আমড়া মাখা রেসিপি ।। বাড়িতে তৈরি মসলা দিয়ে ।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)
আজ শুক্রবার

৫ই আগস্ট ২০২২ ইং || ২১শে শ্রাবণ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ || ৬ই মহররম ১৪৪৪ হিজরি ।

আসসালামু আলাইকুম

প্রাণ প্রিয় বন্ধুগণ, আশাকরি মহান আল্লাহতালার অশেষ রহমতে সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন । আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি ।

এ বছর যেন বাংলা মাস ১ মাস পিছিয়ে পড়েছে । মাঠের ফসল সংগ্রহ করতে হচ্ছে সময়ের পরে । গাছের ফল যেন সময়ে পেকে কুল পাচ্ছে না । এবারের আমের মৌসুম পুরোপুরি ছিল আষাঢ় মাস । "আম পাকে বৈশাখে" এই কবিতাংশটি এখন শুধু বইয়ের পাতায় । বাস্তবে এর সামান্য প্রতিফলন নেই! তবে তা নিয়ে আর ভাবনার কিছু নেই এখন পড়েছি আমি আমড়ার পিছে এই যে শ্রাবণ মাসের এতগুলা দিন চলে গেল । এর পাকার কোন নাম গন্ধ নেই । পাকাপাকি কি এর আটিই এখনো শক্ত হয়নি । চেয়ে থাকতে থাকতে আমি অতিষ্ট । তবে আজকে আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেল আর পেড়ে নিয়ে আসলাম কয়েকটি আমড়া । তবে আমার আবার একটা অসুবিধা । যে কোন ফল বা অন্য খাবার খাওয়ার জন্য আমার টুকুটাকি আয়োজন ভালই করতে ইচ্ছে করে । যেখানে বাড়ির অন্যরা গাছ থেকে নিয়ে টিউবওয়েলে পানিতে ধুয়ে খচ করে কামড়িয়ে খেয়ে ফেলে খুব বেশি হলে একটু লবণ নেয় । আমার সেখানে চাই একেবারে আমড়াওয়ালাদের মত মসলা মাখানো স্বাদ সে একটাই খাই না কেন । আজ ও তার ব্যতিক্রম হয়নি । টুকিটাকি মসলা তৈরি করে শুরু করে দিলাম আমড়া মাখানো এবং আজকে তার পরিপুর্ণ বিবরণ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি । তাহলে বন্ধুরা চলুন দেখে আসা যাক আমার আজকের করা "আমড়া মাখা রেসিপি" টি ।

IMG_২০২২০৮০৫_২২৪১১৯.jpg

উপকরনঃ
উপকরণের নাম পরিমাণ
আমড়া চারটি
শুকনা মরিচ গুড়া আধা চা চামচ
কাসুন্দি ১টেবিল চামচ
লবণ পরিমাণ মত
ব্লাক সল্ট আধা চা চামচ
মিক্সড মশল্লা আধা চা চামচ
সরিষার তেল পরিমাণ মত

IMG_২০২২০৮০৫_২২১৭৪১.jpg

ধাপঃ০১

শুকনা মরিচের সরাসরি গুড়া করে মাখানোর চেয়ে আমি খেয়াল করে দেখেছি মরিচ ভেজে গুড়া করে নিলে তার স্বাদ কয়েকগুণ বেশী পাওয়া যায় । আমার কাছে এমন ভাজা মরিচের গুড়া ছিল না তাই আজকে কিছু মরিচ প্রথমে মাটির খোলায় ভেজে নিলাম । মাটির খোলাতে মরিচ ভাজা ভাল হয় কারণ এতে সহজে পুড়ে যায় না এবং প্রতিটা মরিচ সমান ভাবে ভাজা হয়ে যায় ।

IMG_২০২২০৮০৫_১৯২০১০.jpg

ধাপঃ০২

ভাজার পরে আমি শিলপাটায় বেটে নিলাম । তবে এর সাথে অবশ্যই একটু লবণ দিয়ে নিয়েছি । এতে করে মরিচের আসল স্বাদ পাওয়া যায় । সহজে গুড়া হয়ে যায় এবং এর ঝাঝ কম নাকে এসে আক্রমণ করে ।

IMG_২০২২০৮০৫_১৯২৬৫৪.jpg

ধাপঃ০৩

যতটা সম্ভবটা সম্ভব মোলায়েম ভাবে গুড়া করে নেওয়ার চেষ্টা করলাম । বাকিটা দাঁতের ভরসায় ছেড়ে দিয়েছে । খাওয়ার সময় নিশ্চিত পেশায় হয়ে যাবে ।

IMG_২০২২০৮০৫_২৩০৯০৫.jpg

ধাপঃ০৪

এবার আমি চারটি আমড়া পিলার দিয়ে খোসা ছড়িয়ে নিলাম । আমি সাধারণত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে নিজের হেফাজতে রেখে দিই চাকু, পিলার, ব্লেন্ডার এগুলো একা হাতে ব্যবহার করি বলে কবে কিনেছি সেটাও আর মনে পড়ে না । তবে পিলারটা কিনে ছিলাম আমের সীজনে আচার করার জন্য।

