ট্রাভেল পোস্ট- "মাওয়াঘাট ও পদ্মার পাড় ভ্রমনের ১০ম পর্ব " II written by @maksudakawsarII

in আমার বাংলা ব্লগ9 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি নতুন এটি ব্লগ নিয়ে হাজির হলাম। আজকে আমার ব্লগের বিষয় হলো ভ্রমণ। আসলে ভ্রমণ গুলোকে আমি ব্লগের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারলে ভীষণ ভালো লাগে। তাই আমি চেষ্টা করি সপ্তাহে কমপক্ষে ভ্রমণের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ভ্রমণের পোস্টগুলো শেয়ার করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি আশা করি আপনাদের সবার আজকের পোস্টে অনেক বেশি ভালো লাগবে। নিচে আমার ভ্রমণের পোস্টটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করা হলো। কেমন হয়েছে তা অবশ্যই জানাবেন।‍

Add a heading (3).png

মাওয়া ঘাটের সেই দিনের কথা মনে পড়লে আজও মনে হয় চোখের সামনে সবকিছু যেন ভেসে উঠছে। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই তখন মাছ কেনার আনন্দে ভেসে যাচ্ছি। মাছ কেনা শেষ হয়ে গেলে দোকানদার আমাদের হাসিমুখে বলল, চাইলে এখানেই মাছ কেটে ভেজে দেওয়া যাবে। কথাটা শুনেই আমরা ভীষণ খুশি হলাম। বাজারের কোলাহল আর নদীর হাওয়া মিলেমিশে তখন এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করেছিল। চারপাশে এত শব্দ, মানুষের ভিড়, হাঁকডাক, অথচ আমাদের মন তখন শুধু একটাই বিষয়ে আটকে ছিল—কিভাবে কাটবে মাছ, কেমন হবে তার টুকরোগুলো, আর তারপরে বেগুন ভাজার স্বাদ কেমন লাগবে।

WhatsApp Image 2025-08-27 at 00.59.13_14302702.jpg

আমরা সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম দোকানের সামনে। দোকানদার মাছের ঝুড়ি থেকে আমাদের কেনা ইলিশ তুলে নিল। হাতের মধ্যে চকচক করা রুপালি মাছগুলো দেখতে কত সুন্দর লাগছিল। সূর্যের আলোয় মাছের গায়ে যে ঝিকমিক করছিল, তা যেন চোখে লেগে থাকছিল। দোকানদার দক্ষ হাতে মাছের আঁশ তুলে ফেলল, তারপর ধারালো ছুরি দিয়ে মাছ কেটে ফেলা শুরু করল। ছুরির শব্দ, টুকরো হওয়ার দৃশ্য—সবকিছু যেন মুহূর্তকে আরও বাস্তব করে তুলছিল। আমরা নিঃশ্বাস আটকে দেখছিলাম প্রতিটি টুকরো কীভাবে আলাদা হচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছিল, একটু পরেই এই মাছ টুকরো হয়ে ভাজা হবে, তার গন্ধে চারপাশ ভরে যাবে।

WhatsApp Image 2025-08-27 at 00.56.14_907ded20.jpg

এদিকে বাজারে আসা মানুষের ভিড়ও উপেক্ষা করার মতো ছিল না। কেউ মাছ কিনছে, কেউ দামাদামি করছে, কেউ আবার শুধু দাঁড়িয়ে দেখছে। ছোট ছোট ছেলেরা চায়ের দোকানে দৌড়ে যাচ্ছে, কেউ বা আইসক্রিম হাতে ফিরে আসছে। সব মিলিয়ে এক রঙিন পরিবেশ। আমরা দাঁড়িয়ে থেকেও যেন বাজারের সেই প্রাণচাঞ্চল্যের অংশ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দৃষ্টি বারবার ফিরে যাচ্ছিল সেই কাটা মাছ আর দোকানদারের দিকে। মাছ কাটা শেষ হওয়ার পর দোকানদার পাশে রাখা বড়ো কড়াইতে তেল ঢালল। তেলের টুকটুক শব্দে আমাদের মন আরও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। আমরা যেন আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। ঠিক তখনই দোকানদার বলল, মাছ ভাজার আগে বেগুন ভেজে দেওয়া হবে। কথাটা শুনে কারো কারো মুখে মুচকি হাসি ফুটল। বেগুন ভাজার নাম শুনলেই আমার মনে এক ধরনের নরম স্বাদ ভেসে ওঠে। শীতল দুপুরের বাজারের ভেতর হঠাৎ করে বেগুন ভাজার গন্ধ কল্পনা করেই জিভে জল চলে আসছিল।

