বন্ধুত্ব আর মানবিকতার গল্প: ‘একসাথে এক ভালো দিন’

আমাদের ছোট্ট শহর সিরাজগঞ্জে আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে একটা মানবিক কাজ করেছিলাম, যেটা আজও আমাদের মনে এক মিষ্টি স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। আমরা সবাই স্কুলজীবনের বন্ধু আমি, সাদি, জিহাদ, সাদাত আর রাফি। ক্লাস টেনে পড়ার সময় হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে ফিরে আড্ডা দিচ্ছিলাম মাঠে বসে। ঠিক তখনই এক ভিক্ষুক চাচা আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, “বাবারা, তিনদিন হলো ভালো করে খাইনি। যদি একটু সহায়তা করো…”

সোর্স

তাঁর মুখে ক্লান্তি আর চোখে যেন হাজার বছরের কষ্ট। আমরা পাঁচজন তখন নিজেদের পকেট হাতাতে লাগলাম। কেউ দিল ১০ টাকা, কেউ ২০, কেউ বা ৫ টাকা। সব মিলিয়ে ৬০ টাকার মতো হলো। পাশের হোটেল থেকে ভাত-ডাল-ডিম ভাজা কিনে আমরা চাচাকে খাওয়ালাম। তিনি অশ্রুসজল চোখে বললেন, “আল্লাহ তোদের ভালো করুক, বাবারা। অনেক শান্তি পেলাম।” তাঁর এই কথাগুলো আমাদের মন ছুঁয়ে গেল।সেদিন সন্ধ্যায় আমরা সবাই একসাথে বসলাম। আমি বললাম, “বন্ধুরা, আমরা চাইলে প্রতি মাসে একটা দিন এইভাবে অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করতে পারি না?” সবার চোখে ঝিলিক। রাফি বলল, “আইডিয়াটা দারুণ। চলো, শুরু করি।” আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, প্রতিমাসের শেষ শুক্রবার আমরা সবাই মিলে কিছু টাকাপয়সা জমিয়ে ৪-৫ জন মানুষকে খাবার খাওয়াবো। আমরা আমাদের ‘ভালো দিনের বন্ধু’ নামও ঠিক করে ফেললাম।

এরপর থেকে প্রতি মাসে আমরা সবাই যার যার থেকে ৫০ টাকা করে জমাতাম। কেউ টিউশন করে দিত, কেউ বাসায় সঞ্চয় করত, আবার কেউ টিফিনেরে টাকা থেকে।। টাকা জমে যেত ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সেই টাকায় আমরা হোটেল থেকে খিচুড়ি, মাংস আর পানির বোতল কিনে গরীব-অসহায় মানুষদের দিতাম। কেউ রিকশাওয়ালা, কেউ ফুটপাতে বসে থাকা বৃদ্ধা মা, কেউবা শিশু ভিক্ষুক। আমরা তাদের পাশে বসে খাবার দিতাম, হাসতাম, কথা বলতাম।একবার আমরা শহরের রেলস্টেশন এলাকায় গিয়ে ৮-১০ জন অসহায় মানুষের পাশে খাবার পৌঁছে দিয়েছিলাম। তখন এক বৃদ্ধা আমাদের মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলেন, “তোদের মায়েরা যেন তোদের জন্য গর্ব করে।” ওই একটুকু আশীর্বাদেই আমাদের চোখ ভিজে উঠেছিল।

এইভাবেই আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে বন্ধুত্ত্বের শক্তি আর মানবিকতার আলোয় গড়ে তুলেছিলাম একটুখানি ভালো দিন, শুধু নিজেদের জন্য নয়, অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে।মানবিকতা আসলে খুব সহজ। দরকার শুধু একটা সদিচ্ছা আর কয়েকজন বন্ধুর ভালোবাসা। তাহলেই গড়ে ওঠে ‘ভালো দিনের বন্ধু’দের মতো গল্প, যে গল্প সবাইকে বদলে দিতে পারে।

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। _{আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।}