# নদীকে নিয়ে আমার ভাবনা

in আমার বাংলা ব্লগ4 years ago

কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো আছেন।আমার বাংলা ব্লগে আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব নদী ও আমাদের জীবন।
বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। বাংলাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শতশত নদ-নদী। প্রকৃতিগত ভাবে আমরা সবাই সুযোগ পেলেই নদীর কাছাকাছি ঘুরে আসতে চাই। আমার অস্থির মনকে নদীর সেই কমল বাতাস যেন শান্ত করে।এই নদী আমাদের দু হাত ভরে দেয় আবার সুযোগ পেলে সর্বশ্রান্ত করে দেয়।
আজ এই বিষয়গুলোই আমার আলোচনার মুল বিষয়।

IMG-20200719-WA0000.jpg

নদী যখন অর্থনীতির বাহকঃ

বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ হওয়ায় প্রাচীনকাল থেকেই নদীকে ঘিরে আমাদের ব্যবসা - বাণিজ্য চলে আসছে। বিশেষ করে সেই প্রাচীন কাল,পাল, সেন,গুপ্ত,মৌয,মুগোল,ইংরেজি আমল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব নগর-বন্দর গড়ে উঠেছে নদীকে কেদ্র করে। ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর,রাজশাহী, খুলনা, চট্রগ্রাম সব বড় বড় শহর গুলোর গোড়াপত্তন হয়েছে নদীকে কেন্দ্র করে। বর্তমানেও সরকারের বড় বড় প্রকল্প গুলো নদী,সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে যেমন, পদ্মা প্রজেক্ট, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী অর্থনৈতিক অঞ্চল। এছাড়াও মাছের অন্যতম উৎস কিন্তু নদী আমাদের ঐতিহ্য বহন করে রুপালী ইলিশ যা পদ্মায় পাওয়া যায়। যার অর্থনীতিতে অবদান আমরা সবাই জানি। সব মিলে নদীকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনীতি আরো বেগবান হবে এই প্রত্যাশা করি।

নদী যখন আমাদের জন্য আশির্বাদ

উপরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করলাম এগুলো ছাড়া নদী আমাদের দুইহাত ভরে দিয়ে যায়।নদীকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনযাপন অনেকটায় নির্ভরশীল। নদীদে মৎস্য আহরণ করে অনেক অসহায় পরিবার জীবন ধারণ করে। নদীর অববাহিকায় ফসল চাষের জন্য উৎকৃষ্ট মানের মাটি পাওয়া যায়।যাকে আমরা পলি মাটি বলি। এছাড়া,ধান,বাতাম,পাট,সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল হয়ে থাকে এসব অঞ্চলে। ব্যবসা বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে।

নদী দুর্ভোগের অপর নাম

এতোক্ষণ আমরা নদীর ভালোই গুনগান করলাম।এখন আসি নদী কখন আমাদের জন্য শনি হয়ে আসে। প্রতিবছর জুলাই-অগাস্ট এর সময় আমাদের দেশ বন্যা হয়।আর এই বন্যার কাছে উপরে যা আলোচনা করলাম সব বন্যায় ভেসে যাওয়ার মতো। নদী অঞ্চলের মানুষ সারাবছর যা অর্জন করে এক সপ্তাহের বন্যায় সব ভেসে নিয়ে যায়। এতে দায় কার? কেন এমন হয়? এই বিষয়গুলোর সমাধান আমরা সবাই দিতে পারি।কিন্তু আসলে কি সমাধান হয়।ব্যাক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ভাবে এই সময়টা থাকে হট টপিক। বন্যার মানুষের কি ধরনের দূর্ভোগ পোহাতে হয় ঐ সময় কমবেশি আমরা সবাই জানি। বসতবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসতে হয় এক রাতে জীবন বাঁচানোর তাগিদে। পিছন ফিরে থাকানোর সময় হয়না পাছে জীবনটা না যায় জন্য। এইযে এইসময় তাদের যে দুর্ভোগের শিকার কতে হয় তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে। সুস্থ জীবন ধারণের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছুই পাওয়া যায়না অপেক্ষায় থাকতে হয় সরকারি -বেসরকারী সাহায্যের জন্য। এরপর বন্যা শেষে দুর্ভোগ যেন শতগুণে বেড়ে যায়।রাস্তাঘাট চলাফেরার অযোগ্য হয়ে যায় আর বসতবাড়ি বসবাসের। তারপরও জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য চলে যুদ্ধ।

