ছোট গল্প : "মেঘের আড়ালে সূর্য"

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু /আদাব

🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001


আজ ১৮ মে রোজ রবিবার ২০২৫ ইং:।

বাংলায় ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।

হ্যালো বন্ধুরা.......

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি।প্রতি দিনের মতো আজ আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজ আমি একটি ছোট গল্প পোস্ট শেয়ার করব। আমি সপ্তাহে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন পোস্ট শেয়ার করার চেষ্টা করি। তার চেয়ে বড় কথা লেখালেখি করতে আমি অনেক বেশি পছন্দ করি। আশা করছি আমার লেখা ছোট গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

ai-generated-8292299_1280.jpg

Source

নদীর ধারে ছোট্ট গ্রাম চাঁদপুর। চারপাশে ধানক্ষেত, বাঁশবন আর মাঝে মাঝে দু–একটা খেজুর গাছ। এখানেই থাকেন রওশন বিবি, বয়স পঁচাশি ছুঁইছুঁই। মাথায় ধুসর চুল, শরীর কুঁজো, কিন্তু চোখদুটো এখনো টকটকে উজ্জ্বল যেমন ছিল পঁচাত্তর বছর আগে, যখন তিনি ষোড়শী বধূ হয়ে এই গ্রামে পা রাখেন।তার জীবনটা যেন গ্রামটারই প্রতিচ্ছবি শান্ত, সহনশীল, আর অজান্তেই অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া হাজারো অন্যায়ের সঙ্গে। ছোটবেলায় স্কুলের বইয়ের পাতার বদলে তাকে তুলে দেওয়া হয়েছিল হাঁড়ি-পাতিল আর বউ সাজার সাজ।রওশন বিবির নাতনি মিতা এই গ্রামেরই হাই স্কুলে পড়ে। দশম শ্রেণির ছাত্রী, চোখে বড় স্বপ্ন। তার স্বপ্ন শুধু পড়াশোনা নয়, গ্রামের মেয়েদের জন্য কিছু করার, তাদের জাগিয়ে তোলার। সে চায় কেউ যেন আর দশ বছর বয়সে বিয়ে না করে, কেউ যেন স্কুল ছাড়তে না বাধ্য হয়, কেউ যেন পণ দিয়ে নিজেকে বিকিয়ে না দেয়।মিতা বুঝে গেছে এই সমাজে বদল আনতে গেলে একা লড়তে হবে। আর প্রথম লড়াইটাই শুরু হলো ওরই বান্ধবী হাসনাকে নিয়ে। হাসনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে, এক ট্রাকচালকের সঙ্গে।মিতা গিয়েছিল হাসনার বাড়ি। বলেছিল তুই কী চাস? সত্যি কি বিয়ে করতে চাস?হাসনা কাঁদছিল। তার গলা দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না। পাশে বসে থাকা মা শুধু বলেছিল, “বউ করে পাঠাবো না তো কন্যা হয়ে মরবে? সমাজ মানবে না।”

মিতা ফিরে এসেছিল চুপচাপ। কিন্তু সে থামেনি। সে স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছিল, পরে গিয়েছিল ইউনিয়ন অফিসে। সে নিজে এক চিঠি লিখে পাঠিয়েছিল উপজেলা নির্বাহীর অফিসে। গ্রামের অনেকে প্রথমে বলেছিল, মেয়ে হয়ে এত বড় গলা সমাজে থাকতে দিবে না।একদিন সেই সমাজেরই কিছু মানুষ এসে রওশন বিবির উঠোনে দাঁড়ায়। একজন বলে আপনার নাতনি নাকি সমাজ নষ্ট করছে। মেয়েকে বিয়ে দিতে দেব না বলে মামলা ঠুকছে।রওশন বিবি চুপচাপ শুনছিলেন। তারপর তিনি হাঁটুতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, আমার জীবন গেল চুপ করে থেকে। আমি চাইলেও পড়তে পারিনি, স্বামী মরার পর একটা দোকান খুলতে চাইছিলাম, গ্রাম বললো বিধবা রমণী দোকান চালাবে। মাথা নিচু করে থেকেছি। আজ এই বয়সে যদি দেখি আমার নাতনি মুখ তুলে দাঁড়াতে শিখেছে, তবে আমি তার পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ করবো।এই প্রথম সেই সমাজ চুপ হয়ে গিয়েছিল।হাসনার বিয়ে থেমে গেল। উপজেলা প্রশাসন মিতার চিঠির জবাবে লোক পাঠালো, কড়া নির্দেশ দিয়ে গেল ১৮ বছরের আগে কোনো মেয়ের বিয়ে নয়। হাসনা আবার স্কুলে ফিরে এলো। গ্রামের অন্য মেয়েরাও সাহস পেল।মিতার নামের পাশে এখন কেউ আর ‘বেহায়া’ শব্দটি জোড়ায় না। সবাই এখন বলে ওই যে, রওশন বিবির নাতনি মেয়ে না আগুনরওশন বিবি এখন প্রতিদিন বিকেলে উঠোনে বসে সূর্য ডোবার সময় মিতাকে চেয়ে থাকেন। মৃদু হেসে বলেন, “আমার জীবনটা তো মেঘে ঢাকা ছিল রে কিন্তু তোরা সূর্য হয়ে উঠলি। সমাজ বদলায়, রে মা শুধু একটু সাহস লাগে।”

গল্পের বার্তা:

এই গল্প শুধু মিতার নয়, হাজারো সাহসী মেয়ের কাহিনি, যারা সমাজের গৎবাঁধা নিয়ম ভেঙে নিজের ও অন্যের ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াই লড়ে। একজন রওশন বিবির মত দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ থাকলেই নতুন সূর্য ওঠে।

পোস্টের বিষয়ছোট গল্প
পোস্টকারীতানহা তানজিল তরসা
ডিভাইসরেডমি নোট ১১
লোকেশনপাবনা
আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আর লেখার অমিল ও ভূল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেবেন।


১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আমি তানহা তানজিল তরসা। আমার স্টিম আইডির নাম @tanha001। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমি বিবাহিতা। আমার একটা ছেলে সন্তান আছে। আমি ফটোগ্রাফি, গান গাইতে,রান্না করতে ও বাইকে ঘুরতে অনেক পছন্দ করি। আমার জন্ম স্থান কালিগঞ্জ থানা ঝিনাইদহ জেলায়। আমি পেশায় এক গৃহিনী। পাশাপাশি আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি আমার হাসবেন্ড এর চাকরির সূত্রে পাবনা চাটমোহর এ বসবাস করছি।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি দেখার জন্য ও সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। স্পেশালি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, এডমিন ও মডারেটরদের যারা আমাকে এত সুন্দর একটা কমিউনিটিতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং আমাকে প্রতিনিয়ত সাপোর্ট করছেন।


১০%প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


Logo.png

Banner.png

baa86317249846ba9745c173505c9614.jpeg