জেনারেল রাইটিংঃ- আমরা সবসময় গরিবদেরই ঠকাই।

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসি, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আজ আপনাদের সাথে একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করব। সেটা হচ্ছে, আমরা প্রতিনিয়ত গরিব এবং নিরীহদেরকে ঠকাচ্ছি সেই বিষয়ে।


IMG_20250414_122139_262.jpg

নিজের তোলা একটি প্রতিকী ছবি

অনার্স শেষ হওয়ার পর আমি একটি ইন-ভিট্রো ডায়াগনস্টিক ডিভাইস কোম্পানিতে চাকরি নেই। আপনাদের চেনার সুবিধার্থে বলি, ডাক্তাররা যে সকল টেস্ট মানুষকে দেয়, সে টেস্টগুলো যে মেশিন এবং যে রিএজেন্টের সাহায্যে করা হয়, সেগুলোই হচ্ছে ইন-ভিট্রো ডায়াগনস্টিক ডিভাইস। সেখানে দেখলাম একটি টেস্ট করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় তার কয়েকশগুন বেশি টাকা রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয় টেস্টের খরচ হিসেবে। ধরুন, একটি টেস্টের মূল্য ৪০০ টাকা। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সেই টেস্টের রিএজেন্ট খরচ হচ্ছে মাত্র চার টাকা। এখানে অনেক যদি কিন্তু আছে।

সাধারণত একটি টেস্টের প্রাইস এমনভাবে ফিক্সড করা থাকে, যার অর্ধেক খরচ ধরা হয়। অর্থাৎ আপনি কোন টেস্ট করাতে চাইলে টেস্ট করানোর আগেই আপনাকে ন্যূনতম অর্ধেক টাকা পরিশোধ করতে হবে। এটা হসপিটাল অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের খরচ। অর্থাৎ, এই খরচে মেশিন কেনার টাকা, কেমিস্টদের স্যালারি, মেনটেইন্যান্স খরচ ইত্যাদি ধরা হয়। বাকি টাকাটা যারা রোগী পাঠায় তাদেরকে দেওয়া হয় এটাকে বলা হয় পি.সি.। অর্থাৎ পেশেন্ট কমিশন। এহেন অবস্থা দেখে আমি খুবই দুঃখ পাই। নানাবিধ কারণে সে চাকরিটি আর আমি করিনি।

এখন আবার ফার্মাসিটিক্যালস জগতে ঢুকেছি। এখানে আমার অভিজ্ঞতাও কম নয়। পাঁচ বছর হয়ে গেছে। এখানেও দেখছি, যেগুলোকে আমরা দুই নাম্বার ঔষধ হিসেবে জানি, আমরা আদর করে ডাকি হলাই ঔষধ, এগুলো গরিব মানুষকে বেশিরভাগই দেওয়া হয়। মাল্টিভিটামিনের কথাই বলি। একটি ভালো কোম্পানির মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট অথবা সিরাপ যদি কোন রোগীকে দেওয়া হয়, সেখানে সর্বমোট বারো শতাংশ লাভ থাকে। যদি বোনাস হিসাবেও থাকে, তাহলে সেখানে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ লাভ থাকে। ভালো কোম্পানির মেডিসিন বোনাসে কিনে রোগীকে দিলে তাতেও ক্ষতি নেই। কারণ রোগীর উপকার হচ্ছে। আপনার লাভও বেশি হচ্ছে।

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ ছোট ছোট ফার্মেসিগুলো ৬০ থেকে ৭০ টাকা দামের মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট অথবা সিরাপ কিনে তা রোগীর কাছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, যারা এগুলো কিনে খায় তারা সবাই গরিব। খুবই কষ্ট করে নিজের দিনযাপন করছে। উনারা জানেনা উনারা এত টাকা দিয়ে যে ওষুধটি খাচ্ছে সেটি আসলে তাদের ক্ষতি করছে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, বয়স হয়ে গেলে তারা নানা রকমের অসুখের ভুগে যেহেতু তাদের সামর্থ্য নেই, তাই সেই অসুখের ট্রিটমেন্টও তারা করতে পারে না। অযত্নে, অবহেলায় একসময় তারা মারা যায়।

মেডিসিন জগতে আমার যিনি ওস্তাদ, অর্থাৎ যার কাছ থেকে আমি শিখেছি, তিনি এই বিষয়টি কখনোই করতেন না। যার ফলে এগুলো আমারও করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু পাইকারি দোকানের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় প্রায় সময় দেখি ছোট ছোট দোকানদাররা এধরনের ওষুধগুলোই বেশি বিক্রি করে।

অবশ্য স্রষ্টার মার অন্যরকম। আমি খেয়াল করে দেখেছি, যারা এধরনের ওষুধ বিক্রি করে, তারাও নানারকম সমস্যায় ভুগে। তারা ঠিক মতো দোকান ভাড়া পরিশোধ করতে পারেনা। সব সময় ঋণগ্রস্থ থাকে। তাদের পরিবার কিছুদিন পরপর মারাত্মক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়। অথবা কোন না কোন ভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিরাট অংকের জরিমানা তাদের লেগে যায়। অর্থাৎ তারা যে গরিব মানুষদেরকে ঠকাচ্ছে সেই টাকা কিন্তু তারাও ভোগ করতে পারেনা।


PUSSFi_NFT22.png