ট্রাভেল পোস্ট- "বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন গ্যালারী ভ্রমন"

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। প্রতি সপ্তাহের মত আজও আমি একটি ভ্রমণ পোস্ট নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার ভ্রমণ পোস্ট দেখে আসি কেমন হয়েছে।

ভ্রমণ সবসময়ই মনকে প্রফুল্ল করে। আর যদি গন্তব্য হয় বাংলার তাজমহলের মতো এক আকর্ষণীয় স্থান, তবে সেই অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে আরও বিশেষ। কয়েকদিন আগে আপুর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম। ঘুরতে গিয়েছিলাম প্রকৃতির মাঝে।যাতে করে প্রকৃতির ভালোবাসায় একটু প্রাণ খুঁজে পাই। তবে সেদিন এমন সুন্দর প্রকৃতি দেখে আমি নিজেও বেশ মুগ্ধ ছিলাম। যার জন্য আজ তার কিছু আনন্দ আপনাদের মাঝে ভাগ করে নিতে চলে আসলাম। মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে গেলে কিন্তু মন্দ হয় না । কারন কোথাও ঘুরতে গেলে মনের সাথে সাথে দেহেও ফিরে আমে প্রাণ চঞ্চলতা আর সতেজতা। তাই তো মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে চেষ্টা করি। আর এই কারনেই মাঝে মাঝে চেষ্টা করি একটু ঘুরে বেড়াতে।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আমাদের দেশের একটি বড় ভাণ্ডার। এখানে ঢুকলেই মনে হয়, যেন আমরা ইতিহাসের ভেতরে চলে গেছি। আমি একদিন সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম। নানা গ্যালারি ঘুরে একসময় আমি পৌঁছালাম এক জায়গায়, যেখানে শুধু দুর্ভিক্ষের ছবি সাজানো ছিল। অন্য জায়গায় কৃষক, নদী বা গ্রাম্য দৃশ্য থাকে, কিন্তু এখানে সব ছবিতেই কেবল দুর্ভিক্ষ আর মানুষের কষ্টের চিত্র।

WhatsApp Image 2025-08-30 at 23.52.38_383ea87a.jpg

প্রথমে আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। এত কষ্টের ছবি একসাথে আগে কখনো দেখিনি। দেয়ালের চারপাশে বড় বড় ক্যানভাসে মানুষগুলো যেন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের শুকনো মুখ, কঙ্কালসার দেহ, ফাঁকা চোখ—সবকিছু দেখে বুকের ভেতরটা হঠাৎ ভারী হয়ে উঠল। আমি অনেক সময় বইতে পড়েছি ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষের কথা। কিন্তু বইয়ের পাতায় পড়া আর চোখের সামনে ছবি দেখা—দুইটা ব্যাপার এক না। ছবিতে মানুষগুলোকে এতটা কষ্টে, এতটা অসহায় অবস্থায় দেখে আমি বুঝলাম, এই ইতিহাস আমাদের জাতির জন্য কত বড় একটা আঘাত ছিল।

WhatsApp Image 2025-08-30 at 23.52.39_56f4bac1.jpg

কোথাও দেখা গেল মা তার বাচ্চাকে কোলে নিয়েছে, কিন্তু তার কোলে থাকা শিশুটি আসলে মৃত। মায়ের চোখে পানি নেই, মুখে কোনো শব্দ নেই। যেন সে কান্না করার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে।কোথাও দেখা গেল এক বৃদ্ধ লোক রাস্তায় বসে আছে। তার শরীরে হাড় ছাড়া কিছুই নেই। পাশেই একটি কুকুর বসে আছে, কিন্তু বৃদ্ধ মানুষটির কোনো খাবার নেই যে কুকুরের সাথে ভাগ করবে।কোথাও দেখা গেল একটা লম্বা লাইন—মানুষ ভাতের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কারও শরীরের কাপড় নেই, কারও চোখে জীবনের আলো নেই। শুধু দাঁড়িয়ে আছে, হয়তো একটু ভাত পাবে এই আশায়।এই ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, আমি যেন সেই সময়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমি যেন সেই মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি, অথচ কোনো সাহায্য করতে পারছি না।

