লাইফ স্টাইল পোস্ট -“আপন কফি হাউজে ছোট বোনের সাথে কিছুটা সময়” || Written by @maksudakawsar ||
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। বেশ ব্যস্ততায় যাচেছ সময়। সেই সাথে তো রয়েছে প্রচুর মানসিক চাপ। সব মিলিয়ে বেশ হিমশিম খেতেই হরো চ্ছে। তবুও এরই মধ্যে চলে যাচ্ছে সময় আর দিন। আর সেই সাথে জীবন থেকে চলে গেল কিছু সুন্দর সময়ও। বুঝতেই পারলাম না সময়গুলো কখন আসলো আর কখন গেল। যাই হোক আমিও চলে আসলাম আজ আবার আপনাদের মাঝে নতুন করে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

Image created- maksudakawsar, with AI Tools
খিলগাঁও এলাকার আপন কফি হাউজ যেন কফি প্রেমীদের জন্য এক বিশেষ ঠিকানা। যেদিন সেখানে গিয়েছিলাম, চারপাশের উচ্ছ্বাস আর কফির সুগন্ধ মিলে যেন এক আলাদা অনুভূতি তৈরি করছিল। শহরের এই ব্যস্ত এলাকায় এমন একটি জায়গা পাওয়া সত্যিই আনন্দের, যেখানে কফির স্বাদ আর পরিবেশ দুটোই মন ভরিয়ে দেয়। কফি খাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানোর গল্প অনেকের মুখে শোনা যায়, আর সেদিন নিজের চোখে দেখেও সেটা বুঝলাম। আশপাশের নানা এলাকা থেকে মানুষ আসে এখানে, তাই বসার জায়গা পাওয়া যেন একরকম ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা পৌঁছেই বুঝে গেলাম যে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতেই হবে।

প্রথমেই চোখে পড়লো সুন্দর সাজানো ছোট ছোট টেবিল আর নরম আলোয় ভরা আরামদায়ক ভেতরের পরিবেশ। দরজা পেরিয়ে ঢুকতেই কফির গন্ধ নাকে এসে লাগলো। সেই গন্ধে যেন এক ধরনের শান্তি, যা মনে এক আলাদা আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে সাধারণ একটি কফি হাউজ, কিন্তু ভেতরে ঢুকলে বোঝা যায় এখানে কফি আর আড্ডার মিশ্রণে এক অনন্য আমেজ লুকিয়ে আছে। অপেক্ষার সময়টুকু তেমন বিরক্তিকর লাগলো না, কারণ চারপাশের কোলাহল, আলো ঝলমলে সাজসজ্জা আর কফি বানানোর শব্দ সবকিছু মিলিয়ে সময় কেটে যাচ্ছিল মুগ্ধতায়।

অবশেষে আমরা বসার জায়গা পেলাম। সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল যেন একটা ছোট জয় হলো। আমার ছোট বোনের চোখে খুশির ঝিলিক দেখে মনের ক্লান্তি মিলিয়ে গেল। টেবিলে বসেই আমরা দুজনেই মেনু কার্ড দেখছিলাম। যদিও এখানে নানা রকম কফি আছে, আমাদের পছন্দ কিন্তু চকলেট কফি। আমরা দুটো চকলেট কফির অর্ডার দিলাম। কর্মীদের ব্যবহারও বেশ ভালো, হাসিমুখে অর্ডার নিলো এবং দ্রুত প্রস্তুত করতে লাগলো। কফি আসতে আসতে চারপাশের মানুষগুলোর দিকে তাকাচ্ছিলাম। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মশগুল, কেউ একা বসে বই পড়ছে বা ল্যাপটপে কাজ করছে। কারো হাতে কফির কাপ, কারো হাতে ক্যামেরা। মনে হচ্ছিল এই ছোট্ট জায়গাটিতে কত রকমের গল্প একসঙ্গে বেঁচে আছে। খিলগাঁওয়ের মানুষের কাছে যেমন এই জায়গা প্রিয়, তেমনই অনেক দূর থেকে আসা অতিথির জন্যও এটি আকর্ষণের কেন্দ্র।

অবশেষে আমাদের টেবিলে কফি এল। সুন্দর কাপে পরিবেশন করা ধোঁয়া ওঠা চকলেট কফি দেখে মনটা ভরে গেল। কাপের ভেতর থেকে ভেসে আসা ঘ্রাণ যেন পুরো দিনটাকে সুন্দর করে দিল। এক চুমুক খেলেই বোঝা গেল কেন এত মানুষ এখানে ভিড় করে। গাঢ় চকলেটের স্বাদ আর নরম ফেনা মিলে কফির স্বাদকে একেবারে অন্য স্তরে নিয়ে গেছে। প্রতিটি চুমুকে মিষ্টি আর কফির মিশ্র স্বাদ মুখে ছড়িয়ে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল যেন শহরের সব ক্লান্তি এই কফির ভেতর গলে যাচ্ছে। কফির দাম ৩২০ টাকা হলেও তার স্বাদ আর অভিজ্ঞতা তারচেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান মনে হলো। আমার বোনও প্রতিটি চুমুকে মুগ্ধ হয়ে বলছিল, এরকম কফি সে আগে কোথাও খায়নি। আমরা ধীরে ধীরে কফি উপভোগ করছিলাম, কারণ এই মুহূর্তটাকে যতটা সম্ভব দীর্ঘ করতে চাইছিলাম। বাইরে থেকে আসা ব্যস্ত শহরের শব্দ এখানে ঢুকতে পারছিল না। কেবল নরম সঙ্গীত আর কথোপকথনের মৃদু আওয়াজ মিলে যেন এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করেছিল।

কফি শেষ করলেও আমাদের বসে থাকার ইচ্ছে শেষ হচ্ছিল না। টেবিলে বসে আমরা দুজনেই চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। দেয়ালে ঝুলানো ছবিগুলো, নরম আলো, আর ভেতরের সাজসজ্জা সবকিছু যেন এক ধরনের গল্প বলছে। মনে হচ্ছিল এখানে প্রতিদিন কত মানুষ আসে, কত হাসি, কত স্মৃতি জমা হয়। এই ছোট্ট কফি হাউজ অনেকের সুখের মুহূর্তের সাক্ষী। আমাদের জন্য এটি শুধু কফি খাওয়ার একটি জায়গা নয়, বরং একটি অভিজ্ঞতা। খিলগাঁওয়ের আপনি কফি হাউজে যে উষ্ণতা, সুগন্ধ আর আনন্দের পরিবেশ আমরা পেয়েছি, তা মনকে অনেকটা সময়ের জন্য শান্ত করেছে। শহরের ব্যস্ত জীবনে এমন মুহূর্ত খুব দরকার। এখানে এসে মনে হয় জীবনকে ধীরে উপভোগ করা যায়, প্রতিটি মুহূর্তকে অনুভব করা যায়।

অপেক্ষার সময়টা যতই দীর্ঘ হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সেই স্বাদ, সেই পরিবেশ সবকিছুকে সার্থক করে তোলে। এক কাপ দারুণ কফির সঙ্গে কিছু প্রিয় মানুষের সময় কাটানো সত্যিই জীবনের এক সুন্দর অভিজ্ঞতা। খিলগাঁও এলাকায় যারা কফি ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠবে। ব্যস্ত দিনের মাঝে একটু থেমে, একটু হাসি আর এক কাপ গরম চকলেট কফির সাথে এখানে বসে থাকা যেন এক রকমের আনন্দ যা বারবার ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানায়।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | লাইফস্টাইল |
---|---|
ক্যামেরা | Vivo y18 |
পোস্ট তৈরি | @maksudakawsar |
লোকেশন | বাংলাদেশ |
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
