ট্রাভেল পোস্ট-ইলিশ ভাজা খেতে মাওয়া ঘাটে
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। প্রতি সপ্তাহের মত আজও আমি একটি ভ্রমণ পোস্ট নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার ভ্রমণ পোস্ট দেখে আসি কেমন হয়েছে।

বেশ কিছুদিন আগের কথা। এক বিকেলে আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম একটু ঘুরে আসব মাওয়া ঘাট থেকে। অনেকে বলে সেখানে গেলে ইলিশ মাছ না খেলে ঘোরাটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই আমাদের উদ্দেশ্য শুধু ঘোরা নয়, বরং ইলিশ মাছের আসল স্বাদটা উপভোগ করা।

সেদিন সকালটা ছিল বেশ মেঘলা, কিন্তু মনটা ছিল রোদ ঝলমলে। সবাই মিলে হাসাহাসি করতে করতে গাড়িতে উঠলাম। শহরের কোলাহল পেছনে ফেলে যখন আমরা ধীরে ধীরে নদীর কাছাকাছি পৌঁছাতে লাগলাম, বাতাসে এক ধরনের ভেজা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পদ্মার পানি তখন একটু ঘোলা, কিন্তু তার মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত টান। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল নদীর ওপরে ভেসে থাকা নৌকা, তাদের উপরে উড়ছে সাদা সাদা বক।

মাওয়া ঘাটে পৌঁছানো মাত্রই মনে হলো যেন অন্য এক জগতে চলে এসেছি। চারপাশে মানুষজনের ভিড়, নদীর পাড়ে দোল খাচ্ছে ছোট ছোট ট্রলার, আর বাতাসে মিশে আছে ইলিশ ভাজার গন্ধ। ঘাটের পাশে বিশাল এক মাঠের মতো জায়গা, সেখানে সারি সারি দোকান। প্রত্যেক দোকানের সামনে ধোঁয়া উড়ছে, কেউ ভাজছে মাছ, কেউ গরম ভাত পরিবেশন করছে। আমরা সবাই হাঁটতে হাঁটতে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঢুঁ মারছিলাম।

এদিকে দোকানদাররাও বসে নেই। কেউ কেউ দোকান থেকে বের হয়ে আমাদের দিকে ছুটে আসছে। কেউ বলছে ভাই এখানে আসেন, আমাদের মাছটা একবার চেখে দেখেন। কেউ আবার হাসিমুখে প্রায় জোর করে আমাদের টেনে বসিয়ে ফেলছে। আমরা তো হাসতে হাসতেই মরে যাচ্ছি। এক দোকানদার তো বলেই ফেলল, আপনি যদি আমার দোকানে না খান তাহলে মাওয়া আসা বৃথা।

আমরা তখন ভাবছি, কোন দোকানে যাব, সবাই তো এমন আন্তরিক আচরণ করছে। এক দোকান থেকে আরেক দোকান, প্রতিটিতেই গন্ধে মন মাতোয়ারা হয়ে যাচ্ছে। শেষমেশ ঠিক করলাম, যেখানে সবাইকে সবচেয়ে বেশি হাসিখুশি লাগছে, সেখানেই বসব। এক দোকানে ঢুকে দেখি, কাঠের বেঞ্চিতে লোকজন বসে খাচ্ছে, পাশে বড় কড়াইতে গরম তেলে ভাজা হচ্ছে রুপালি ইলিশ। মাছের তাজা ঘ্রাণ যেন মনটাকে আরও ক্ষুধার্ত করে তুলল।

আমরা সবাই বসে পড়লাম, সাথে সাথে এল গরম ভাত, লেবু, মরিচ আর কাঁচা পেঁয়াজ। তারপর এল সেই প্রতীক্ষিত ইলিশ মাছ ভাজা। গরম গরম মাছ মুখে দিতেই মনে হলো এই তো আসল আনন্দ। মাছটা এমন নরম, এমন সুগন্ধি যে মনে হচ্ছিল নদীর জলের স্বাদই যেন তাতে মিশে আছে। আমরা সবাই খেতে খেতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলাম। কেউ বলল এই মাছের স্বাদ জীবনে ভুলব না, কেউ আবার মজা করে বলল, এমন স্বাদ শহরে পেলে দাম দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে যেতাম।তবে সত্যিই মাছের দাম ছিল একটু চড়া। একেকটা ইলিশের দাম শুনে প্রথমে আমরা একটু অবাক হয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল দামটা যেন মাছের সঙ্গে নদীর হাওয়াও বিক্রি করছে। কিন্তু তারপরও খেতে শুরু করার পর আর কেউ দাম নিয়ে ভাবেনি। কারণ একবার যে এই স্বাদ মুখে নেয়, সে বুঝে যায় কেন এত দাম নেওয়া হয়।

