ছোট গল্প: “শেষ বিকেলের সূর্য”
🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001।
হ্যালো বন্ধুরা...........
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি।আজ আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজ আমি একে ছোট গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। লেখালেখি করতে বরাবরই আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আর বিশেষ করে গল্প পড়তে অনেক বেশি ভালোবাসি।আশা করি আমার লেখার ছোট গল্পটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লাগবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
ছোট একটি গ্রাম নাম নীলপুর। প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরা এই গ্রামে বাস করত একজন বৃদ্ধ, নাম তার হাশেম চাচা। বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। মাথায় টাক, চোখে মোটা চশমা, কাঁধে একটা পুরনো ব্যাগ। গ্রামবাসীরা তাকে খুব সম্মান করত, কারণ তিনি একসময় ছিলেন শহরের নামকরা শিক্ষক।হাশেম চাচা শহরের চাকরি ছেড়ে অনেক বছর আগে গ্রামে ফিরে এসেছিলেন। তিনি বলতেন জীবনের আসল মানে শহরের বিল্ডিংয়ে না, এই মাঠে-ঘাটে, গাছের পাতায়। তিনি প্রতিদিন বিকেলে গ্রামের শিশুদের ডেকে এনে গল্প বলতেন কখনো ইতিহাসের, কখনো মুক্তিযুদ্ধের, আবার কখনো জীবনের কঠিন বাস্তবতা নিয়ে।একদিন গ্রামের স্কুলে একজন নতুন ছেলে ভর্তি হলো। নাম তার রুবেল। শহর থেকে তার পরিবার গ্রামে চলে এসেছিল। রুবেল খুব গম্ভীর, কারো সঙ্গে মিশত না। হাশেম চাচা একদিন তাকে ডেকে বললেন, এই যে কেমন আছো? শহর ছেড়ে এখানে এসে ভালো লাগছে? রুবেল কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে রইল।পরদিন হাশেম চাচা একটি গল্প বললেন একটা শহরের ছেলের গল্প, যে সবার থেকে আলাদা ছিল, কারো সঙ্গে মিশত না। কিন্তু একদিন সে বুঝতে পারল ভালোবাসা আর বন্ধুত্ব না থাকলে জীবন শুধুই একাকীত্বে ভরা। গল্প শুনে রুবেল যেন কাঁপতে লাগল। গল্পটা ছিল তারই জীবনের মতো।দিন যেতে লাগল। রুবেল আস্তে আস্তে খুলে গেল। সে খেলাধুলায় যোগ দিল, অন্যদের সঙ্গে গল্প করতে শুরু করল। হাশেম চাচার প্রেরণায় সে পড়াশোনাতেও মন দিল। হাশেম চাচা যেন তার জীবনের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠলেন।
কয়েক বছর পর রুবেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। গ্রামের সবাই খুব খুশি। কিন্তু সে বছরই একদিন খবর এলো হাশেম চাচা অসুস্থ। রুবেল ছুটে এল গ্রামে। চাচার হাত ধরে বলল, চাচা আপনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। আমি আজ যা কিছু সব আপনার জন্যই।হাশেম চাচা মৃদু হেসে বললেন, "তুই শুধু একজন ছাত্র না রে তুই আমার গল্পের নায়ক" কিছুক্ষণ পরেই শেষ বিকেলের রক্তিম সূর্যের আলোয় তিনি চোখ বুজলেন চিরনিদ্রায়।তার চলে যাওয়া গ্রামে এক শূন্যতা রেখে গেল। কিন্তু তার শিক্ষা, ভালোবাসা আর গল্প সেগুলো রয়ে গেল শত মন আর স্মৃতিতে।তার চলে যাওয়া গ্রামে এক শূন্যতা রেখে গেল। কিন্তু তার শিক্ষা, ভালোবাসা আর গল্প সেগুলো রয়ে গেল শত মন আর স্মৃতিতে।হাশেম চাচার মৃত্যুর পর রুবেল একা বসে রইল সেই পুরনো বেঞ্চটায়, যেখানে চাচা প্রতিদিন গল্প বলতেন। বাতাসে যেন তার কণ্ঠস্বর ভেসে বেড়াচ্ছে “জীবন মানে শুধু নিজের জন্য বাঁচা না, অন্যকে বদলে দেওয়াও এক ধরনের বেঁচে থাকা।”সেই মুহূর্তেই রুবেল সিদ্ধান্ত নিল সে হাশেম চাচার পথেই হাঁটবে। লেখাপড়া শেষে সে আবার গ্রামে ফিরে এল। শহরের চাকরি না নিয়ে সে গড়ে তুলল “হাশেম শিক্ষা কেন্দ্র" যেখানে গ্রামের শিশুরা বিনামূল্যে পড়াশোনা করে, শিখে জীবনবোধ আর স্বপ্ন দেখা।প্রতিদিন বিকেলে রুবেল নিজের হাতে চা বানিয়ে শিশুদের সামনে বসে পড়ে গল্প বলে, প্রশ্ন করে, হাসে, আবার কখনো চোখ ভিজে আসে। হাশেম চাচার পুরনো ব্যাগটা এখন তার কাঁধে। গ্রামের মানুষরা তাকে এখন “ছোট হাশেম চাচা” নামে ডাকে।বছর ঘুরে যায় দিন যায়, সময় বদলায় কিন্তু গল্প থামে না। সেই শেষ বিকেলের সূর্যটা আজও নীলপুরের আকাশে ঢলে পড়ে, আর রুবেল প্রতিদিন তার শিক্ষকের স্বপ্নকেই জীবন্ত রাখে।
গল্পের মূলভাব:
একজন ভালো শিক্ষকের ভালোবাসা ও সঠিক দিকনির্দেশনা একজন মানুষকে বদলে দিতে পারে। ভালোবাসা, সময়, আর সত্যিকারের মনোযোগ জীবনে সবচেয়ে বড় উপহার।একজন সত্যিকারের শিক্ষক মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকেন তার শিক্ষার্থীর হৃদয়ে, তার শিক্ষা আর আদর্শে। যদি কেউ মন থেকে ভালোবাসে, তবে সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনতে পারে নীরবে, ধীরে, কিন্তু চিরস্থায়ীভাবে।
পোস্টের বিষয় | ছোটো গল্প |
---|---|
পোস্টকারী | তানহা তানজিল তরসা |
ডিভাইস | রেডমি নোট ১১ |
লোকেশন | পাবনা |
https://x.com/TanhaT8250/status/1908170677569675564?t=S1PExbPWuts4hgQuL6B6cw&s=19