IMG_২০২২০৮০৫_২২২৪২১.jpg

ধাপঃ০৫

এখন আমি আমড়া গুলো পানি দিয়ে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে দিয়েছিলাম । আমাড়ার খোসা ছাড়ানোর পরে উপরে আঠার স্তর জমে যায় অনেক খানি ।তাই ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেললে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।

ধাপঃ০৬

এবার ছোট ছুরি দিয়ে আমড়া গুলো লম্বা ফালি দিয়ে কেটে নিলাম ।
IMG_২০২২০৮০৫_২২৩১৫৭.jpg

ধাপঃ০৭

প্রতিটা মসলা আমড়ার কুচি গুলোর উপরে পরিমাণ মত দিয়ে দিলাম । আমার ঝাল ভাঙ্গা এবং মিক্সড মশল্লা এই দুইটার মাজগেই অল্প পরিমাণে লবণ আছে । তাই একটু স্বাদ নেওয়ার পরে বিট লবণ এবং সাধারণ লবন দিলাম। সাথে কাসুন্দি ও দিয়ে দিলাম পরিমাণ মত ।

IMG_২০২২০৮০৫_২২৩৩১৩.jpg

ধাপঃ০৮

দুইটা বাটি মুখোমুখি রেখে ঝাকি দিয়ে আমড়া এবং মসলা ভাল ভাবে ঝাকি দিয়ে মিশিয়ে নিলাম । খুব সুন্দর ভাবে মিশে গেছে । যদিও আটি গুলোতে মসলার পরিমাণ কম । কিন্তু সমস্যা নেই কারণ আমড়ার মাঝের দিকে টক নেই বললেই চলে।

ধাপঃ০৯

এবার আমি একটা পিরিচে নিয়ে তুথ পিক দিয়ে পরিবেশন করলাম । ৩জনের জন্য তিনটা তুথ পিক । আমড়া খেতে সময় লাগলো দুই মিনিট কারণ স্বাদ হয়েছিল পারফেক্ট। তবে কাল যে বড় একটা পাত্রে গোটা বিশেক কেটে নেব এটা নিশ্চিত ।

IMG_২০২২০৮০৫_২২৪১২৯.jpg

আজকে আমার রেসিপি পোস্ট এখানেই সমাপ্ত করছি । আশা করি এটা আপনাদের একটু হলেও উপকারে আসবে যারা একটু স্বাদ করে আমড়া মেখে খেতে পছন্দ করেন । সবাই ভাল থাকবেন এই কামনা করে আজ বিদায় নিচ্ছি ।

আল্লাহ্‌ হাফেজ
ধন্যবাদান্তে @maruffhh
ফটোগ্রাফি ডিভাইসঃ mobile
মোবাইল নেমঃ redmi 6a
ক্যামেরাঃ 8mp

আমার পরিচয়

IMG_20170303_142442.jpg

আমার নাম মারুফ হাসান । আমি বাংলাদেশী আমার প্রাণের আবেশ বাংলাদেশকে প্রাণের চেয়েও ভালবাসি । ভালবাসি বাংলা ভাষাকে । আমি পড়াশুনা করেছি তড়িৎ প্রোকৌশল বিদ্যায় । তবে বাংলা সাহিত্য পড়তে ভীষণ ভাল লাগে । আমার ভাললাগার মাঝে ভ্রমণ হলো অন্যতম । সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি ঘর ছেড়ে । দু চোখে খুজেফিরি প্রকৃতির সৌন্দর্য । আমি আমার সময় গুলো কাজে লাগায় বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মাঝে । নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ভাল লাগে খুব । বিশ্ব জোড়া পাঠ শালা মোর সবার আমি ছাত্র ।

ধন্যবাদ সবাইকে

zr7XQBzuvvkjgjjPxunUtP5k84gxgWc4mR8PqdBj5rx8AtXSSugGPwSy7JKyM3rgX4k3arRVPC2wT66DqiAYg2UuYrHpE94NCJsYEnjKP7Erbg.png

Sort:  
 3 years ago 

আমরা মাখা টাইটেলটি পড়তেই জিভে দল চলে আসলো 😋 এ ধরনের খাবার আমার খুবই ফেভারিট😋 একটু ঝাল ঝাল করে মাখানো হলে খেতে খুবই ভালোবাসি 😋আপনার প্রস্তুত করা খাবারটিও খুব মজা হয়েছিল দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

 3 years ago 

কালকে আমড়া মাখায় নাকি ঝাল অনেক বেশি হয়েছিল। তবে আমার কাছে ঠিক মনে একটু ঝাল না হলে স্বাদ পাওয়া যায় নাকি।

 3 years ago 

জি ভাইয়া ঠিক বলেছেন শুকনো মরিচের গুঁড়ার চেয়ে মরিচ পুড়িয়ে নিলে অনেক মজা হয় ভর্তাতে।আপনি বাড়িতে তৈরি করা মসলা দিয়ে অনেক সুন্দর করে আমড়া মাখিয়েছেন।আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

