আমার বাংলা ব্লগ- এ দ্বিতীয় প্রতিযোগিতা : বিষয় - রচনা প্রতিযোগিতা - আমার প্রিয় গ্রাম

in আমার বাংলা ব্লগ4 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কতৃপক্ষ, সদস্য ও স্টিমিয়ান বন্ধুরা,কেমন আছেন? আশাকরি সবাই ভালো আছেন।
আমিও আলহামদুলিল্লাহ সকলের দোয়ায় ভালো
আছি।

আজকে আমি আমার বাংলা ব্লগ- এ দ্বিতীয় প্রতিযোগিতা : বিষয় - "রচনা প্রতিযোগিতা - আমার প্রিয় গ্রাম সম্পর্কে রচনা লিখতে চলেছি।

আমার প্রিয় গ্রাম

ভূমিকাঃ-

'একবার যেতে দেনা আমার ছোট্ট সোনারগাঁ' এই দেশের গানটি দিয়ে শুরু করছি।পৃথিবীর যে কোথাও থাকি না কেন,আমরা কিন্তু নিজের জন্মভূমি তথা

নিজের গ্রামের কথা ভুলবো না ভুলতে পারি না। গ্রামের মেঠোপথ, মাঠ,ঘাট,ক্ষেত,গাছ-গাছালি, নদনদী এসব জিনিস ভোলার নয়।

IMG_20210709_082357.jpgLocation

আমার গ্রামের নামঃ-

আমার গ্রামের নাম-মহেশপুর।
ডাকনাম-মুরালীপুর।
ওয়ার্ড নম্বার-০১।
ইউনিয়ন-২ নম্বার।
ডাকঘর-ভেন্ডাবাড়ী।
উপজেলা-পীরগঞ্জ।
জেলা-রংপুর।
বিভাগ-রংপুর।
দেশ-বাংলাদেশ।

IMG_20210709_083524.jpgLocation

গ্রামের নামকরণের কারণ

পূর্ব পুরুষদের নিকট থেকে শুনেছি যে মোগলদের আমলে মহেশ বোস নামের এক হিন্দু সম্ভান্ত্র জমিদার এই স্থানে বাস করতো ও জমিদারি চালাতো।

তিনি অত্যন্ত জনদরদী ও পরোপকারী জমিদার ছিল।

আর তিনি মারা যাবার পর এই স্থানটি অর্থাৎ বর্তমান আমার প্রিয় গ্রামটি মহেশপুর নামে নামকরণ করেন সেই যুগের লোকেরা।

তখন থেকে এই গ্রামের নাম মহেশপুর গ্রাম।

গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশঃ-

আমার গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। সবুজে ঘেরা এই গ্রাম।গ্রামের চতুর্দিকে মাঠ, ঘাট, ধানক্ষেত,গাছপালা দিয়ে সাজানো এই গ্রামটি।

আমার প্রিয় গ্রামটি সুজলা,সুফলা, শস্য,শ্যামলা নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

IMG_20210709_082456.jpgLocation

**সীমানাঃ- **

সুন্দর আমার এই মহেশপুর গ্রামের সীমানা
পূর্ব-পশ্চিম ১.২৫ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার।

IMG_20210709_082707.jpgLocation

জনসংখ্যাঃ-

আমাদের প্রিয় গ্রামটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০০০।
ভোটার বা ১৮ বছর বয়সের উর্ধে জনসংখ্যা ১৭০০।
এই ওয়ার্ডের সংখ্যাগরিষ্ট ভোটার এই গ্রামে।

যার ফলে প্রতিবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রার্থী নির্বাচিত হন আমাদের এই প্রিয় গ্রামটিতে। এই গ্রামটি ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রাম।

IMG_20210709_083208.jpgLocation

ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসবঃ-

এই মহেশপুর গ্রামের লোকজন ১০০℅ মুসলমান।এখানে অন্য কোন জাতীর বা ধর্মের লোকজন বাস করে না। মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব বছরে দুইটি আসে। একটি হলো ঈদুল-ফিতর এবং অপরটি হলো ঈদুল আযহা।

IMG_20210709_082523.jpgLocation

এই দুই ঈদ ছাড়াও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সবাই একত্রিতভাবে মিলেমিশে অংশগ্রহণ করে থাকি।

যেমন রমজান মাসে রোজা মসজিদে ইফতারের ব্যবস্থা করাসহ ঈদে মিলাদুন্নবী, শবেই কদর, শবেই বরাত ও শবেই মেরাজ পালন করা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ-

