গান রিভিউ- সবাই তো সুখী হতে চায় গানের রিভিউ...... ||Song Review By@maksudakawsar||
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন প্রিয় বন্ধুরা আমার ? আর বলবো না ভালো নেই।যেমনই আছি বেশ ভালোই আছি। আর ভালো আছি বলেই সারাদিনের ব্যস্ততার পর বসে গেলাম আপনাদের জন্য একটি পোস্ট শেয়ার করতে। পোস্ট শেয়ার না করতে পারলে মনটাই যেন কেমন উরু উরু লাগে। তাই তো শত কষ্টের মাঝেও পোস্ট করা হতে বিরত থাকিনি। বিরত থাকিনি নিজের একটিভিটিজ ধরে রাখতে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ চলে আসলাম আপনাদের মাঝে নিজের আরও একটি ভালো লাগার পোস্ট শেয়ার করতে। দোয়া করবেন হাজারও ব্যস্ততার মাঝে আমি যেন আপনাদের সাথে থাকতে পারি।
আমি @maksudakawsar, বাংলাদেশ হতে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন নিয়মিত গর্বিত ইউজার। গর্বিত বলছি এই কারনে যে, আমার চেয়ে ভালো ভালো অনেক ক্রেয়েটিভ মানুষ আছে যারা এমন একটি প্লাটফর্ম খুঁজে বেড়াচ্ছে নিজেদের যোগ্যতাকে মেলে ধরার জন্য। অথচ আমি কত ক্ষুদ্র একজন ইউজার, যার নেই তেমন ক্রেয়েটিভিটি। তবুও আমি এমন সুন্দর একটি প্লাটফর্মের একজন ভেরিফাইড ইউজার। তাই তো শত ব্যস্ততার মাঝেও আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে নতুন নতুন এবং ভিন্ন কিছু পোস্ট নিয়ে উপস্থিত হতে। তাই তো আজ আবার একটি নতুন পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হলাম।
গান ভালোবাসে না তেমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটাই বেশ কষ্টের। জীবনে একবার হলেও আমরা গুনগুনিয়ে গান করেছি। আর অনেকে তো সুর না থাকলেও গলা ছাড়িয়ে গান করি। তবে গানের ক্ষেত্রে এক একজনের পছন্দ এক এক ধরনের। কেউ পছন্দ করে আধুনিক গান, কেউ পছন্দ করে পল্লীগীতি। আর কেউ বা পছন্দ করে ডুম তারাক্কা গান। তবে আমার কাছে কিন্তু যে গান মনের সাথে মিশে যায় সেই গানই বেশ ভালো লাগে। আর তাই তো আজ ভাবলাম নিজের পছন্দের গানের রিভিউ আপনাদের মাঝে একটু শেয়ার করি।

গানটির কিছু তথ্য
গানটির কিছু তথ্য
নাম | সবাই তো সুখী হতে চায়....... |
---|---|
শিল্পী | মান্না দে |
কথা | জহর মজুমদার |
সুর | প্রভাস দে |
★মান্না দে
গানটি নিয়ে যত কথা
গানটি নিয়ে যত কথা
বাংলা গানের ইতিহাসে মান্না দে-র নাম উচ্চারণ করলেই যে গভীরতা, শিল্পমান, আর অনন্যত্ব ভেসে ওঠে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি ছিলেন এমন এক শিল্পী যিনি কণ্ঠের মাধ্যমে শুধুই গান শোনাননি, বরং শ্রোতার মনে গল্প বলেছেন, জীবনদর্শন শিখিয়েছেন। তাঁর কণ্ঠে পরিবেশিত “সবাই তো সুখী হতে চায়” গানটি সেই দৃষ্টান্তের অন্যতম। এটি কেবল একটি সুরেলা সংগীত নয়, বরং মানুষের জীবনের বাস্তবতা ও আবেগের এক মিশ্র প্রতিচ্ছবি।
গানটির প্রথম পঙ্ক্তি—“সবাই তো সুখী হতে চায়, তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয় না”—শোনামাত্রই মনে হয় যেন একটি সহজ বাক্যে জীবনের গভীর সত্যকে মুঠোয় তুলে দেওয়া হয়েছে। জীবনের পথে আমরা সবাই সুখ চাই, কিন্তু সুখের সংজ্ঞা ও ভাগ্যের লিখন সবার জন্য সমান হয় না। কারো কাছে সুখ মানে প্রাচুর্য, কারো কাছে মানে শান্তি, আবার কারো কাছে ভালোবাসা। কিন্তু এই গান আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সুখ এমন কিছু নয় যা সবসময় অর্জনযোগ্য; বরং এটি এক মানসিক অবস্থা, যা সবার ভাগ্যে নাও জুটতে পারে।