মতামত প্রদানের জন্য ধন্যবাদ আপু । আর এই মসলা একদিন তৈরি করে নিলে অনেকদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যায় । এটাই সুবিধা ।

 3 years ago 

এই ধরনের টক জাতীয় খাবার মাঝে মাঝে খেতে খুবই মজা লাগে। আপনি খুব সুন্দর করে আমরা মাথা রেসিপি করেছেন। যেটা খুবই সহজ পদ্ধতি অনেক ভালো লাগলো।

 3 years ago 

পদ্ধতি অবশ্যই সহজ৷। শুধু শিলপাটায় মরিচ গুড়া করতে গিয়ে আমার অবস্থা কেরোসিন হয়ে গেছিলো।

 3 years ago 

আর ধৈর্য ধরতে পারলেন না তাই পেড়েই ফেললেন। যাই হোক এমন হামলা মাখা রেসিপি দেখে আমার জিভে জল চলে আসলো। খেতে বেশি ইচ্ছা করছে আমার এখন। আমরা মাখা রেসিপিটি আপনি খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন ।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপু। টক জিনিসটা আসলেই পীড়াদায়ক যদি না সময় মত না খেতে পাওয়া যায়। চোখের দেখা আর জিভে জল একেবারে নিরবচ্ছিন্ন কানেকশন।

 3 years ago 

আমড়া অনেক লোভনীয় একটি ফল এবং এটি আপনি যেভাবে রেসিপি বানিয়েছেন এভাবে দেখে জিবে পানি চলে আসছে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমড়া মাখা প্রস্তুত করার জন্য ভালো থাকবেন।

 3 years ago 

অনেকদিন ধরেই অপেক্ষায় ছিলাম। তবে কাল এ বছরের মত প্রথম বার ট্রাই করেই ফেললাম। এর স্বাদ আমাকে হতাশ করেনি।

 3 years ago 

আসলে অনেক লোভনীয় ছিল, আর আপনাকে হতাশ করেনি জেনে আনন্দিত হলাম সুস্বাদু এবং মজা করে খেয়েছেন ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

যাক তবে ধৈর্যের বাধ ভেঙে এ বছরের আমড়ার স্বাদ নিলেন। আসলে এভাবে মসলা মেখে আমড়া খেলে অনেক সুস্বাদু হয়। আমার তো খুবই পছন্দের। দেখতে ও বেশ লোভনীয় লাগছে।

 3 years ago 

এদিকে গাছ পানে চেয়েই আমার লোভ লেগে যাচ্ছিলো। থোকায় থোকায় আমড়া যে কি পরিমাণ ধরে আছে। মনে মনে শুধু ভাবছি আর কিভাবে খাওয়া যায়।

 3 years ago 

আমরা মাখা খেতে সত্যি অনেক ভালো লাগে। আমরা গতকাল বাসায় আমরা মাখিয়ে খেয়েছি। তবে আপনার আমরা মাখা দেখে লোভ লেগে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

আমি কালকে খেয়েছি সম্ভবত আজকেও খাবো। গাছে আমড়া যতদিন আছে প্রতিদিন খাওয়া চলবে। মিস দিয়ে আফসুস করতে আমি রাজি নই।

 3 years ago 

আপনি ভাই বেশ আমরা মাখাতে পারেন। বাড়িতে তৈরি মশলা দিয়ে খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে আজকে আমরা মাখিয়ে দেখানোর জন্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া। পারফেক্ট স্বাদের মশল্লা মানেই পারফেক্ট স্বাদের রেসিপি।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে সুন্দর একটি আমড়া মাখার রেসিপি দেওয়ার জন্য। আমড়া মাখা খেতে অনেক ভালো লাগে এটা একটি লোভনীয় খাবার, কাসুন্দি দিয়ে যেকোন টক ফল মাখালে খেতে অনেক ভালো লাগে।মিক্সড মসলাটা আমার কাছে ভালো লেগেছে এভাবে বানিয়ে রাখলে যেকোন টক ফল ঝটপট করে খাওয়া যাবে।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

আপনাকে ও ধন্যবাদ আপু। বিশেষ করে একটা নির্ভুল বানানে কমেন্ট করার জন্য।
মিক্সড মসলা তৈরি করে রেখেদিলাম ইচ্ছে হলেও খেতে পারবো যখন তখন।

 3 years ago 

ওয়াও অসাধারণ আমড়া মাখার রেসিপি দেখে আমার জিভে জল এসে গেল। আমাদের বাড়িতে আমড়া অনেক আছে এটি আমি প্রায় খেয়ে থাকি। আপনার রেসিপি দেখে আমি এভাবে বানানোর চেষ্টা করব। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

আমার ও প্রায় একই অবস্থা । আমড়ার সীজনে প্রায় প্রতিদিন ই আমড়া মাখা খাওয়া হয় । এবং আজ ও পেড়ে নিয়ে আসলাম ।