WhatsApp Image 2025-08-30 at 23.52.39_b8ed2e66.jpg

আমি ভেতরে ভেতরে খুব অস্বস্তি পাচ্ছিলাম। মাথায় ঘুরছিল, এই মানুষগুলো তো আমাদেরই পূর্বপুরুষ। হয়তো আমার দাদার দাদার সময়ে তারা বেঁচে ছিলেন। তারা না বাঁচলে আমরা আজ বেঁচে থাকতাম না।আমি আবার ভাবলাম, আমরা আজকাল খাবার নষ্ট করি কত সহজে। প্লেটে ভাত বেঁচে থাকে, আমরা ফেলে দেই। রেস্টুরেন্টে গিয়ে অর্ডার দিই, অনেক সময় শেষ করি না। অথচ একসময় এই বাংলার মানুষ ভাতের জন্য কাঁদত, অনেকে ভাত না পেয়ে রাস্তায় মারা যেত।এই ছবিগুলো দেখে আমি বুঝলাম, আমাদের জীবনের প্রতিটি দানা ভাত আসলে কত দামী। আমরা সেটা টের পাই না, কারণ আমরা কখনো দুর্ভিক্ষের দিনগুলো দেখিনি।

WhatsApp Image 2025-08-30 at 23.52.39_f1adae4d.jpg

বাংলার দুর্ভিক্ষ শুধু খাবারের অভাবে হয়নি। ইতিহাস বলে, তখন যুদ্ধ চলছিল, ব্রিটিশ শাসকেরা চাল জব্দ করত, ব্যবসায়ীরা মজুত করত। একদিকে বন্যা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে শাসকের অবহেলা—সব মিলিয়ে মানুষ ভাত পেত না।কোনো দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো ক্ষুধা। ক্ষুধা এমন এক জিনিস, যা মানুষকে ভেতর থেকে শেষ করে দেয়। আমি সেই ছবিগুলো দেখে অনুভব করলাম, ক্ষুধা শুধু শরীরকে কষ্ট দেয় না, মনের শক্তিও ভেঙে দেয়।

WhatsApp Image 2025-08-30 at 23.52.39_5aefc816.jpg

গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, যেন দেয়ালের মানুষগুলো আমাকে দেখছে। তাদের চোখ ফাঁকা, কিন্তু তাতে ছিল একধরনের প্রশ্ন। তারা যেন বলতে চাইছিল—“আমাদের কষ্ট কি তোমরা মনে রেখেছ?”আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল, উত্তর দেওয়ার মতো কোনো শব্দ আমার নেই। শুধু মনে হচ্ছিল, এই ছবিগুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে—আমরা যেন কখনো এই ইতিহাস ভুলে না যাই।

WhatsApp Image 2025-08-30 at 23.52.40_33fd26aa.jpg

আজকের দিনে আমরা বাজারে গেলে কত রকম খাবার পাই—চাল, ডাল, মাংস, মাছ, সবকিছু সহজে পাওয়া যায়। কিন্তু সেদিনের মানুষেরা এতকিছু কল্পনাও করতে পারত না।আমরা এখনো মাঝে মাঝে খবর শুনি—কোথাও বন্যা হলে মানুষ খাবারের কষ্টে পড়ে। আবার গরিব মানুষেরা অনেক সময় এক বেলা ভাত জোগাড় করতেও পারে না। তখন মনে হয়, দুর্ভিক্ষ পুরোপুরি শেষ হয়নি। শুধু রূপ পাল্টেছে।

WhatsApp Image 2025-08-30 at 23.52.40_faef42d9.jpg

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে দুর্ভিক্ষের ছবিগুলো শুধু শিল্প নয়, এগুলো ইতিহাস। এগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কত কষ্টের মধ্য দিয়ে আজকের দিনে এসেছি।আমি যখন সেই গ্যালারিটা থেকে বের হচ্ছিলাম, তখন আমার মনে হচ্ছিল, এই অভিজ্ঞতা কোনোদিন ভুলতে পারব না। আমার চোখে ভেসে উঠছিল শুকনো মুখগুলো, মায়েদের শূন্য দৃষ্টি, শিশুদের কঙ্কালসার শরীর।আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, আজ থেকে আর খাবার নষ্ট করব না। গরিব মানুষ দেখলে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করব। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমি এই ইতিহাস আমার নিজের মতো করে অন্যদেরও বলব, যেন সবাই জানে—বাংলার মানুষ একসময় কতটা কষ্ট সহ্য করেছিল।

কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের শেয়ার করা ভ্রমণ পোস্ট। আশা করবো আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।

আমার পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা । আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অরেনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুনি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

1000028235.png

1000028233.gif

image.png

Sort:  
 3 days ago 

শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদীন অনেক দক্ষ এবং প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন৷ তার অনেক কিছুই আমার পছন্দ৷ আর আজকে যেভাবে আপনি এখানে জাদুঘরের মধ্যে তার গ্যালারি ভ্রমণ করেছেন তা দেখে অনেক বেশি ভালো লাগছে৷ এখানে তারা আঁকা ছবিগুলো আপনি খুবই সুন্দরভাবে উপভোগ করেছেন৷ এটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন৷ যা দেখে অনেক বেশি ভালো লাগছে৷ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য৷