চ মাত্রার শব্দের মধ্যে দীর্ঘসময় কাটালে তা উদ্বেগ, মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
শব্দ দূষণের ফলে নানা মাত্রার শ্রবণবধিরতা দেখা দেয়। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা যেহেতু উচ্চ মাত্রার দূষণের মধ্যে থাকেন, তাই তাদের নানা মাত্রার শ্রবণ বধিরতা থাকার সম্ভাবনা আছে। সড়কে নিয়মিতভাবে চলাচলকারী চালকদের মধ্যেও এমন বধিরতা থাকলে তা থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। উচ্চ মাত্রার শব্দ দূষণের ফলে উত্তেজনা তৈরি হয়, যা হৃদরোগকে প্রভাবিত করে।
তাই শব্দ দূষণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, না হলে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি স্বরূপ।

সাকিবুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সদস্য, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার, কলাম অ্যান্ড কনটেন্ট রাইটার্স
01855587939
ahmedsakib117866@gmail.com