ফটোগ্রাফি পোস্ট-বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে একদিনের অভিজ্ঞতা
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি ফটোগ্রাফি পোস্ট নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে আসি কেমন হয়েছে।
আমার কাছে, ফটোগ্রাফি একটি শিল্প। আর যদি সেই ফটোগ্রাফি মনের মাধুরী দিয়ে করা যায়, তাহলে ফটোগ্রাফি বেশ আকর্ষণীয় এবং সুন্দর হয়ে ওঠে। অবশ্যই, সবাই সুন্দর ফটোগ্রাফি তুলতে পারে না। তবে, যদি আমরা ক্যামেরার লেন্স এবং ফোকাস বুঝতে পারি এবং ফটোগ্রাফি করার জন্য একটু সময় বের করতে পারি, তাহলে আমরাও একজন দক্ষ ফটোগ্রাফার হতে পারি। এবং আমরা আমাদের দক্ষতা সুন্দরভাবে প্রদর্শন করতে পারি। তাই আমাদের এই সুন্দর শিল্পটি সুন্দরভাবে শেখা উচিত।

বেশকিছুদিন আগে আমরা গিয়েছিলাম বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে। ছোটবেলা থেকে নামটা অনেকবার শুনেছি, কিন্তু সরাসরি দেখা হয়নি কখনো। তাই জাদুঘরে যাওয়ার সুযোগটা আমার জন্য ছিল একেবারে নতুন এক অভিজ্ঞতা। সেদিন সকাল থেকেই মনটা বেশ উচ্ছ্বসিত ছিল। ভেতরে ঢোকার আগেই বিশাল দালানটা দেখে মনে হচ্ছিলো সময়ের অনেক গল্প যেন এখানে লুকিয়ে আছে। ভেতরে ঢুকে প্রথমেই চোখে পড়লো গম্ভীর পরিবেশ আর চারপাশে সাজানো অসংখ্য প্রদর্শনী। প্রতিটি ফ্লোরে ছিল আলাদা আলাদা জগৎ। ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি, জীবজগৎ, যুদ্ধবীর—সব কিছুর এক মিলনমেলা যেন এই জাদুঘর। ধীরে ধীরে আমরা ঘুরতে শুরু করলাম এক ফ্লোর থেকে আরেক ফ্লোরে।

প্রথমেই যেটা আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল তা হলো গ্রামীণ জীবনের গ্যালারী। সেখানে বাংলাদেশের গ্রাম জীবনের এক বাস্তবচিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। দেখলাম কিভাবে একজন কৃষক মাঠে চাষ করছে, কিভাবে একজন মহিলা হাতে তাঁত বুনছে, কিভাবে রাখাল গরু চরাচ্ছে। চারপাশে এমনভাবে সাজানো ছিল যে মনে হচ্ছিল আমি যেন সত্যি কোনো গ্রামের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি। আরও এগিয়ে গেলে চোখে পড়লো শাকসবজির এক চমৎকার প্রদর্শনী। সেখানে সাজানো ছিল লালশাক, কলমি শাক, পালং শাক, গাছে ঝুলানো বেগুন, করল্লা, চিচিংগা—সবকিছুই এমনভাবে তৈরি করা যে এক নজর দেখলে মনে হবে একেবারে আসল। প্রতিটি পাতার রঙ, প্রতিটি দাগ এমন বাস্তব মনে হচ্ছিল যে না ছুঁয়ে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল এগুলো কৃত্রিম। আলোর ছায়ার সুন্দর মেলবন্ধনে পুরো জায়গাটা যেন এক জীবন্ত গ্রামের উঠোনে পরিণত হয়েছিল।

আমি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলাম সেই প্রদর্শনী। মনে হচ্ছিল গ্রামের একটা সকাল যেন আমার চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। শাকসবজির পাশে ছোট্ট একটা কোণে রাখা ছিল মাটির কলস, ডালি, হাঁড়ি পাতিল—সব মিলিয়ে যেন এক জীবন্ত গ্রামের রান্নাঘর। বাতাসে হয়তো কোনো গন্ধ ছিল না, কিন্তু চোখে-মনে ভেসে উঠেছিল গ্রামের রান্নাঘরের সেই পরিচিত দৃশ্য। আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন ক্যামেরা হাতে একজন ফটোগ্রাফার। প্রতিটি কোণে এমন কিছু ছিল যা ছবি তোলার মতো। আলো পড়ছিল কিছু জায়গায় সরাসরি, আবার কিছু জায়গায় একটু ছায়া। সেই আলো-ছায়ার খেলায় প্রদর্শনীগুলো আরও জীবন্ত হয়ে উঠছিল। একটা বেগুনে আলো পড়ছিল এমনভাবে যে মনে হচ্ছিল গাছ থেকে সদ্য পাড়া হয়েছে। করল্লার গায়ে ঝিকিমিকি আলোটা যেন তার তাজা ভাবটাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছিল।

আমি মোবাইল বের করে কয়েকটা ছবি তুলেছিলাম, যদিও জাদুঘরে ছবি তোলা অনুমোদিত জায়গা না হলে সেটা করা যায় না। তবুও চোখে দেখা সেই দৃশ্যগুলো এমনভাবে মনে গেঁথে গেছে যে মনে হয় আজও চোখ বন্ধ করলে সেই লালশাকের পাতা আর কলমি শাকের সরু লতাগুলো দেখতে পাই। সেই গ্যালারীতে হাঁটতে হাঁটতে আমি ভাবছিলাম আমাদের দেশের গ্রামীণ জীবন কত বৈচিত্র্যময় আর সুন্দর। একটা শাকসবজির প্রদর্শনীও কেমন করে আমাদের মাটির গন্ধ মনে করিয়ে দেয়। শহরের কংক্রিটের দেয়ালের মাঝে বসে থাকা মানুষদের জন্য এই গ্যালারী যেন এক টুকরো সবুজের জানালা। যেখানে গিয়ে মানুষ একটু হলেও নিজের শেকড়ের কাছাকাছি ফিরে যেতে পারে।

এরপর আমরা গেলাম অন্য ফ্লোরে। সেখানে ছিল ইতিহাসের নানা নিদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, প্রাচীন মুদ্রা, রাজাদের ব্যবহার করা অস্ত্র, গয়না, পোশাক। প্রতিটি জিনিসের মধ্যেই ছিল একেকটা গল্প। কিন্তু গ্রামীণ জীবনের সেই প্রদর্শনী আমার মনে যেভাবে ছাপ ফেলেছিল, অন্য কিছু তেমন করে পারেনি। কারণ সেখানে ছিল জীবনের স্পন্দন। সেখানে ছিল প্রকৃতির ছোঁয়া, মাটির ঘ্রাণ আর মানুষের শ্রমের সৌন্দর্য। জাদুঘরের প্রতিটি কোণে আলাদা আলো ছিল। সেই আলো কাচের ভেতর থেকে ছড়িয়ে পড়ছিল প্রদর্শনীগুলোর ওপর। আমি প্রতিটি কোণ থেকেই কিছু না কিছু দেখতে থেমে যাচ্ছিলাম। কারো হাতে তৈরি বাঁশের পাটি, কোথাও মাটির তৈরি খেলনা, কোথাও পুরোনো দিনের কৃষি যন্ত্র—সবকিছুই যেন একসময়কার জীবনের স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

জাদুঘরে ঘুরতে ঘুরতে সময় কখন যে কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। প্রতিটি ফ্লোরেই কিছু না কিছু নতুন শেখার ছিল। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য এই জায়গাটা অনেক শিক্ষণীয়। তারা দেখতে পারে কেমন ছিল আমাদের দেশের অতীত, কেমনভাবে গড়ে উঠেছে আমাদের সংস্কৃতি। জাদুঘর থেকে বের হওয়ার সময় মনে হচ্ছিল আমি যেন অনেকটা সময় পেছনে ফিরে গিয়েছিলাম। বাইরে এসে যখন আধুনিক রাস্তা আর গাড়ির শব্দ শুনলাম, তখন মনে হলো ঠিক এখনই আমি মাটির ঘ্রাণমাখা একটা গ্রামের উঠোন থেকে শহরে ফিরে এসেছি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর শুধু ইতিহাস আর শিল্পের ভাণ্ডার নয়, এটা একপ্রকার অনুভূতির জায়গা। যেখানে গিয়ে বোঝা যায় কতটা সমৃদ্ধ আমাদের ঐতিহ্য, কতটা বৈচিত্র্যময় আমাদের জীবনধারা। আর সেই গ্রামীণ গ্যালারীর শাকসবজির প্রদর্শনী যেন এই দেশের মাটির প্রাণবন্ত প্রতীক।

সেদিনের অভিজ্ঞতা আমার মনে আজও গেঁথে আছে। যখনই চোখ বন্ধ করি, দেখি সেই সাজানো লালশাকের পাতা, করল্লার গায়ে ঝলমলে আলো আর মাটির হাঁড়ির পাশে রাখা কলসি। মনে হয়, আমি আবার সেই জাদুঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে আছি, সময় যেন থমকে গেছে, শুধু মাটির গন্ধটাই ভেসে বেড়াচ্ছে চারপাশে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সেই ভ্রমণ আমার জীবনের এক স্মরণীয় দিন হয়ে আছে। কারণ সেখানে আমি শুধু ইতিহাস দেখিনি, দেখেছি আমাদের দেশের প্রকৃতি, মানুষের পরিশ্রম আর জীবনের সরল সৌন্দর্য। সেই দিনটার স্মৃতি যতবার মনে পড়ে, ততবার মনে হয় আমি যেন আবার ফিরে যেতে চাই সেই শান্ত, শিল্পে ভরা, মাটির ঘ্রাণে মোড়া জগতে।

পরিশেষে আপনাদের সকলের মঙ্গল কামনা করে শেষ করছি। এতক্ষন আমার এই ব্লগটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য সকল কে অনেক ধন্যবাদ।
পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা আমার ইউজার নাম @mahfuzanila আমমি পছন্দ করি ঘোরাঘুরি ও ভ্রমন ছবি আঁকা, বিভি ন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে দারুণ পছন্দ করি। আর বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে,মন খারাপ থাকলে গান শুনতে ও গান গাইতে ঘুরতে যেতে আর সবচেয়ে বেশী ঘুমাতে।