অনলাইন ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদ: এক বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রথম পর্ব।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, ঠিক তেমনি কিছু অসাধু লোকজন সেই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে ফেলছে। এমন অনেক ঘটনা শোনা যায় যেখানে মানুষ চুপচাপ থেকে প্রতারিত হয়ে যাচ্ছে, সম্মানের ভয়ে কেউ কিছু বলতেও পারছে না। আজ আমি এমনই একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি, আমার এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর সাথে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ রাতের গল্প।
আমার সেই কলিগ বর্তমানে ঢাকার শনির আখড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন। বয়স আনুমানিক ৩০-৩২ বছর। বিবাহিত জীবন তার মোটামুটি ভালোই চলছিল। তিনটি ছোট ছেলে সন্তানসহ স্ত্রীও তার সঙ্গে ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে বেড়াতে চলে যাওয়ার কারণে সে বাসায় একা ছিল। একাকীত্বের সেই রাতে সে যা ভাবেওনি, তা-ই ঘটে গেল।
রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটার দিকে, হঠাৎ করে তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি অচেনা একাউন্ট থেকে "Hi" মেসেজ আসে। কৌতূহলবশত সেও উত্তর দেয় "Hello" লিখে। এখান থেকেই শুরু হয় কথোপকথন। প্রোফাইল ছবিতে একটি তরুণী মেয়ের আকর্ষণীয় ছবি ছিল, যা দেখে সে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়, এটি নিশ্চয়ই কোনো তরুণী। বিনা দ্বিধায় কিছুটা দুষ্টামি ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে কথোপকথন চালিয়ে যেতে থাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অপর পক্ষ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চায়, আর আমার কলিগও সরল মনে তার নম্বর দিয়ে দেয়। এরপর ঘটে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা, হঠাৎ একটি ভিডিও কল আসে হোয়াটসঅ্যাপে। কৌতূহল থেকে সে কলটি রিসিভ করে, কিন্তু ভিডিওর অপর পাশে যা দেখা গেল, তা তার চিন্তার বাইরে ছিল। মেয়েটি ভিডিও কলে অশ্লীল ভঙ্গিতে শরীর প্রদর্শন শুরু করে। পুরো ভিডিওটি মাত্র ৫৯ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং কল কেটে যায়।
এতটুকুতে যা ঘটেছে, তা হয়তো কেউ পাত্তা নাও দিতে পারতো। কিন্তু আসল বিপদ তখনই শুরু হয়। কল কাটার ঠিক ৫ মিনিট পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও আসে, সেই একই মেয়ের ভিডিও, কিন্তু এবার স্ক্রিন রেকর্ডিং করা অবস্থায়! ভিডিওটি এমনভাবে এডিট করা হয়েছে যেন এটি তার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্কের অংশ। ভিডিওতে কলিগের নাম, প্রোফাইল ছবি, এমনকি কিছু মুহূর্তও এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা সমাজে মুখ দেখানো কঠিন করে তুলতে পারে।
মেয়েটি এরপর তাকে হুমকি দিতে শুরু করে, এই ভিডিও তার ফেসবুক বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের ইনবক্সে পাঠানো হবে, যদি না সে ২০ হাজার টাকা পাঠায়। হঠাৎ করে আমার সহকর্মী এক ভয়ানক মানসিক চাপে পড়ে যায়। নিজের মান-সম্মান, পরিবার, সামাজিক অবস্থান সবকিছু হারানোর আতঙ্কে সে এক মুহূর্তও স্থির থাকতে পারে না।
অবশেষে মান বাঁচানোর জন্য সে তার খালাতো ভাইয়ের কাছ থেকে ৫০০০ টাকা ধার নিয়ে ওই মেয়ের বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। এবং বিনীতভাবে অনুরোধ করে যেন ভিডিওটি আর না শেয়ার করা হয়। মেয়েটি এরপর কিছুক্ষণের জন্য অনলাইন থাকে, এরপর সব মেসেজ বন্ধ করে দেয়।
এখন আমার সহকর্মী দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছে। ৫০০০ টাকা দিয়েও সে নিশ্চিন্ত নয়। সে জানে না, মেয়েটি আবার যোগাযোগ করবে কিনা, বা সত্যি সত্যি ভিডিওটি ছড়িয়ে দেবে কিনা।
এই গল্প এখানেই শেষ নয়। এই ঘটনার পেছনে যে ভয়াবহ জাল ছড়িয়ে আছে, তা আরও গভীর ও চিন্তার বিষয়। আগামী পর্বে আমি শেয়ার করবো, কীভাবে এই প্রতারণার ফাঁদ কাজ করে, এবং একজন সাধারণ মানুষ কীভাবে এমন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে।
👉 পরবর্তী পর্বে থাকছে:
🔹 অনলাইন স্ক্যামারদের কৌশল
🔹 আইনি সহায়তা ও করণীয়
🔹 সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার গুরুত্ব
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
অনলাইন প্রতারণা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। আর এই প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে সচেতন হতে হবে এবং সতর্কতার সাথে চলতে হবে।