মানুষের জীবনে পর্যাপ্ত ঘুমের ভূমিকা অপরিসীম

আমি @arpita007 বাংলাদেশ থেকে। কেমন আছেন সকল বাংলাদেশী এবং ইন্ডিয়ান বন্ধু -বান্ধবীগণ? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজকে ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে আবার নতুন একটি ব্লগ নিয়ে ।

সোর্স

মানুষের জীবনে ঘুম একটি অপরিহার্য শারীরবৃত্তীয় চাহিদা। যেমন খাবার ও পানি ছাড়া জীবনধারণ সম্ভব নয়, তেমনি পর্যাপ্ত ঘুম ছাড়া সুস্থ দেহ ও সক্রিয় মন বজায় রাখা কঠিন। আধুনিক ব্যস্ত জীবনে অনেকেই ঘুমকে অপ্রয়োজনীয় ভেবে সময় কম ঘুমান, কিন্তু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।

প্রথমত,পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সময় আমাদের শরীর বিশ্রাম নেয় এবং ভেতরে ভেতরে মেরামতের কাজ চলে। কোষগুলো নতুনভাবে তৈরি হয়, ক্ষত সারতে সাহায্য করে, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যারা নিয়মিত ঘুম কমায়, তাদের শরীরে সহজেই রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে। এছাড়া শিশু ও কিশোরদের ক্ষেত্রে ঘুম বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে, কারণ তখন শরীরে বৃদ্ধি-হরমোন সক্রিয় থাকে।

দ্বিতীয়ত, মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঘুম অপরিহার্য। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক তথ্য সংরক্ষণ করে ও অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়। এর ফলে শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে। একজন শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম পড়া মনে রাখা ও পরীক্ষায় ভালো করার ক্ষেত্রে সহায়ক। অন্যদিকে, ঘুমের অভাবে মনোযোগ নষ্ট হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায় এবং সহজেই রাগ বা বিরক্তি আসে। দীর্ঘদিন অনিদ্রা থাকলে বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

তৃতীয়ত, ঘুম কর্মক্ষমতা ও সৃজনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে মন সতেজ থাকে এবং কাজে মনোযোগ বাড়ে। যারা নিয়মিত ভালো ঘুমায়, তারা অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলোতে বেশি দক্ষতা দেখাতে পারে। অপরদিকে, যারা অনিদ্রায় ভোগে, তারা দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কোনো কাজেই মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। সৃজনশীল চিন্তাভাবনাও ঘুমের মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়। তাই বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক কিংবা শিল্পীরা তাদের সৃষ্টিশীলতা রক্ষায় পর্যাপ্ত ঘুমকে গুরুত্ব দেন।

চতুর্থত, ঘুম আমাদের আবেগ ও সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমরা যথেষ্ট ঘুমাই, তখন মেজাজ ভালো থাকে, অন্যের সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশতে পারি এবং সহনশীলতা বাড়ে। অপরদিকে ঘুম কম হলে মেজাজ খিটখিটে হয়, ছোটখাটো কারণে রাগ বেড়ে যায় এবং সম্পর্কের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এভাবে সামাজিক জীবনেও ঘুমের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়।

অন্যদিকে, প্রযুক্তি আসক্তি, অতিরিক্ত পড়াশোনা বা কাজের চাপ, এবং রাত জেগে বিনোদনে ডুবে থাকা আমাদের ঘুমকে সবচেয়ে বেশি নষ্ট করছে। অনেকেই ভাবে, ঘুম কমিয়ে বেশি কাজ করা যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ঘুমের অভাবে কাজের মান নষ্ট হয় এবং সময়ও বেশি লাগে। তাই কাজ বা পড়াশোনায় সফল হতে চাইলে আগে ঘুমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগা, ঘুমানোর আগে মোবাইল বা টিভির ব্যবহার কমানো, আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা এবং ভারী খাবার এড়িয়ে চলা ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন, আর শিশু ও কিশোরদের জন্য সময়টা আরও বেশি।

সবশেষে বলা যায়, ঘুম কোনো সময়ের অপচয় নয় বরং জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। এটি শরীরকে রোগমুক্ত রাখে, মনকে প্রশান্ত করে, মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে এবং জীবনের মান উন্নত করে। যারা ঘুমকে গুরুত্ব দেয়, তারা শারীরিকভাবে সুস্থ, মানসিকভাবে দৃঢ় এবং কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারে। তাই ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা প্রত্যেকের দায়িত্ব।

আমি অর্পিতা নওশিন তিশা। আমি বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার শখের মধ্যে রান্না করতে ভালোবাসি এবং গল্পের বই পড়তেও ভালোবাসি । তাছাড়া অবসর সময়ে ছবি আঁকতে,গান শুনতে এবং বিভিন্ন ধরনের কমেডি, থ্রিলার, হরর মুভি দেখতে পছন্দ করি। এছাড়াও হিন্দি ডাবিং করা নাটকগুলো দেখতে পছন্দ করি।