ভূত দেখতে যাওয়ার অভিযান (পর্ব - ২)

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago (edited)

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

গ্রামের বন্ধুদের সঙ্গে মিলে আড্ডা, খেলা, দুষ্টুমি সবকিছুই যেন অন্যরকম আনন্দে ভরা। ছোটবেলা থেকেই আমার বন্ধু রাকিব, সুমন, আকাশ আর জুয়েল সবসময় আমার সঙ্গে থেকেছে। ওদের সাথে থাকলেই সময় কেমন উড়ে যায় বুঝতেই পারি না। তবে আজকে আমি যে গল্পটা বলতে যাচ্ছি, সেটা আমাদের এক মজার কাণ্ডকারখানা। সেটা হলো ভূত দেখতে যাওয়ার ঘটনা। যদিও এখন মনে করলে হাসি পায়, তখন কিন্তু আমরা ভয়ে কাঁপছিলাম আবার কৌতূহলেও ছিলাম ভরপুর। আর মজার ব্যাপার হলো, এই ঘটনাটা খুব পুরোনো নয় এই তো দুই-তিন বছর আগের ঘটনা, আমাদের এই এলাকার মধ্যেই ঘটেছিল।

ভূত দেখতে যাওয়ার অভিযান (পর্ব - ১)

1000105107.png

AI Generator

পুরনো বটগাছটার নিচে বসে আমরা সবাই তখন ভয়ে জমে গেছি। আকাশ যেটাকে সাদা কাপড় বলছিল, সেটা আসলেই আমাদের চোখে দেখা যাচ্ছিল। বাতাসে দুলতে দুলতে জিনিসটা এমনভাবে নড়ছিল যে মনে হচ্ছিল কোনো অদ্ভুত কিছু গাছ থেকে নামার চেষ্টা করছে। জুয়েল তখন প্রায় কান্নার মতো মুখ করে বলল, “আমি কিন্তু বেশি দেরি করব না, কেউ যদি লাফ দিয়ে পড়ে তখন তো শেষ!”আমি সবার সাহস বাড়ানোর জন্য বললাম, “আরে হয়তো কারও শুকনো গামছা বা কাপড় আটকে আছে গাছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।” কিন্তু সত্যি কথা বলতে ভেতরে ভেতরে আমিও কাঁপছিলাম। গ্রামের গভীর অন্ধকার রাত, চারপাশের ভুতুড়ে পরিবেশ, আর সেই অচেনা দৃশ্য সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল যেকোনো সময় কিছু একটা ঘটবে।

রাকিব আবারও সাহস করে দাঁড়িয়ে গেল। সে বলল,“তোরা বসে থাক, আমি টর্চ মেরে দেখি ব্যাপারটা আসলে কী।”আমরা চুপ করে রইলাম। রাকিব টর্চ জ্বালিয়ে গাছের ডালের দিকে আলো ফেলতেই দেখা গেল সত্যিই সাদা কাপড়ের মতো কিছু একটা ডালে ঝুলে আছে। বাতাসের দোলায় সেটা নড়ছিল। টর্চের আলো পড়তেই বোঝা গেল সেটি আসলে পুরোনো একখানা প্লাস্টিকের ব্যাগ, যেটা অনেকদিন ধরে ডালে আটকে আছে।আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম। কিছুক্ষণ আগেও যে ভয় আমাদের বুক কাঁপাচ্ছিল, এখন সেটাই হাসির খোরাক হয়ে গেল। জুয়েল লজ্জা পেয়ে বলল, “আরে আমি তো ভেবেছিলাম সত্যিই ভূত।” আকাশও বলল, “কিন্তু এত দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল অন্য কিছু।”

আমরা হাসতে হাসতেই হঠাৎ পাশের ঝোপ থেকে জোরে খসখস শব্দ হলো। এবার আবার সবার বুক ধড়ফড় শুরু হলো। মনে হলো যেন কেউ বা কিছু আমাদের আড়াল থেকে দেখছে। সুমন ফিসফিস করে বলল, “এইবার তো কিছু একটা আছে নিশ্চিত।” আমরা টর্চ নিয়ে একসাথে ঝোপের দিকে আলো ফেললাম। আর তখনই দেখি, একটা বড় কালো ছাগল বেরিয়ে এল। ছাগলটা ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাল।আমাদের অবস্থা তখন কী যে মজার, সেটা ভাষায় বোঝানো যাবে না। কেউ হেসে কুঁকড়ে যাচ্ছে, আবার কেউ ভয় কাটার পরও ঘামছে। রাকিব বলল, “তোরা এখন বুঝলি, সবকিছু ভূত নয়। একটু সাহস রাখলে বোঝা যায় আসল ব্যাপার।” আমি হেসে বললাম, “হ্যাঁ রে, কিন্তু যখন ঝোপ নড়ছিল তখন তোর মুখও তো ম্লান হয়ে গেছিল।”

আমরা সবাই গাছের নিচে বসে আরও কিছুক্ষণ গল্প করলাম। ভয় কাটার পর মনে হচ্ছিল এই রাতটাই আমাদের জীবনের এক দারুণ অ্যাডভেঞ্চার হয়ে থাকবে। তবে ভিতরে ভিতরে একটা প্রশ্ন থেকেই গেলযদি সত্যিই ভূত থাকে? কারণ গ্রামের বড়রা প্রায়ই বলেন, এই জায়গায় নাকি রাতে অদ্ভুত সব আওয়াজ শোনা যায়।তাই ঠিক করলাম, শুধু এক রাত নয়, আরেকদিন গভীর রাতে এসে পুরো জায়গাটা ঘুরে দেখা হবে। দেখব সত্যিই কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে কিনা। সেদিনের মতো আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ি ফেরার। ফেরার পথে আবার হাসাহাসি, ঠাট্টা-তামাশা চলতে লাগল।

কিন্তু কে জানত, সামনে আমাদের জন্য আরও অদ্ভুত অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে…

(চলবে…)


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif