বাবার সাথে পুকুরে মাছ ধরা শৈশবের স্মৃতি

in আমার বাংলা ব্লগ18 hours ago

আসসালামুআলাইকুম/আদাব

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @alif111, বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।

bonding-1868513_1280.jpg

source

শৈশবের অনেক স্মৃতির ভিড়ের মাঝে কিছু কিছু মুহূর্ত আছে, যা সময়ের স্রোতেও কখনও মুছে যায় না। আমার জন্য তেমনই এক অমূল্য স্মৃতি হলো বাবার সাথে পুকুরে বড়শি ফেলে মাছ ধরা। আজও চোখ বন্ধ করলে ভেসে ওঠে সেই ভোরবেলার ছবি,আকাশে হালকা লাল আভা, কুয়াশার চাদরে মোড়া চারপাশ, আর পুকুরের জল নিথর হয়ে সোনালি আলো প্রতিফলিত করছে।

প্রতিদিন সকালে বাবা নরম গলায় ডাক দিতেন চলো, আজ একটু মাছ ধরা যাক।আমি তখন আধো ঘুমে থেকেও উচ্ছ্বাসে বিছানা ছেড়ে দৌড়ে যেতাম। বাবা হাতে নিয়ে থাকতেন বাঁশের তৈরি বড়শি আর আমি ছোট্ট একটি বালতি হাতে নিয়ে তার পিছু পিছু চলতাম। আমাদের পুকুরটা ছিল গ্রামের মাঝখানে, চারপাশে তাল, নারকেল, আর আমগাছের ছায়া। পাখির কিচিরমিচিরে চারদিক ভরে থাকত, আর হাওয়ায় ভেসে আসত ভিজে মাটির গন্ধ।

পুকুর পাড়ে বসে বাবা ধৈর্যের সাথে শিখিয়ে দিতেন কীভাবে কেঁচো বা পোকা বড়শির হুকে গেঁথে দিতে হয়। ছোট্ট আমি অনেক সময় গুলিয়ে ফেলতাম, কিন্তু বাবার ধৈর্য আর হাসি আমাকে সাহস দিত। বড়শি জলে ফেলার পর শুরু হতো অপেক্ষার খেলা। বাবা বলতেন, মাছ ধরা মানে শুধু ধরা নয়, ধৈর্য ধরা। আমরা দু’জন চুপচাপ বসে জলের ঢেউ আর ভেসে থাকা ভাসার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।

কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেতেও কোনো মাছ ধরা পড়ত না, তবুও বাবার মুখে ক্লান্তি দেখতাম না। বরং তিনি হাসিমুখে বলতেন, এটাই আসল মজা, অপেক্ষার আনন্দ। কিন্তু যখনই ভাসা হঠাৎ ডুবে যেত, আমার বুক ধক করে উঠত। উত্তেজনায় আমি জোরে টান দিতাম, অনেক সময় তাড়াহুড়োয় মাছ ছুটে যেত। তখন বাবা হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন আর বলতেন, ধীরে করো, তবেই ধরা পড়বে।

যেদিন মাছ ধরা পড়ত, আমার আনন্দের সীমা থাকত না। রূপালি ছোট্ট মাছটা হাতে নিয়ে মনে হতো আমি যেন বড় কোনো পুরস্কার জিতেছি। কয়েক ঘণ্টা মাছ ধরার পর আমরা বাড়ি ফিরতাম, হাতে থাকত সামান্য কয়েকটি মাছ। কিন্তু সেই মাছের স্বাদ ছিল অনন্য,কারণ তাতে মিশে থাকত আমাদের একসাথে কাটানো সময়ের সুখ। মা সেই মাছ দিয়ে দুপুরের ভাত সাজিয়ে দিতেন, আর আমি গর্ব করে বলতাম, এগুলো কিন্তু আমি ধরেছি।

আজ যখন বড় হয়েছি, তখন বুঝতে পারি সেই সকালগুলো কেবল মাছ ধরা নয়,ও গুলো ছিল জীবন শেখার ক্লাস। ধৈর্য, ভালোবাসা, প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা সবই শিখেছি বাবার পাশে বসে বড়শি হাতে নিয়ে। এখনো কোথাও বাঁশের বড়শি দেখি বা কোনো পুকুরের জলে ভাসা দেখি, তখনই ফিরে যাই সেই শৈশবের ভোরে,যেখানে আমি আর বাবা, নিঃশব্দে বসে আছি, অপেক্ষা করছি জলের নিচের ছোট্ট এক অলৌকিক টানের জন্য।সেই স্মৃতিগুলো আমার জীবনের সেরা সম্পদ, যা সময়ের সাথে সাথে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

Zskj9C56UonWToSX8tGXNY8jeXKSedJ2aRhGRj6HDecqreqo2XAMzrcrFMezsQ2JYvnkCG8natanTeTWALXvA2X1jsqXD4Nf1w7BTTxEyx7JRMmmeNnz.png

ধন্যবাদ সকলকে✨💖

45GhBmKYa8LQ7FKvbgfn8zqd6W2YEX34pMmaoxBszxVcFZw7HFjCLMfDJx3zXx3jXPRfJr7otFtoRfKMmN9rJzpemZGKH1sKHrmfJREqyC...9xLrN7kkzEr3nKpRPcTj6NSZrBzYGbr93rAK2CAinZaxUP2fFhka9ZrPQeMBYoU2r2avcVEfb5m3uJAqvfZ4UMDVMeWvTdncVc9TonRvS2kneML5dvyoyUQZKC.png

ফোনের বিবরণ

ক্যামেরাস্যামসাং গ্যালাক্সি
ধরণগল্প ✨
মডেলএম-৩১
ক্যাপচার@alif111
অবস্থানসিরাজগঞ্জ -রাজশাহী- বাংলাদেশ।

banner-abbVD-1.png

আমার পরিচয়

IMG-20240117-WA0007.jpg
আমার নাম মোঃআলিফ আহমেদ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবাসি। আমি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের একজন ছাত্র। আমি ছোট বেলা থেকেই আর্ট করতে পছন্দ করি।তাই অংকন করতে আমার খুব ভালো লাগে।তাই আমি সময় পেলেই বিভিন্ন চিত্র অংকন করি।বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমন করতে ও ফটোগ্রাফি করতে আমার খুবি ভালো লাগে।🌼💖🌼

সবার প্রতি শুভেচ্ছা রইল এবং আমার পোস্টটি সমর্থনকারী সকল বন্ধুদের বিশেষ ধন্যবাদ।🌹🌻

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.