জেনারেল রাইটিংঃমহান মে দিবস। আমাদের বাস্তবতা।

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

সবাইকে মে দিবসের শুভেচ্ছা।

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন? আশাকরি সবাই নিরাপদে ও ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ ১৭ বৈশাখ, গ্রীষ্মকাল, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রীস্টাব্দ। প্রতি সপ্তাহের ন্যায় আজ একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। আশাকরি বরাবরের মত সাথেই থাকবেন।

mayday.jpg

source

আগামীকাল আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ১ লা মে। মে দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী বহুল পরিচিত। ১৮৮৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কাজ ও ন্যায্য মজুরীর দাবিতে যে সম্মিলিত আওয়াজ তুলেছিল, শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে সেই আওয়াজের প্রতিধ্বনি এখনো বিরাজমান। আমার আজকের আর্টিকেল এর উদ্দেশ্য মে দিবসের ইতিহাস নয়। বর্তমান আমাদের দেশের শ্রমিকদের একটি চিত্র তুলে ধরাই আজকের আর্টিকেলের উদ্দেশ্য। মে দিবস শ্রমিকদের দিন। বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের ৮০টির মত দেশে এই দিন সরকারি ছুটির দিন।বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি সরকারি ও বেসরকারি ভাবে পালিত হবে। সরকার প্রধানরা শুভেচ্ছা বাণী দিবেন। পত্রিকা গুলো শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য নিয়ে বিশে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।রেডিও টিভিতে হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। শ্রমিক সংগঠন গুলো র‍্যালী,শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের মধ্য দিয়ে পালন করবে। প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। রাত পোহালেই মে দিবস।

শ্রমিক কারা? কোন কারখানায় মজুরীর বিনিময়ে উৎপাদন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, যিনি কোন প্রশাসনিক কাজে যুক্ত থাকেন না তিনি শ্রমিক। কারখানায় দু'ধরণের শ্রমিক থাকেন। স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক। সংজ্ঞা অনুযায়ী বিভিন্ন সেক্টরে মজুরির বিনিময়ে যারা কাজ করেন তারা শ্রমিকের আওতায় পড়ে না? যেমন বাস-ট্রাক শ্রমিক,নৌযান শ্রমিক, রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক,কৃষি শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, গৃহ শ্রমিক, হোটেল-রেস্ট্রুরেন্ট শ্রমিকসহ অসংখ্য পেশার সাথে যুক্ত ব্যক্তি আছেন, যারা দৈনন্দিন শ্রম বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব শ্রমিক স্থায়ী নয়। এরা অস্থায়ী বা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। সংজ্ঞার বাইরেই শ্রমিকদের সং্খ্য বেশি। এসব শ্রমিক কাঠামোর বাইরের শ্রমিক। আমাদের দেশের শ্রম আইনের সুবিধা থেকে এসব শ্রমিক বঞ্চিত।

আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বড় শক্তি রেমিট্যান্স যোদ্ধারা! এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা অধিকাংশই শ্রমিক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ন্যায্য সম্মানটুকুও তারা পায় না। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের দেখাশুনা করার জন্য আস্ত একটি মন্ত্রণালয় আছে আমাদের কিন্তু তারা শ্রমিকদের জন্য কি কাজ করে আমরা সবাই কমবেশি জানি! মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক খোলস থেকে বের হয় শ্রমিক বান্ধব হওয়া সময়ের দাবী। আর একটি আমাদের বড় সমস্যা শ্রমিক নেতা নামধারী কিছু মানুষের খবরদারি। দখলদারি মনভার এবং টাকা কামানোর ধান্ধা! এই মনোভাব ও ধান্ধাবাজ মুক্ত শ্রমিক নেতৃত্ব সময়ের দাবী।

মে দিবসে শ্রমিকদের নিয়ে সারাদিনেই অনেক ভালো ভালো কথা হবে কিন্তু যাদের নিয়ে কথা, যাদের অধিকার নিয়ে কথা তারা অধিকাংশই জানেনা! শহর কেন্দ্রিক শ্রমিক যুক্ত থাকলেও মফস্বলের শ্রমিকরা এই দিনটি থেকেও বঞ্চিত হয়। সরকারি ছুটির দিন হলেও অনেক শ্রমিক জানে আজ কাজ না করলে ঘরে খাবার জুটবেনা! আমাদের দেশে খুব জরুরি সার্বজনীন একটি শ্রমিক নীতিমালার। যে নীতিমালা স্থায়ী-অস্থায়ী,পরিযায়ীসহ সব শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা করবে। মালিক- শ্রমিকের সেতু বন্ধন তৈরি করবে। আমাদের বিদ্যমান যে আইন আছে তা কাগজে।বাস্তব প্রয়োগ নেই।

শ্রমিক বাঁচলে মালিক লাভবান হবে এই সহজ সত্যটা আমরা ভুলে যাই। শ্রমিজ শোষণ বন্ধ হয়নি, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ হয়নি। নারী শ্রমিক ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। নারী শ্রমিকবান্ধব কাজের পরিবেশ নেই বললেই চলে (গার্মেন্টস সেক্টর ছাড়া)! আর শিশু শ্রমের কথা কি বলব! প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেশি মুনাফার আশায় শিশু শ্রম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবারের মে দিবসের অঙ্গীকার হোক বৈষম্যমুক্ত ভাবে শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মে দিবস। শ্রমিক মালিকের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মান। সকল শ্রমিক ভাই বোনদের মহান মে দিবসের শুভেচ্ছা।

পোস্ট বিবরণ

শ্রেনীজেনারেল রাইটিং
পোস্ট তৈরি@selina 75
তারিখ৩০শেএপ্রিল, ২০২৫ ইং
লোকেশনঢাকা,বাংলাদেশ
আমি সেলিনা আখতার শেলী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি। স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা। এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

সাথে থাকার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

image.png

image.png

image.png

Sort:  
 3 months ago (edited)
 3 months ago 

xp1.png

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 months ago 

cmc.png

 3 months ago 

আমাদের দেশে শ্রমিকদের নিয়ে কথা ঐ একদিনই হয়।তারপর আবার যা তাই। শ্রমিকদের প্রকৃত অধিকার আমরা কখনোই দিতে পারিনি। এখনও তাদের অধিকারের জন্য লড়তে হয়। বেশ সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন আপনি আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।।