খাওয়া শেষে আমরা ঘাটের ধারে গিয়ে বসে পড়লাম। সূর্য তখন ঢলে পড়ছে, আকাশে কমলা আভা ছড়িয়ে আছে। নদীর পানি সেই রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। হালকা বাতাসে চুল উড়ছে, সামনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছে ছোট নৌকা। কেউ গান গাইছে, কেউ ছবি তুলছে। আমাদের মধ্যে কেউ একজন বলল, জীবনের আসল শান্তি এই মুহূর্তেই আছে। সত্যিই, এত সহজ একটা বিকেলও কতটা সুখ এনে দিতে পারে তা আগে বুঝিনি। পাশে বসা এক বৃদ্ধ বললেন, তোমরা তো শুধু আজ এলেছ, আমরা তো প্রতিদিন এই নদীর সঙ্গে বাঁচি। আমাদের জীবনের প্রতিটা সকাল শুরু হয় এই জলে, আর শেষ হয় ইলিশের গন্ধে। তার কথা শুনে মনে হলো, প্রকৃতি আর মানুষ এখানে একে অপরের সঙ্গে কত গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
আমরা কিছুক্ষণ পর হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম পদ্মা সেতুর দিকে। দূর থেকে দেখা গেল, আলো ঝলমল করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল সেতুটি। পাশে নদীর ঢেউ আছড়ে পড়ছে ঘাটে। সবকিছু এত শান্ত, এত নিস্তব্ধ যে মনে হচ্ছিল সময় থেমে গেছে। সেই মুহূর্তে মনে হলো, শহরের যত ক্লান্তি, যত দুশ্চিন্তা সব যেন মিলিয়ে গেল এই পদ্মার হাওয়ায়।

রাত নামার আগে আমরা ফেরার প্রস্তুতি নিলাম। দোকানগুলোতে তখনও মানুষের ভিড়, ধোঁয়া উঠছে, কেউ হাসছে, কেউ গল্প করছে। গাড়িতে উঠেই আমরা সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। কেউ বলল, পরেরবার আবার আসব, তবে এবার আরও বড় দলে। আমি জানি, সেই দিনটা আসবে খুব শিগগিরই। কারণ মাওয়া ঘাট মানেই শুধু নদী নয়, শুধু ইলিশ নয়, বরং এক টুকরো আনন্দ, এক চিমটি স্মৃতি আর মন ভরানো প্রকৃতি। ফেরার পথে গাড়ির জানালা দিয়ে যখন শেষবারের মতো পদ্মার দিকে তাকালাম, তখন মনে হলো নদী যেন বিদায় জানাচ্ছে। হয়তো বলছে, আবার এসো, আবার হাসো, আবার আমার জলে ডুবে যাও জীবনের আনন্দে।

সেদিনের সেই বিকেল, সেই ইলিশের গন্ধ আর সেই নির্ভেজাল হাসি আজও মনে পড়লে মনটা হালকা হয়ে যায়। জীবনের সব জটিলতার মাঝেও এমন কিছু মুহূর্ত থাকে যা আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়, আনন্দ মানে আসলে খুব বেশি কিছু নয়। একটু নদীর হাওয়া, একটু প্রিয় মুখ, আর একটা ভাজা ইলিশই যথেষ্ট পুরো দিনটাকে সুন্দর করে তুলতে।

কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের শেয়ার করা ভ্রমণ পোস্ট। আশা করবো আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
আমার পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা । আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অরেনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুনি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।



Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟
ইলিশ ভাজা খেতে মাওয়া ঘাটে চলে গিয়েছিলেন জেনে ভালো লাগলো আপু। দাম বেশি হলেও সবাই ইলিশ ভাজা খেতে মাওয়া ঘাটে যায়। কারণ এই খাবারের স্বাদ অতুলনীয়।