টেলিভিশন - শৈশবের স্মৃতি।
হ্যালো বন্ধুরা।
আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন সবাই ? সবাইকে আমার আরও নতুন একটা পোস্টে স্বাগতম। আজকে কথা বলব নব্বইয়ের দশকের টেলিভিশন এবং বিটিভি চ্যানেল নিয়ে। এখন তো ঘরে ঘরে টিভি। আর বিটিভি চ্যানেলকে সবাই এখন বাতাবিলেবু চ্যানেল বলে জানে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এগুলোর অবস্থা কেমন ছিল??
আমি তখন ক্লাস ওয়ান কিংবা টু তে পড়তাম। আমার খুব ভালোভাবেই মনে আছে । আমাদের গ্রামে তখন হাতেগোনা দু-একটা টিভি ছিল। তবে সেগুলো সাধারন কেউ যেয়ে দেখতে পারত না। বড়লোক বাড়ির টিভি, ওখানে সবার যাওয়ার অনুমতি ছিল না। একদিন সকালে আমি খেয়াল করলাম আমাদের বাড়িতে মামা এসেছে। তো এরপর আমি যখন ঘরে ঢুকলাম তখন দেখি আব্বু, মামা, আম্মু সবাই বসে টাকা গুনছে। ওখানে খুচরা টাকা ছিল অনেক। হয়তো আব্বু জমিয়েছিল মাটির ব্যাংকে। সব টাকা মিলিয়ে প্রায় এক ব্যাগ মত টাকা হবে। খুচরা টাকা অনেক ছিল তো এই জন্য । আব্বু মামাকে কাজ দিয়েছিল সেই খুচরা টাকা গুলো বাজারে গিয়ে নোট করে আনতে। এতো টাকা একসাথে দেখে আমি বুঝতেছিলাম না কেন এত টাকা এক জায়গায় গুনা হচ্ছে। পরে জানতে পারলাম আমাদের টিভি কেনা হবে। আমার খুশি দেখে কে। আমি এতই খুশি হয়েছিলাম যা বলে বোঝানোর বাইরে।
image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY
ঠিক দু-তিন দিন পর দেখলাম আব্বু একটা ২১ ইঞ্চি কালার টেলিভিশন কিনে নিয়ে আসলো। আমাদের এলাকায় কালার টেলিভিশন মনে হয় আমাদের প্রথম কেনা হয়েছিল। টিভি কেনার পর কি আনন্দ!! সবাই শুধুমাত্র টিভি দেখতে আসতেছিল আমাদের বাড়িতে। আমাদের একটা রুম ছিল, ওই রুমে কেউ থাকত না৷ শুধু টিভি রাখা হয়েছিল। ওই সময় তো ডিসের লাইন বা ইন্টারনেটে কিছুই ছিলনা। তখন অ্যান্টেনা লাগিয়ে বিটিভি দেখতে হতো। বিটিভি ই ছিল তখন একমাত্র বিনোদনের উৎস। সম্ভবত প্রতি বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার বিটিভিতে বাংলা সিনেমা হত। আর শুক্রবার রাতে আলিফ লায়লা হত।
আমার একদম স্পষ্ট মনে আছে, একদিন দুপুর বেলা যেদিন বিটিভিতে মুভি হত ঐদিন আমাদের বাড়ীতে এত মানুষ এসেছিল যে আমাদের রুমে পা ফেলার জায়গা ছিল না। সবাই মুভি দেখার দিন, আর আলিফ লায়লা দেখার সময় আমাদের বাড়িতে চলে আসত। দুপুরবেলা আম্মু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিল। আর আমি রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে টিভি দেখছিলাম। রুমের মধ্যে যেতে পারতেছিলাম না কারণ ভিতরে অনেক মানুষ ছিল। এ বিষয়টা আমার দারুণ মজা লাগত। যখন বাড়ি ভর্তি মানুষজন থাকত তখন বেশ আনন্দ পেতাম।
আলিফ লায়লা শুরু হতো সম্ভবত রাত আটটায়। রাত আটটার আগে মানুষজন চলে আসতো আমাদের বাড়িতে। সারা সপ্তাহ অপেক্ষায় থাকতাম এ আলিফ-লায়লার জন্য। প্রত্যেক বৃহস্পতি এবং শুক্রবার দুপুর এবং শুক্রবার রাতে আলিফ লায়লার সময় আমাদের বাড়িটা অনুষ্ঠানের মত লোকজনে ভরপুর থাকতো। আমার বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে এক্সট্রা প্রায়োরিটি পেতাম বাইরে গেলে। হিহিহিহি। যাইহোক, ওই সময় আরও একটা অনুষ্ঠান ছিল সেটা হচ্ছে মিনা রাজুর কার্টুন। আমার ভীষণ প্রিয় ছিল। মিনা রাজু কার্টুন আমি কখনোই মিস করতাম না। প্রত্যেকটা পর্বই দেখতাম। একটি পর্ব একাধিকবার চালাত। এইজন্য একবার দেখা মিস গেলে সময় পেলে পরে দেখে নিতে পারতাম।
কয়েক বছর পর আমাদের বাড়ির পাশের এক চাচা সাদাকালো টিভি কিনেছিল। আমার মনে আছে একদিন স্কুল চলাকালীন সময়ে আমি স্কুলে না গিয়ে চাচাদের বাড়িতে গিয়ে দেয়ালের উপর দাঁড়িয়ে মিনা রাজু কার্টুন দেখতেছিলাম। কারণ বাড়িতে গেলে তো সমস্যা, পিটাবে ধরে। তো আমি ওখানে দাঁড়িয়ে কার্টুন দেখছিলাম আর চাচাতো ভাইয়ের সাথে মিনা রাজু কার্টুন নিয়ে গল্প করছিলাম। হঠাৎ স্কুলের স্যার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে দেখে ফেলেছিল। আমাকে বলছিল স্কুলে না গিয়ে টিভি দেখা ?? স্কুলে আয় খবর আছে।
সত্যি দিনগুলো অনেক সুন্দর ছিল। এখন কত আধুনিক টিভি, ইন্টারনেট সবকিছু কত সহজ লভ্য। বিনোদনের অনেক মাধ্যম আছে এখন। কিন্তু ওই দিনগুলো জীবনের গোল্ডেন ফ্রেমে বাঁধানো। একটা মজার ঘটনা কি জানেন আমাদের ওই টিভিটা এখনো ভালো আছে। আমাদের বাড়িতে নতুন আর কোন টিভি কেনা হয়নি পরে। টিভি দেখাই হয়না তেমন। কনকা ব্রান্ডের সেই ২১ ইঞ্চি কালার টেলিভিশনটি এখনো চলছে। আর ধরে রেখেছে আমার শৈশবের এক গুচ্ছ স্মৃতি।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

৯০ দশকের সেই দিনগুলো ছিল গোল্ডেন ডে। তখন মানুষের মাঝে একটা ভ্রাতৃত্ব বন্ধন, আত্মীয়তার বন্ধন, প্রতিবেশীর বন্ধন ছিল অটুট। আজকাল তো আর কেউ কারো দিকে তাকায় না। কেউ কারো বাসা বাড়িতে যায় না। অনেকে স্বজনদেরও খোঁজখবর নেয় না। সত্যি ৯০ দশকের সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সোনালী অতীতকে মনে করিয়ে দিলেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
Hi, @rex-sumon,
Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.
Please consider voting for our witness, setting us as a proxy,
or delegate to @ecosynthesizer to earn 100% of the curation rewards!
3000SP | 4000SP | 5000SP | 10000SP | 100000SP
এউ সৃতি গুলো সত্যি অনেক দারুন ভাইয়া।আমারো বেশ মনে আছে ২০০৭-৮ সালে আমার বাবা একটা সাদা কালো টেলিভিশন কিনেছিল যেটা নিয়ে আমরা সবাই মেতে থাকতাম।সিসিমপুর,মিনা,আলিফ লাইয়লা,আর প্রতি বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার তো থাকছেই বাড়ি টা যেনো মনে হতো কয়েক ঘনটার জন্য সিনেমা হল।অসম্ভব দারুন ছিল শৈশব টা।মিস করি খুব।
নব্বইয়ের দশকের টেলিভিশন নিয়ে আমার ও অনেক স্মৃতি রয়েছে। তবে তার মধ্যে কিছু স্মৃতি আপনি এখানে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে আলিফ লায়লা মিনা কার্টুন আরো কিছু ব্যাপার। এটা সত্য বলেছেন তখন কারো ঘরে যদি একটা টিভি থাকতো, দূর দুরান্ত থেকে ও লোক আসতো সেখানে টিভি দেখার জন্য। আমাদের ঘরেও তেমন একটি টেলিভিশন ছিল এবং রাত্রে যখন ব্যাটারি ভাড়া করে নিয়ে আসতো আলিফ লায়লা দেখার জন্য তখন টিভিটি উঠোনে লাগানো হতো। যাতে করে সবাই একসাথে দেখতে পারে। যাইহোক অনেক বাস্তবতা নিয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ধন্যবাদ।
বিটিভি চ্যানেলকে সবাই এখন বাতাবিলেবু চ্যানেল বলে জানে এই কথা অনেক ভালো লেগেছে। আপনার বাসার টিভি কেনার সাথে আমাদের বাসার টিভি কেনার কিছুটা মিল আছে। আমাদের বাসায় ও আসে পাশে মানুষ টিভি দেখতে আসতো। আপনার পোস্টটি পড়ে আগের দিন গুলোর কথা মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া এতো সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
