আয়নার অপর পিঠে (পর্ব ১১ )

আজকে আপনাদের সাথে "আয়নার অপর পিঠে" গল্পটির একাদশ পর্ব শেয়ার করে নেবো। তো আলো আর ছায়ার বিস্ফোরণ ঘটার পরে চারিদিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার পরে সব যেন শেষ হয়ে যায়। বেশ অনেক্ষন যাবত এই ধোঁয়ায় চারিদিকে আচ্ছন্ন থাকার পরে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে লাগে। এরপর সৌমিত্র নিজেকে দেখতে পায় সেই পুরোনো লাইব্রেরির ফ্লোরে। সে শুধু একাই আছে ওখানে আর কেউ নেই ওখানে। সব দিকে যেন একটা নিস্তব্দ পরিবেশ। সেখানে যে অলৌকিক শক্তির পাথরটি তার হাতে ছিল, সেটাও ফেটে যায় এই ঘটনার পরে। তবে সৌমিত্রর সেই প্ৰতিচ্ছবিটা কিন্তু হারেনি, সে তার মাঝেই বিলীন হয়ে গেছে। তবে এখন আর সে কিছুই করতে পারবে না, কারণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সৌমিত্রর হাতে রয়েছে।

এই আয়নাটা যেন এখন শুধু একটা নিষ্ক্রিয় বস্তু হয়ে পড়ে আছে ঘরের এক কোনে। সৌমিত্র এর পরে সে এই ঘটনার সত্যি অবলম্বনে অর্থাৎ সবাইকে জানানোর উদ্দেশ্যে একটা ডায়েরি লিখতে শুরু করে। তবে এই ডায়েরির শেষ পাতায় সে একটা বিষয় উল্লেখ করে এই আয়নার বিষয়ে- "যে আমি এক আয়নার রক্ষক। যারা বিশ্বাস করে আয়নার ওপাশে কেউ নেই, তাদের বলি-সবসময় সত্যি চোখের সামনে দেখা যায় না, কিন্তু তার পরেও কিছু সত্যি থাকে। আমরা আসলে সবাই এক একজন প্রতিচ্ছবি বহন করি। কোনো একদিন হয়তো দেখা যাবে তোমার ঘরের আয়নাও কথা বলবে"। এইভাবে তার ডায়েরি লেখা শেষ হয়। তবে সবকিছু সমাপ্ত হলেই কি সমাপ্ত! আসলে এই সমাপ্তের মধ্যেও নতুন একটি শুরু লুকিয়ে থাকে।

এইভাবে সৌমিত্র স্বাভাবিক জীবনে অনেকদিন কাটিয়ে দেয় মাস ৪ এর মতো। এইভাবে থাকতে থাকতে একদিন রাতের কথা, প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে বাইরের দিকে। সৌমিত্র জানালার বাইরে দেখতে গিয়ে দেখে জানালার কাঁচে তার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক, কাঁচের সামনে দাঁড়ালে যে কারো প্রতিবিম্ব সেখানে দেখা যাবে। কিন্তু এখানে বিষয় হলো, সৌমিত্র ওখান থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরেও যেন সেখানে তার প্রতিবিম্ব স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। সৌমিত্র প্রথমে ভাবে এটা কোনো ভ্রম হবে বা আগের ঘটনার স্মৃতি এখনো মনের মধ্যে রয়ে গেছে। কিন্তু না সৌমিত্র অনেক্ষন তাকিয়ে থাকার পরেও দেখলো বিষয়টা সেইরকমই।

সৌমিত্র এর দিকে সেই প্রতিবিম্বটা হঠাৎ হেসে বললো- তুমি ভেবেছো সব শেষ? আলো দিয়ে কিছু সময়ের জন্য ছায়াকে মুছে ফেলা গেলেও সবসময়ের জন্য সেটা হয়না। সময় হলে আবারো আমরা ছায়া হয়ে ফিরে আসি। সৌমিত্র এইসব শুনে কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না, কারণ এইরকম কথা বা ঘটনা সে শুনে শুনে বা দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যাইহোক,সৌমিত্র এই কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দরজা খুলে ওই রাতে বৃষ্টির মাঝে হাঁটা শুরু করলো। তাকে অনুসরণ করলো না কেউ, কিন্তু তার মনের মধ্যে অনুভব হতে লাগে, ছায়া যেন তার পাশেই হাঁটছে।.....