শেষ ট্রেনের যাত্রী ( অন্তিম পর্ব )
হ্যালো বন্ধুরা, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি। |
---|
Image Created by OpenAI
আজকে আপনাদের সাথে "শেষ ট্রেনের যাত্রী" গল্পটির অন্তিম পর্ব শেয়ার করে নেবো। তো রাকেশ যখন স্টেশন মাস্টারকে বলেছিলো যে- নেক্সট এই ট্রেনে যে আসবে, সে আপনারা খুব কাছের একজন হবে। আর এই ট্রেনটিও বিদায় নেবে। তো সেই সন্ধিক্ষণ ঘনিয়ে আসলো অর্থাৎ সেই ১১ জুন, রাত ১১ টা ২০ মিনিট। গঙ্গারামপুর স্টেশন যেন এইদিন এক অন্যরকম মতো লাগছে। সমস্ত প্লাটফর্ম এর বাতিগুলো যেন আরো উজ্জ্বল মনে হচ্ছে অর্থাৎ বেশি আলোকিত মনে হচ্ছে। আর এই ট্রেনটি যেহেতু সবসময় তিন নম্বর প্লাটফর্ম-এ আসে, তাই স্টেশন মাস্টার অনেক আগের থেকে ওখানে একা দাঁড়িয়ে আছেন, আর যেহেতু রাকেশের কথা অনুযায়ী তার খুব কাছের কেউ আসবে, তাই তার আগ্রহটাও খুব।
যত সময় যাচ্ছে, রাকেশের কথাগুলো যেন বারবার তার কানে বাজছে। ঠিক এইবার একদম কাঁটায় কাঁটায় যখন রাত ১১ টা ২০ বাজলো, তখন একটা হুইসেল শোনা গেলো, স্টেশন মাস্টারের তো তর আর সইছে না, হাত কচ্লাতে থাকে একভাবে। এইবার ধীরে ধীরে প্লাটফর্মের দিকে ট্রেনটি এগিয়ে আসলো এবং থামার কিছুক্ষন পরে দরজা খুলে গেলো। এইবার সেখান থেকে একজন ব্যক্তি ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো এবং ট্রেন থেকে নামলো প্লাটফর্মের উপরে। স্টেশন মাস্টার তার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে, কিন্তু প্রথমে যেন চিনতেই পারছেন না ব্যক্তিটিকে। কিন্তু কিছুক্ষন পরে আরো ভালোভাবে দেখার পরে সে তার চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।
তার চোখে সাথে সাথে জল চলে আসলো। আসলে এই ব্যক্তিটি আর কেউ না, তার নিজের বাবা। বয়সও অনেক হয়েছে, গলার স্বর যেন কাঁপা কাঁপা। স্টেশন মাস্টারের বাবা এখান থেকে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে উত্তরবঙ্গের একটা সাইটে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী স্টেশন মাস্টার জানতো যে তার বাবা খুন হয়ে গেছেন বা কোনো দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তার বাবাকে জীবিত দেখে সে যেমন আনন্দিত আবার বিস্মিত হয়েছেন। কারণ তার বাবা যেখানে এতো বছর ধরে একজন মৃত ব্যক্তি হিসেবে পাড়া, প্রতিবেশীতে পরিচিত, হঠাৎ এতো বছর পরে ফিরে আসতে দেখে যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। তার বাবা তাকে দেখে বললো-তুমি কি আমার ছেলে!
স্টেশন মাস্টার এক রাশ চোখে আনন্দের অশ্রু নিয়ে বললেন-হ্যাঁ, বাবা আমি। এইদিন স্টেশন যেন পুরো থমকে গিয়েছে, সবার চোখ এদিকে। এরপর বাবা-ছেলে দুইজন ভালোবাসার আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়। কিছুক্ষন পরে সেই ট্রেনের দরজাটা বন্ধ হয়ে যায় এবং ট্রেনটি সামনের দিকে চলতে শুরু করে। তবে এইবার ট্রেনটি নিঃশব্দে চলে গেলো কোনো হুইসেল না দিয়ে। এদিকে প্লাটফর্মের আলোগুলোও যেন ধীরে ধীরে নিভে যাওয়ার পথে। প্লাটফর্মে এক কোনে রাকেশ তখন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে যেন এক রাশ বিষন্ন মন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কারণ তার ডিউটি শেষ। শেষ যাত্রীও এসে গেছে আর এই ট্রেনটিও বন্ধ হয়ে যাবে, তাই সে এখন ফিরে যাবে। গঙ্গারামপুর স্টেশন একটা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকলো এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। শেষ ট্রেন ফিরে গেছে ঠিকই, কিন্তু ফিরিয়ে দিয়ে গেছে সব হারানো মুখগুলো।
শুভেচ্ছান্তে, @winkles
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |


Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.