গল্প রাইটিং:- “অন্তর্দৃষ্টি” II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

Image created by AI Tools
ঐশ্বর্য ও মেঘনা একে অপরকে প্রথম দেখেছিল একটি বইমেলায়। মেঘনা, একজন হিন্দু তরুণী, যিনি রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। ঐশ্বর্য, একজন মুসলিম যুবক, যিনি কবিতা আর সাহিত্যকর্মে আগ্রহী ছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু সাধারণ দিক ছিল—ভালোবাসা বইয়ের প্রতি, সাহিত্য আর গীতিনাট্যের প্রতি—তবে তবুও ধর্মীয় পার্থক্য, জাতিগত বিভেদ সবকিছুই তাদের মাঝে একটি প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
বইমেলায় একটি নতুন বইয়ের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ছিল। ঐশ্বর্য এবং মেঘনা একসঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল, বই হাতে। দুইজনের চোখ মিটমিট করে একে অপরকে দেখে। প্রথমে কিছু হয়নি, কিন্তু একটি বইয়ের ফাঁকে, তাদের চোখে এক অবচেতন আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল।“আপনি কি এই বইটা পড়েছেন?” মেঘনা কেমন যেন সংকোচ নিয়ে ঐশ্বর্যকে জিজ্ঞেস করেছিল। “হ্যাঁ, দারুণ বই। সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে।” ঐশ্বর্য হাসিমুখে উত্তর দিলো।
এখানে প্রথমবার তাদের আলোচনার শুরু হয়েছিল, কিন্তু সেই আলোচনা কখনো থেমে ছিল না। একে অপরের মধ্যে কিছু ছিল, যা ভাষায় বলা যায় না। প্রতিদিন তাদের দেখা হতো, বইয়ের বিষয়ে আলোচনা চলতো, কখনো তারা আড্ডা দিতো, কখনো সেই আড্ডা ছিল রাত পর্যন্ত। তবে যেহেতু তারা দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষ, কিছু না কিছু বাধা ছিল। মেঘনার বাবা-মা কখনোই এক মুসলিম ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইতেন না। ঐশ্বর্যের পরিবারও একইভাবে ভাবতো। সম্পর্কের শুরুতে তারা জানতো, পরিবার কখনোই তাদের একে অপরকে গ্রহণ করবে না। কিন্তু সেই ভয়ে তাদের মধ্যে ভালোবাসা থেমে যায়নি।
একদিন, এক বিকেলে, যখন তারা দুজন মন্দিরের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, মেঘনা বলেছিল, “ঐশ্বর্য, তুমি জানো আমাদের ধর্মে রয়েছে অনেক পার্থক্য। কিন্তু আমি মনে করি, ভালোবাসা ধর্মের চেয়ে বড়।” ঐশ্বর্য সায় দিয়ে বলেছিল, “বিলকুল, ভালোবাসা আসলে মানুষের মধ্যে, ধর্ম নয়।”এটা ছিল তাদের সম্পর্কের জন্য একটা নতুন শুরুর সূচনা। ধর্মের বিভেদকে তারা উপেক্ষা করে একে অপরকে বুঝতে শুরু করেছিল। কিন্তু পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না। একদিন মেঘনার বাবা তাকে বলেছিলেন, “তোমার পিতামহের নামটা মনে রেখো। তুমি কখনোই ঐশ্বর্যের মতো মুসলিম ছেলের সাথে সম্পর্ক করতে পারো না।” এই কথাগুলো মেঘনার হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল। তাকে বারবার সেই তিক্ততার মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। অথচ তার মনের গভীরে সে জানতো, ঐশ্বর্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আসলে সত্যিকারের প্রেম। ঐশ্বর্যের পরিবারও তার সম্পর্ক নিয়ে খুব একটা খুশি ছিল না। একদিন, তার বাবা তাকে বলেছিল, “তুমি কি জানো, আমাদের সমাজে এই ধরনের সম্পর্ককে কখনোই গ্রহণ করা হবে না?” ঐশ্বর্য কিন্তু কিছুতেই পিছু হটছিল না। সে জানতো, সে যা অনুভব করছে, তা শুধুমাত্র সমাজের ধারাকে নয়, হৃদয়ের অধিকারকে বোঝাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, মেঘনা এবং ঐশ্বর্য নিজেদের মধ্যে দৃঢ় সংকল্প করে, একে অপরকে ভালোবাসার কারণে সমাজের চোখে বিচার না করার। তারা জানতো, সমাজ তাদের সম্পর্ককে ঘৃণা করতে পারে, কিন্তু তাদের হৃদয় কখনো ঘৃণা করবে না। একদিন, তারা একসঙ্গে নির্ধারণ করল, তাদের সম্পর্কের পথে এগিয়ে যেতে। ঐশ্বর্য বলেছিল, “আমরা একে অপরকে ভালোবাসি, মেঘনা। যদি আমাদের প্রেম এই সমাজে কোনো জায়গা না পায়, তবুও আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না।” মেঘনা চোখের পানি সামলাতে পারছিল না। “তুমি কি জানো, আমাদের সম্পর্ক কি চিরকাল আসলে ত্যাগ হবে?” ঐশ্বর্য গম্ভীর হয়ে বলেছিল, “আমাদের ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তা কখনোই হারাবে না।”
একদিন, তারা একসঙ্গে শহরের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল, যেখানে কোনো ব্যক্তি তাদের সম্পর্ক সম্পর্কে জানত না। ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে মেঘনাকে ডেকে বলেছিল, “আমরা যদি একে অপরের পাশে দাঁড়াই, ধর্মের বিভেদ বা সমাজের কোন বিচারই আমাদের আটকাতে পারবে না।” মেঘনা তার হাতে হাত রেখে উত্তর দিয়েছিল, “হ্যাঁ, ঐশ্বর্য। আমরা একে অপরের জন্য তৈরি।” ঐশ্বর্য ও মেঘনা তাদের সম্পর্ককে সামাজিক বাধার পরেও সত্যিই ধরে রেখেছিল। তাদের ভালোবাসা ধর্ম বা জাতিগত বিভেদের পরও একে অপরকে পেরিয়ে গেছে। তারা জানতো, এই পৃথিবীতে ভালোবাসার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হল একে অপরকে বুঝে নেওয়া এবং সীমারেখা অতিক্রম করে একে অপরকে গ্রহণ করা। ধর্ম বা জাতিগত বিভেদ কখনোই প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। শেষমেষ, তাদের সম্পর্ক ছিল এক উদাহরণ—ভালোবাসা কখনোই কোনো বাধাকে মেনে চলে না।
কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটি আপনাদের কাছে? জানার অপেক্ষায় রইলাম।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