নদী ভাঙন

নদী ভাঙন আর এক বিভীষিকার নাম। প্রতিবছর হাজার হাজার পরিবার নদী ভাঙন এর শিকার হচ্ছে। সাথে সাথে লক্ষলক্ষ হেক্টর জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সাথে অর্থনীতির হিসাবে যা লক্ষহাজার কোটি টাকার বেশি।এসময় মানুষগুলো যে ধরনের মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যায় কল্পনাতীত। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি -বেসরকারী স্থাপনা হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে। সবকিছু হারিয়ে আবার নতুন বাসস্থান খোজা,বসবাসের উপযোগী করে তোলা তাদের জন্য আরো দূর্ভোগের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড

বন্যার সময় সব থেকে বেশি যে প্রতিষ্ঠানের নাম শোনা যায় সেটি হলো পানি উন্নয়ন বোর্ড। সারাবছর নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে এনারা এসময় এসে একটা কাজ করবেন বস্তা ফেলা অথচ সরকারের বরাদ্দের কমতি নাই। একদিকে সরকার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে অন্যদিকে বন্যায় লক্ষকোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে দুইদিক থেকের সরকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।অথচ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোর টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। শুধুমাত্র মাটির বাঁধ নির্মাণ করেই শান্ত হয়ে থাকার সুযোগ নাই। বন্যার আগে থেকে তদারকি বা সংস্কার কাজ না করে বন্যা চলে আসলে ব্যস্ত হয়ে দূর্ভোগ ছাড়া কোন লাভ দেখিনা। আমার মনে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আরো সোচ্চার হয়ে টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখা উচিত।

নদী রক্ষা ও উন্নয়ন

নদী আমাদের মায়ের মতো। সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে পারলে দুহাত ভরে দিবে। নদীকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলে নদীর পানি প্রবাহ বাড়াতে হবে এইজন্য ড্রেজিং এর বিকল্প নাই। দুপাড়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ সহ গাছ রোপণ করতে হবে। সারাবছর যেন নাব্যতার সংকট না থাকে সে বিষয়ে বিশেষ নজর দিলে নদী রক্ষা করা যাবে। নদীর পানি দূষণমুক্ত ও দখলদারত্বের হাত থেকে রক্ষা করা অপরিহার্য। এজন্য নদীর সীমানা চিহ্নিত করে দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে বা বিনোদন এর ব্যবস্থা করতে হবে।অবশ্য ইতিমধ্যে সরকার তিস্তাকে কেন্দ্র করে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নদীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে বড় পরিকল্পনা হাতে নিলে অর্থনীতির চাকা আরো বেগবান হবে।

ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের করনীয়।

আমাদের একটা মুদ্রাদোষই বলব আমি।আমরা সব সময় নিজেদের অধিকার নিয়ে অনেক সোচ্চার। কিন্তু দেশের প্রতি আমাদের যে কর্তব্য আছে তা অধিকাংশ মানুষ ঘুনাক্ষরে স্বীকার করেনা। এই নদীর পানিকে দূষনের হাত থেকে চাইলে আমাদের ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব। যেমন নৌকায় বা লঞ্চে চড়ে চিপসের প্যাকেট, কোমলপানীয়র প্লাস্টিকের বোতল অহেতুক পানিতে ফেলে দেই যা জলজ পরিবেশের জন্য হুমকির। আমরা নদী দখল না করে, নদীর গতিকে রোধ করে বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ না চালিয়ে নদীকে তার স্বাভাবিক পথে চলতে দিতে পারি। নদীর অধিকার নিয়ে সব সময় সোচ্চার থাকতে পারি।

পরিশেষে বলব নদী বাঁচলে, বাঁচবে পরিবেশ,জীববৈচিত্র্য, ও অর্থনীতি।

পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Sort:  

অনেক সুন্দর লিখেছেন আপু। তথ্যবহুল পোস্ট,নদী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাকে

 4 years ago 

ধন্যবাদ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য

 4 years ago 

নদী সম্পর্কে অনেক ভালো লিখেছেন। নদী আমাদের অনেক উপকার করে।বাংলাদেশের অনেক মানুষ নদীর উপর নির্ভরশীল।

 4 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য

 4 years ago 

নদীকে নিয়ে অনেক সুন্দর লিখেছেন। লেখায় ধাপ আকারে বর্ণনা করায় গোছালো উপস্থাপনা হয়েছে।এত সুন্দর পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ আপু।

 4 years ago 

ধন্যবাদ ভাই পোস্টটি পড়ার জন্য

 4 years ago 

বাচাও নদী বাঁচাও দেশ সুখ-সমৃদ্ধি বাংলাদেশ ভাল লিখেছেন♥

 4 years ago 

জ্বী আপু নদীর কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু পেতে পারি কিন্তু নদীকে বাঁচাতে আমার কোনো ভুমিকা রাখি না। যার দরুন বর্তমান পরিস্থিতি।ধন্যবাদ আপু মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য