WhatsApp Image 2025-08-27 at 00.56.16_b1c5641b.jpg

দোকানদার বড়ো বড়ো বেগুন গোল গোল করে কেটে নিল। প্রতিটি টুকরো সুন্দরভাবে এক রকম মাপে কাটা হলো। তারপর একে একে সেগুলো কড়াইয়ের ফুটন্ত তেলের মধ্যে ছাড়ল। মুহূর্তের মধ্যেই কড়াই থেকে চিকচিক শব্দ উঠল। চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমরা সবাই সেই শব্দে যেন মুগ্ধ হয়ে গেলাম। তেলের ফোঁটা ছিটকে চারদিকে পড়ছিল, দোকানদার সাবধানে কড়াই নেড়ে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে বেগুনের রঙ পাল্টাতে শুরু করল। সাদা থেকে সোনালি, তারপর আরও গাঢ় বাদামি হয়ে উঠল। এই রঙ পরিবর্তনের দৃশ্যটুকু আমি একদৃষ্টিতে দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল, চোখ সরালেই কিছু মিস হয়ে যাবে।

WhatsApp Image 2025-

গরম তেল থেকে ভাজা বেগুন যখন তুলল, তখন তার গন্ধ যেন একসাথে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। মাওয়া ঘাটের বাতাস, নদীর গন্ধ, বাজারের ভিড়—সবকিছুর মধ্যে বেগুন ভাজার সেই বিশেষ গন্ধ একেবারে আলাদা হয়ে ধরা দিল। আমরা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বুঝতে পারছিলাম, কারও মুখেই কথা নেই, শুধু সেই গন্ধ উপভোগ করার এক অদ্ভুত নীরবতা। অপেক্ষার সময়টাও কম আনন্দের ছিল না। আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে গল্প করতে লাগলাম। কেউ বলছিল, এই মাছ কেটে ভাজার দৃশ্য শহরে কোথাও দেখা যায় না। কেউ আবার বলছিল, এতদিন পরে এভাবে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে একসাথে খাওয়ার অভিজ্ঞতা সত্যিই অন্যরকম। চারপাশের হৈচৈয়ের ভেতরেও আমাদের সেই ছোট্ট দলে এক ধরনের উষ্ণতা তৈরি হয়েছিল।

আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম, আমাদের পাশেই আরও কয়েকজন ক্রেতা দাঁড়িয়ে আছে। তারাও নিজেদের মাছ ভাজার জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের চোখেমুখেও এক ধরনের উচ্ছ্বাস। মনে হচ্ছিল, শুধু খাবার নয়, এই মুহূর্তের অংশ হওয়াটাই আসল আনন্দ। বেগুন ভাজার সুবাস তাদের দিকেও ছড়িয়ে যাচ্ছিল, তারাও হয়তো ভেতরে ভেতরে সেই গন্ধে ডুবে যাচ্ছিল। দোকানের সামনে বসে থাকা এক বৃদ্ধ মানুষ বলছিলেন, আগে নাকি এভাবে মাছ ভাজার সুযোগ ছিল না। এখন মানুষ বাজারে এসে মাছ কিনেই সঙ্গে সঙ্গে খাওয়ার স্বাদ নিতে পারে। তাঁর কথায় যেন এক ধরনের ইতিহাস জড়িয়ে ছিল। আমরা মন দিয়ে শুনছিলাম, আর ভেতরে ভেতরে ভেবে নিচ্ছিলাম, সত্যিই কত বদলে গেছে সময়।

WhatsApp Image 2025-

এদিকে দোকানদার ব্যস্ত হাতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। তার হাতের ভঙ্গি, ছুরি চালানো, কড়াই নাড়ানো—সবকিছুতেই অভিজ্ঞতার ছাপ ছিল। মনে হচ্ছিল, এ কাজ সে বছরের পর বছর ধরে করছে। আমাদের মাছের টুকরোগুলো পাশে সাজানো আছে, একটু পরেই সেগুলোও কড়াইতে যাবে। কিন্তু এই বেগুন ভাজার দৃশ্যই যেন আমাদের ধৈর্য্যকে পরীক্ষা নিচ্ছিল। তখন আমি লক্ষ্য করলাম, বেগুনের টুকরোগুলো কড়াই থেকে তোলার পর দোকানদার একটা ছোট ঝাঁঝরি দিয়ে তেল ঝরাচ্ছে। তারপর একটা প্লেটে সাজিয়ে রাখছে। সেই সাজানো প্লেটের বেগুন দেখতে এত সুন্দর লাগছিল যে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না। প্লেট থেকে ধোঁয়া উঠছে, চারপাশে তার সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা সবাই অবচেতনভাবেই কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, যেন একটু পরেই হাত বাড়িয়ে খেয়ে ফেলব।

WhatsApp Image 2025-08-27 at 00.56.14_e1bf5ced.jpg

আমার স্বামী আপনাদের ভাইয়া মজা করে বলল, আগে বেগুন দিয়ে শুরু হোক, মাছ পরে আসুক। আমরা সবাই হেসে উঠলাম। আসলেই, তখন বেগুন ভাজার গন্ধে মাছের কথা এক মুহূর্তের জন্য ভুলেই যাচ্ছিলাম। সেই মুহূর্তে আমি বুঝলাম, শুধু খাওয়ার জন্য নয়, এই পুরো অপেক্ষার সময়টাই আসলে স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে। মাছ কাটা, বেগুন ভাজা, দোকানদারের ব্যস্ততা, চারপাশের মানুষ, নদীর হাওয়া—সবকিছু একসাথে যেন এক নিখুঁত ছবি হয়ে আমাদের মনে থেকে যাবে। আজ এতদিন পরও যখন সেই দিনের কথা মনে করি, তখনও প্রথমে মনে পড়ে বেগুন ভাজার গন্ধ। মাছের স্বাদ অবশ্যই আলাদা ছিল, কিন্তু বেগুন ভাজার সুবাসে যে এক ধরনের আনন্দ তৈরি হয়েছিল, তা কোনোভাবেই ভুলবার নয়। মাওয়া ঘাটের সেই দুপুরটা শুধু মাছের স্বাদ বা খাবারের আয়োজনের জন্য স্মরণীয় হয়ে ওঠেনি, বরং সেই বেগুন ভাজার মুহূর্তগুলোই আমাদের জন্য হয়ে উঠেছিল এক অমূল্য অভিজ্ঞতা। মনে হয়েছিল, জীবনের ছোট ছোট আনন্দই আসলে সবচেয়ে বড়ো সুখ এনে দেয়।

পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীভ্রমণ
ক্যামেরাVivo y18
পোস্ট তৈরি@maksudakawsar
লোকেশনবাংলাদেশ

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

Sort:  
 7 days ago 

মাওয়া ঘাট এবং পদ্মার পাড় ভ্রমণের দারুন অনুভূতি শেয়ার করেছেন। আপনার অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। সেই সাথে পর্দার পি
পাড় ভ্রমণের দশম পর্বে আপনার কাটানো অনুভূতি শেয়ার করেছেন। আপনার অভিজ্ঞতা জানতে পেরে ভালই লাগলো।

 7 days ago 

খুবই সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপনি৷ আপনার কাছ থেকে এই ভ্রমণের গত পর্ব দেখেছিলাম৷ আজকে এর আরো একটি পর্ব দেখে অনেক বেশি ভালো লাগলো৷ এখানে সবকিছু আপনি খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন৷ তার পাশাপাশি এখানে খুব সুন্দর ফটোগ্রাফি শেয়ার করার মধ্য দিয়ে আপনি সবকিছু ভালোভাবে শেয়ার করেছেন৷ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে৷