আমাদের প্রিয় গ্রামটিতে কোন প্রকার সরকারি বিদ্যালয় নেই।তবে পাশ্ববর্তী গ্রামে তিনটি প্রাথমিক ও নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে।

IMG_20210709_083552.jpgLocation

তাছাড়া গ্রাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদের ভেন্ডাবাড়ী বেশি দুরে না। ওখানে ডিগ্রী কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে আমরা পড়ালেখা করেছি।
গ্রামে একটি ব্র্যাক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল।

মসজিদঃ-

এই গ্রামের ধর্মভীরু লোকজনদের ইবাদতের জন্য মসজিদের সংখ্যা তিনটি। যেহেতু তিনটি পাড়া নিয়ে গ্রামটি গঠিত।

IMG_20210709_083415.jpgLocation

পাড়া তিনটির নাম হলো-মহেশপুর,মুরালীপুর ও নয়াপাড়া।
তিন পাড়ায় একটি করে মোট তিনটি মসজিদ রয়েছে।

রাস্তাঘাটঃ-

মহেশপুর গ্রামের রাস্তা কিছু পাকা ও কিছু কাঁচা রয়েছে। তবে গ্রামের ভিতরের রাস্তা গুলো সম্পূর্ণ কাঁচা বা মাটির রাস্তাই রয়ে গেছে।বর্ষাকালে এই রাস্তায় চলাচল অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

IMG_20210709_082602.jpgLocation

আর লালমাটির রাস্তায় বর্ষাকালে কতজন যে পিছলে পড়ে পা ভাঙ্গে তার হিসাব নেই। এখন গ্রামের একটি রাস্তা এক কিলোমিটার পাকাকরনের কাজ চলছে।

পেশাঃ-

এই গ্রামের ৯৫% লোকজন কৃষিকাজে জড়িত। এখানে কৃষকরা প্রচুর পরিমানে ধান ফলায়।ধান,আলু ভুট্টা চাষ করে চাষীরা।

IMG_20210709_083816.jpgLocation

বাকী ৫% লোকজনের মধ্যে রয়েছে চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী ও জেলে।

বাড়ীঘরঃ-

এই গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ীঘর সাধারনত আধাপাকা। কিছু কিছু পাকা ও সামান্য কিছু ঘর মাটির তৈরি কাঁচাই রয়ে গেছে।

IMG_20210709_083340.jpgLocation

পুকুর ও নদনদীঃ-

গ্রামের ভিতর অনেক পুকুর রয়েছে, যাতে প্রচুর মাছচাষ করে থাকে লোকজন। গ্রামের পাশদিয়ে সোনামতি নামের একটি ছোট নদী চলে গেছে। ছোটকালে ঐ নদীতে গিয়ে আমরা সাঁতা শিখতাম।

IMG_20210709_082944.jpgLocation

তাছাড়া ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ঐ নদীতে পানি কমে যাওয়ায় আমরা মাছ ধরার জন্য যেতাম এবং প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এই মাছ ধরাকে আমাদের এলাকায় বলতো "বোয়াত"।

গাছ-গাছালিঃ-

গ্রামের লোকজনের প্রায় প্রত্যেকের বাড়ীতে দুএকটি করে আম,কাঁঠাল, লিচু,পেয়ারা গাছ রয়েছে,যেগুলো দ্বারা ফলমুলের পুষ্টি চাহিদা কিছুটা বহন করতে পারে।

IMG_20210709_083732.jpgLocation

ইউক্যালিপটাস,মেহগণি ও আকামণি গাছে আছে, যেগুলো আসবাবপত্রের কাঠের চাহিদা পুরণ করে থাকে।

বিনোদনঃ-

গ্রামের সহজ সরল লোকজন অত্যন্ত বিনোদন পছন্দ করতো।
তাই তারা বছরে দুইএকবার নাটক,যাত্রা ও গানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতো।আর এগুলো দেখে আমরা খুব মজা পেতাম।

IMG_20210709_082644.jpgLocation

এইসব নাটকে আমি নিজেও " কাশেম মালার প্রেম"নাটকে কিশোর কাশেমের রোল করতাম।

উপসংহারঃ-

পরিশেষে বলি মাইকেল মধুসুদন দত্তের কপোতাক্ষ নদ কবিতার মতো গ্রামের সেই সুজলা,সুফলা পরিবেশ আনন্দ বিনোদন পথচলা আজ শুধু স্মৃতি হয়েই রয়ে গেছে।

যা কখনোই ভোলা যায় না ভোলা যাবেও না । সেই জন্যই তো এই গ্রামটি আমার এতো প্রিয়।

ধন্যবাদান্তে-
@doctorstrips