জীবনের শেষ প্রহরে নিঃস্বতা: একটি বাস্তব ঘটনার করুণ শিক্ষা।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
মানুষ জীবনের বড় অংশ কাটিয়ে দেয় পরিবার, সন্তান, ভবিষ্যৎ আর সুখের স্বপ্নের পেছনে। কিন্তু কখনো কখনো যাদের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা হয়, সেই মানুষরাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে দূরের। সম্প্রতি আমাদের এলাকায় ঘটে যাওয়া এক ঘটনাই যেন তার জীবন্ত প্রমাণ।
একজন মানুষ সরকারি চাকরিজীবী, সৎ, পরিশ্রমী, দায়িত্ববান পুরো জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন পরিবারকে ঘিরে। নিজের গ্রামে বসতবাড়ি, জমিজমা, বা কোনো বড় কিছু গড়ে তোলার দিকে মন দেননি। বরং পাশের গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখেছিলেন। বিশ্বাসের জায়গা থেকে স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শ্বশুরবাড়ির গ্রামেই জমিজমা কিনেছেন, ঘরবাড়ি করেছেন।
জীবনের সমস্ত সঞ্চয়, এমনকি চাকরি থেকে অবসরের পর পাওয়া পেনশনের টাকাও, তিনি খরচ করেছেন স্ত্রীর নামে জমি কিনতে। ভেবেছিলেন “স্ত্রী তো আমারই মানুষ, সন্তানদের মা, তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকলেই হলো।” কিন্তু এই বিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলে পরিণত হলো।
এদিকে স্বামী-স্ত্রী মিলে দুই সন্তানকে বিদেশে পড়াশোনা করিয়েছেন। ছেলে গেছে কানাডা, মেয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। বিদেশের মাটিতে পড়াশোনা শেষে তারা নিজেরাই বিয়ে করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে। এক সময়কার স্বপ্ন “সন্তানরা বিদেশে পড়বে, বড় কিছু হবে”পূরণ হলো বটে, কিন্তু তার বিনিময়ে তারা বাবা-মায়ের আবেগ, দায়িত্ব আর সম্পর্কের বন্ধন থেকে ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে গেল।
সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ একদিন ওই ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের শ্বশুরবাড়ির গ্রামে একটি ভবন তুলবেন, কিছু জমি বিক্রি করে নির্মাণ কাজ শুরু করবেন। কিন্তু তখনই বেরিয়ে এলো চরম সত্য তিনি ভেবেছিলেন যেসব জমি স্ত্রীর নামে, সেগুলো তো আসলে স্ত্রীর বড় ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করা! স্ত্রী নিজেই স্বামীকে না জানিয়ে, নিজের পরিবারের সুবিধার্থে এভাবে মালিকানা পরিবর্তন করে রেখেছিলেন।
কথা বললে স্ত্রী জানিয়ে দিলেন আমি আর এই শ্বশুরবাড়িতে থাকব না। এবং হঠাৎ করেই ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনে দিলেন ডিভোর্স দিয়ে।
এখন মানুষটি নিঃস্ব, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, প্রায় পাগলপ্রায়। জীবনের এত বছরের পরিশ্রম, ভালোবাসা, ত্যাগ যেন মুহূর্তে শূন্যে মিলিয়ে গেল। সন্তানদের ফোন করলে তারা ঠাণ্ডা গলায় বলছে“এগুলো তোমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমরা দেশে ফিরব না।”
এই ঘটনা নিছক পারিবারিক সংকট নয়; এটি একটি শিক্ষাও বটে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের ভাবতে বাধ্য করে
সম্পদের নিরাপত্তা:
জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ, জমিজমা, বাড়ি-ঘর অন্ধ বিশ্বাসের জায়গা থেকে এককভাবে কারও নামে না দিয়ে, আইনগতভাবে সুরক্ষিতভাবে ভাগাভাগি করে রাখা জরুরি।
সম্পর্কে স্বচ্ছতা:
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আর্থিক সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা থাকা উচিত। একতরফা সিদ্ধান্ত প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি ডেকে আনে।
সন্তানদের উপর অন্ধ নির্ভরতা নয়:
সন্তানদের বিদেশে পাঠানো মানেই যে তারা বাবা-মায়ের পাশে সবসময় থাকবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। নিজের জন্য আলাদা একটি নিরাপত্তা-ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
আইনি সচেতনতা:
যদি কোনো জমি বা সম্পত্তি ক্রয় করা হয়, সেটি ঠিকভাবে রেজিস্ট্রি হয়েছে কিনা, আসল মালিকানা কার নামে—এগুলো নিয়মিত যাচাই করা উচিত।
জীবনের শেষ বয়সে কেউই চায় না নিঃস্ব ও একা হয়ে যেতে। কিন্তু এই ঘটনার মতো অসংখ্য উদাহরণ প্রমাণ করে যে পরিকল্পনার অভাব, অতি বিশ্বাস, এবং আবেগে গৃহীত সিদ্ধান্ত এক সময় জীবনকে শূন্য করে দিতে পারে।
তাই আমাদের সবার উচিত পরিবারকে ভালোবাসার পাশাপাশি নিজের নিরাপত্তা, নিজের ভবিষ্যৎ, এবং আইনগত সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। কারণ জীবন কখন কোন দিকে মোড় নেবে, কেউ জানে না।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server