এই গানটির গীতিকার জহর মজুমদার। তাঁর লেখা গানগুলিতে সবসময় একধরনের সহজাত দর্শন দেখা যায়। এখানে তিনি সমাজ ও জীবনের এক চিরন্তন সত্যকে তুলে ধরেছেন—মানুষের অবিরাম সুখের খোঁজ এবং সেই খোঁজে সাফল্য-ব্যর্থতার চক্র। বিশেষ করে “ভালোবেসে সুখী হতে বল কেনা চায়, রাধা সুখী হয়েছিল এই শ্যামরায়”—এই পঙ্ক্তি প্রমাণ করে ভালোবাসা একেবারেই বাণিজ্যিক বস্তু নয়, বরং আন্তরিকতার বন্ধন, যা যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে টিকে আছে।
সুরকার প্রভাস দে গানটিতে এমন সুরের গাঁথুনি দিয়েছেন যা লিরিক্সের আবেগের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুরের ওঠানামা গানের প্রতিটি মেজাজের সঙ্গে এমনভাবে খাপ খেয়ে গেছে যে শ্রোতা কখনো ভেসে যান গভীর চিন্তায়, কখনো আবার অনুভব করেন একধরনের প্রশান্তি। সঙ্গীতায়োজনও ছিল অত্যন্ত সংযমী; অযথা যন্ত্রের বাড়াবাড়ি না করে গানের মূল আবেগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

এই গানটি প্রথম পরিবেশিত হয় একটি বাংলা চলচ্চিত্রের অংশ হিসেবে। সিনেমার দৃশ্যপটে গানটি আসে এমন সময়ে, যখন গল্পের চরিত্র জীবনের অনিশ্চয়তা, ভালোবাসা এবং ভাগ্যের বাঁধন নিয়ে ভাবছে। আলোর ম্লানতা, চরিত্রের নিঃশব্দ দৃষ্টি এবং শান্ত পটভূমি—সবকিছু মিলে গানটির আবহকে আরও গাঢ় করে তোলে। দর্শকরা শুধু গান শোনেননি, বরং দৃশ্যের সঙ্গে মিলিয়ে তার গভীরতা অনুভব করেছেন।
মান্না দে-র কণ্ঠের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। তাঁর গায়কি কখনো অতিরঞ্জিত নয়, আবার নিস্তেজও নয়; বরং যেন বাস্তব জীবনের কথা বলছেন—এমন স্বাভাবিকতার মধ্যেও ছিল এক অনন্য মাধুর্য। প্রতিটি শব্দ উচ্চারণের স্বচ্ছতা, শ্বাসের সঠিক ব্যবহার, এবং গানের আবেগ অনুযায়ী কণ্ঠের ওঠানামা—সবকিছু মিলিয়ে গানটি হয়ে উঠেছে এক অনবদ্য শ্রুতিমধুর অভিজ্ঞতা। তাঁর কণ্ঠ যেন গানটির দর্শনকে সরাসরি শ্রোতার হৃদয়ে পৌঁছে দেয়।

গানটি মুক্তির পরপরই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তখনকার দিনে রেডিও, গ্রামোফোন রেকর্ড এবং সিনেমা হল ছিল মানুষের প্রধান বিনোদনের মাধ্যম। যেখানেই এই গান বাজত, মানুষ থেমে যেত, মনোযোগ দিয়ে শুনত। পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ঘরোয়া আসর—সবখানেই এটি বারবার শোনা যেত। মানুষের মনে গানটি এতটাই জায়গা করে নিয়েছিল যে অনেকে জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে নিতেন এর প্রতিটি লাইনে।
আজ, কয়েক দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরও গানটি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। ইউটিউব, স্পটিফাই কিংবা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এখনও গানটি শোনা ও শেয়ার করা হয়। অনেকেই মন খারাপের দিনে বা আত্মমগ্ন মুহূর্তে গানটি শোনেন। এর দর্শন ও আবেগের গভীরতা প্রজন্মের সীমানা অতিক্রম করেছে। পুরনো প্রজন্মের কাছে এটি নস্টালজিয়া, নতুন প্রজন্মের কাছে এটি এক জীবনের পাঠ।

গানটির দীর্ঘস্থায়ী আবেদন এর মূল বার্তায় লুকিয়ে আছে। এটি শেখায়—সুখ কেনা যায় না, এবং ভাগ্যের লিখন বদলানো যায় না। কিন্তু আন্তরিক ভালোবাসা, আত্মিক সম্পর্ক এবং মনের শান্তি প্রকৃত সুখ এনে দিতে পারে। মানুষের জীবনদর্শন যতই বদলাক না কেন, এই সত্য চিরকাল একই থাকবে।
সব মিলিয়ে “সবাই তো সুখী হতে চায়” বাংলা গানের ইতিহাসে এক কালজয়ী সৃষ্টি। জহর মজুমদারের গভীর লিরিক্স, প্রভাস দে-র সুরের মায়া, আর মান্না দে-র হৃদয়স্পর্শী কণ্ঠ মিলিয়ে গানটি হয়ে উঠেছে এমন এক শিল্পকর্ম যা সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। সুখের খোঁজ মানুষের চিরন্তন যাত্রা, আর সেই যাত্রার সঙ্গে এই গানটি যেন এক বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে আছে। যতদিন মানুষ সুখের অর্থ খুঁজবে, ততদিন এই গানও তাদের মনে প্রতিধ্বনিত হবে।
গানটির ভিডিও লিংক
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy

মান্না দের কন্ঠের কোন তুলনা হয়না। আর এই গানটি তো আমার খুবই প্রিয় একটি গান। আমি এই গানটি যে কতবার শুনেছি তা গুনে বলতে পারব না। ভীষণ ভালো লাগলো আজকে আপনার এই পোস্টটি পড়ে, পুরনো স্মৃতি তাজা হয়ে গেল আপনার পোষ্টের মাধ্যমে। ধন্যবাদ।