ভাইয়া আপনার পুরো কাহিনী কি পড়ে মনের অজান্তেই আমার চোখের কোনে পানি চলে এসেছে। আপনার শৈশবের স্মৃতিগুলো যেন আমার মত একই সূত্রে গাথা। ভাইয়া আপনার মত আমারও সেই সনি কোম্পানির টেলিভিশন এখনো আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমরা এখনো বাতাবি লেবুর চ্যানেলটাই দেখি হাহাহা।😆😆 পৃথিবী যতই আধুনিক হোক না কেন সেই আনন্দ গুলো এখন আর নেই। শৈশবের সেই স্মৃতি চুরি করে টিভি দেখা, সবাই একসাথে এক ঘরে টিভি দেখা, মিনা কার্টুন দেখা, আলিফ লায়লা দেখা, এবং বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারে বাংলা ছায়াছবির জন্য অপেক্ষা করা এর চেয়ে স্মৃতিমধুর আর কি হতে পারে।
ছোটবেলার সব স্মৃতি গুলো একবারে মনে করিয়ে দিলেন ভাইয়া। আগেকার দিনে একটা চ্যানেল থাকলেও সেই চ্যানেল দেখার যে কি আনন্দ ছিল তা এখনকার দিনে হাজার চ্যানেলের মাঝেও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। আগে যখন গ্রামের বাড়িতে যেতাম তখন দেখা যেত যে শুক্র শনিবার সিনেমা দেখার সময় পুরো রুম ভর্তি হয়ে যেত। পা ফেলার জায়গা থাকতো না। আপনার মতো আলিফ লায়লা মিনা কার্টুন আমারও পছন্দের ছিল । যদি দূরে কোথাও মিনা কার্টুনের গান শুনতাম তখন দৌড়ে বাসায় এসে টিভি চালিয়ে দেখতাম যে মিনা কার্টুন শেষ হয়ে গিয়েছে। আসলে সেই সব স্মৃতি বলে শেষ করা সম্ভব নয়।
আপনার পোস্ট পড়তে পড়তে আমার গা ছমছম করছিল কারন আমার অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছেন। আমি জানিনা কোইন্সিডেন্স নাকি সবার বেলা একই অবস্থা যে, আপনার টিভি নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো প্রায় ৮০ ভাগ আমার সাথে মিলে গিয়েছে। পয়সা থেকে টাকায় রুপান্তর করে আপনার আব্বুর টিভি কিনার ঘটনাটা আমার খুব মজা লেগেছে। আমাদের কাঠের ফ্রেমের ভেতরে কাঠের বডির টিভি ছিল তাও সেই নব্বই এর দশকে। কত মানুষ শুক্রবার ভীড় জমাত। আলিফ লাইলা, মীনা-রাজু কার্টুন তখন দেখে নাই এমন লোক কম পাওয়া যাবে। আপনি মানুষের ভীড়ের জন্য নিজের বাসায় আরেক রুম থেকে টিভি দেখছিলেন শুনে খুব হাসি পাচ্ছিল। ধন্যবাদ ভাই।
সত্যি ভাইয়া শৈশবের সোনালী দিনগুলো এখনো খুবই মনে পড়ে। আমার এখনো মনে পড়ে সেই বিটিভির সিনেমা দেখার কথা। যেদিন সিনেমা থাকতো সেদিন সিনেমা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগে থেকেই যে যার জায়গা দখল করে বসে থাকতো। ঘরের মধ্যে ঢোকার মত জায়গা থাকতো না। সেই টিভিটি এখনো আছে বাসায়। তবে দেখা হয় না। সেই সময় মানুষ এই টিভির সিনেমার মাঝে এবং আলিফ লায়লার মাঝে অনেক বিনোদন খুঁজে নিতো। সত্যি সেই সময়গুলো অনেক মধুর ছিল। তবে বর্তমানে সবকিছু উন্নত হয়েছে তাই এখন আর কোন কিছুই হৃদয়ে ছোঁয়া লাগেনা। প্রতি সপ্তাহে অপেক্ষায় থাকতাম আলিফ লায়লা দেখার জন্য। আর মিনা কার্টুন আমার খুবই প্রিয় ছিল। তবে এখন আর কেন জানি কোন কিছুই আর প্রিয় হয়ে ওঠে না। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া শৈশবের মধুর স্মৃতি শেয়ার করার জন্য।
ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে সত্যি অনেক ভালো লেগেছে। শৈশবের স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গেল। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে মুভি দেখার জন্য লোকের ভিরে ঘরে ঢুকতে পারছিলেন না সেটা একটা আনন্দের বিষয় ছিল। আপনি যে স্কুল ফাঁকি দিয়ে চাচার বাসায় মিনার কার্টুন দেখতে গিয়ে স্যারের হাতে ধরা খেয়েছেন ব্যাপার টা দারুণ মজার তাই না ভাইয়া। পৃথিবী যতই আধুনিক হোক না কেন শৈশবের সেই স্মৃতি গুলো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।সত্যিই শৈশবের স্মৃতি আনন্দময় ছিল। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।