জীবনের গল্প || সেকাল আর একালের পার্থক্য

in আমার বাংলা ব্লগlast month

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও ভালো আছি এবং সুস্থ আছি। তবে অতীতের স্মৃতিগুলো খুব বেশী যন্ত্রণা দিচ্ছে। বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে এবার যেহেতু কোথায় যেতে পারিনি সেহেতু শৈশবের সেই সুন্দর মুহুর্তগুলো বেশ মনে পড়েছে। এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ আজকাল মানুষ ঈদের ছুটিতে খুব একটা বাহিরে যেতে চায় না, এখানে শুধু বাহিরের পরিবেশ দায়ী নয় বরং আমাদের সমাজও বেশ দায়ী। কারণ খালি বাড়ি রেখে এখন আর বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার সাহস কেউ করে না, পরে দেখা যায় সেই সুযোগে পুরো বাড়ি খালি হয়ে গেছে।

আমি যখন ঢাকায় ছিলাম, তখন সেটা নিদারুনভাবে অনুভব করেছি। উৎসবের এই ছুটির দিনগুলোতে মানুষের মাঝে একটা অস্বস্তি থাকে, একটা ভয় থাকে এবং প্রতিনিয়ত একটা আশঙ্কা খোঁচা দিতে থঅকে। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী ছিলাম একবার, ঈদের ছুটিতে বাহিরে গিয়েছিলাম ঘুরতে, খুব বেশী রাত হয়নি সাবে মাত্র ৭টা কি সাড়ে সাতটা হবে রাত, সেই সময়ই বউয়ের স্বর্ণের চেইনটি খোয়াতে হয়েছিলো। এবার বুঝেন অবস্থা কেমন ছিলো। আমরা উন্নত হয়েছি, চারপাশের পরিবেশটা উন্নত হয়নি, মানুষের মানসিক অবস্থার নিদারুণ অধঃপতন হয়েছে কিন্তু আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন কি এমন পরিবেশ ছিলো?

man-8091933_1280.jpg

একদমই ছিলো না, কারণ তখন সামাজিক অবস্থা এতোটা নাজুক ছিলো না। নাজুক মানে এতোটা বিচ্ছিন্ন ছিলো না, পারস্পরিক সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিলো, একজন অন্যজনের বাড়িতে যেতেন, খাওয়া দাওয়া কিংবা আড্ডা হতো পারিবারিকভাবে। সম্পর্কগুলো খুব বেশী আপন ছিলো, যার প্রভাব বাহিরেও ছিলো। একে অন্যের বিপতে দৌড়ে আসতেন, নিজের ক্ষতি কিংবা লাভ কোনটাই হিসেব করতেন না। যার কারণে অন্যায় করে কেউ খুব সহজেই পার পেয়ে যেতেন না। আর এখন? কারো সামনে কোন নিরিহ মানুষকে খুন করে ফেললেও কেউ এগিয়ে আসবে না, কেউ আপনাকে বাঁচাতে চাইবে না।

এই অবস্থার সুযোগটাই নিচ্ছেন অনেকেই, জানে বিপদে কেউ পড়তে চাইবে না, অন্যের সমস্যা নিজের কাঁদে কেউ নিতে চাইবে না। একবার বাসে অন্য একজনের সমস্যায় আমার বড় ভাই এগিয়ে গিয়েছিলেন, সেই লোকটিকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ভাই এবং তার বন্ধুরা বেশ মাইরও খেয়েছিলেন, সেটা নিয়ে আমাদের এলাকায় চরম হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিলো। পরে স্থানীয় বড় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যস্থতায় কাংখিত সমাধান আসে। তারা সবাই আমার ভাইকে বকেছিলেন, তুমি কেন এগিয়ে গেলে এটা তো তোমার কোন সমস্যা ছিলো না। যেহেতু প্রভাবশালীদের কেউ কেউ আমাদের পক্ষে ছিলেন।

এটা কি এখন কল্পনা করা যায়? বাসে কেউ আপনাকে জোর করে অপমান করছে কিংবা ভাড়া বেশী নিচ্ছে, অন্যরা কি আপনাকে সাপোর্ট করবে? কেউ করবে না, যাচাই করে দেখতে পারেন। সবাই মনে মনে ভাববে এটা তার সমস্যা, তাতে আমার কি? সমাজের এই হীন পরিবেশের সাথে সাথে আমাদের মানসিকতাও নষ্ট হয়ে গেছে। আমরাও নিদারুণভাবে পঁচে গেছি, আমাদের বিবেকে পঁচন ধরেছে, আর এই কারণেই আমাদের বর্তমান অবস্থা এতোটা খারাপ। কত সুন্দর ছিলো আমাদের শৈশবের সেই দিনগুলো, সেই মানুষগুলো এবং তাদের মানসিকতা। পরিবর্তন আসুক আমাদের মানসিকতায়।

Image Taken From Pixabay

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break .png
Leader Banner-Final.pngbreak .png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break .png

Banner.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.