ট্রাভেল পোস্ট- "মাওয়াঘাট ও পদ্মার পাড় ভ্রমনের ৮ম পর্ব " II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি নতুন এটি ব্লগ নিয়ে হাজির হলাম। আজকে আমার ব্লগের বিষয় হলো ভ্রমণ। আসলে ভ্রমণ গুলোকে আমি ব্লগের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারলে ভীষণ ভালো লাগে। তাই আমি চেষ্টা করি সপ্তাহে কমপক্ষে ভ্রমণের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ভ্রমণের পোস্টগুলো শেয়ার করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি আশা করি আপনাদের সবার আজকের পোস্টে অনেক বেশি ভালো লাগবে। নিচে আমার ভ্রমণের পোস্টটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করা হলো। কেমন হয়েছে তা অবশ্যই জানাবেন।
.png)
কিছুদিন আগে আমরা গিয়েছিলাম মাওয়া ঘাটে, প্রকৃতির এক বিশেষ টানে। আগেও অনেকবার যাওয়া হয়েছে, তবে প্রতিবারই এই জায়গাটা আমাদের নতুন করে কিছু অনুভব করিয়ে দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই দিনের এক বিশেষ অভিজ্ঞতা আজ আমার মনে গেঁথে আছে, যখন বিশাল এক খোলা মাঠে ঘুরে ঘুরে ইলিশ মাছের দাম যাচাই করছিলাম, আর অপেক্ষা করছিলাম আমাদের বাকী সঙ্গীদের জন্য। আমরা—আমি আর আমার স্বামী—বাকি সবাইকে এক জায়গায় রেখে এসেছিলাম, যাতে আমরা একটু আগেই এগিয়ে গিয়ে মাছের দামটা দেখে নিতে পারি।


সেই খোলা মাঠটা ছিল সত্যিই বিশাল। যতদূর চোখ যায়, শুধু মাছের দোকান আর হাঁকডাক। মনে হচ্ছিল যেন মাছের একটা মেলা বসেছে। প্রতিটি দোকানে সারি সারি ইলিশ সাজানো, টাটকা রুপালি রঙে ঝলমল করছে। আমরা একটা দোকানে ঢুকে দাম জিজ্ঞেস করলাম। সেলসম্যান এক গাল হেসে বললো, “আপা, আজকের স্পেশাল অফার, ২০০০ টাকায় ৬টা মাছ দিয়ে দিবো। মাছ একদম পদ্মার, টাটকা।” মাছগুলো দেখে সত্যিই ভালো লাগলো। মাঝারি সাইজের, দেখতে খুবই ভালো। আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে সম্মতি জানালাম, তবে একদম কেনার আগেই সিদ্ধান্ত নিলাম, আগে ফোনে বাকিদের ডেকে আনি, তারপর একসাথে কিনবো।

আমার স্বামী তখন ফোনে ব্যস্ত হয়ে গেলেন আমাদের বাকিদের ডাকার কাজে। আর আমি আশপাশটা একটু ঘুরে দেখছিলাম। তখন দুপুরের রোদটা বেশ তীব্র হলেও, বাতাসে একটা নদীর গন্ধ ছিল। ভেজা মাটির সাথে মাছের গন্ধ মিশে এক অদ্ভুত গ্রাম্য অনুভূতি তৈরি করছিল। ফোনে জানিয়ে দেওয়া হলো—“এখানে মাছের দাম অনেক কম, তাড়াতাড়ি চলে এসো।” তারপর আমরা দুজনেই হাঁটা ধরলাম বিশাল মাঠটার ভেতরে, আরও কিছু দোকান ঘুরে দাম যাচাই করার জন্য।

যতক্ষণে ওরা আসছে, ততক্ষণে আমরা যেন এই মাঠের একপ্রকার পর্যটকে পরিণত হয়েছি। এক দোকান থেকে আরেক দোকানে যাচ্ছি, প্রতিটি দোকানেই সেলসম্যানরা আমাদের দেখামাত্র ডেকে উঠছে। “এই যে আপা, একবার দেখে যান”, “ভাই, এই দিকেই আসেন”—সেইসব ডাকাডাকি শুনে এক মুহূর্ত মনে হলো যেন আমরা কোনো বড়লোক ক্রেতা, যার জন্য সবাই অপেক্ষা করে বসে আছে। সেই মুহূর্তগুলোতে নিজেদের একটু গুরুত্বপূূর্ণও মনে হচ্ছিল। মানুষ কত সহজে কিছু সাধারণ আচরণে আনন্দ খুঁজে নেয়!

দোকানদারদের সেই প্রতিযোগিতামূলক ডাকাডাকিতে যেন মাঠজুড়ে একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছিল। কেউ বলছে তাদের মাছ একদম টাটকা, কেউ বলছে আজই পদ্মা থেকে এসেছে, কেউ আবার হাতে তুলে দেখিয়ে বলছে, “এইটা দেখেন আপা, ঠিক সোনার মতো ঝিলিক দিচ্ছে!” আমরা হাসছিলাম, কথা বলছিলাম, কিন্তু জানতাম আমরা আগেই একটা ভালো অফার পেয়ে গেছি। তারপরও ঘুরে ঘুরে এই তুলনাটা করছিলাম যেন নিজের সিদ্ধান্তের উপরে একটা মানসিক নিশ্চয়তা পাই।

মাঠের চারদিকে বেশ কিছু দামি গাড়ি চোখে পড়ছিল। চকচকে কালার, বড় বড় ব্যান্ড—যে কেউ দেখলেই বুঝে যাবে, শহরের অভিজাত শ্রেণির মানুষজন এসেছেন। তারা কেউ পরিবারের সাথে, কেউ একা এসে মাছ পছন্দ করছেন, দাম করছেন, কেউ আবার চুপচাপ দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। এই দৃশ্য দেখে মনে হলো, এ যেন ধনী মানুষের এক প্রকার বিনোদন। গাড়ি করে ছুটে আসা, দামি মাছ কেনা, আর তারপর আবার শহরে ফেরা। আর আমরা? আমাদের তো গাড়ি নেই, নেই সেই সামর্থ্য। তবে আমাদের কাছে এ ঘোরাঘুরিটাও এক বিশাল আনন্দ। গাড়ি না থাকলেও আমরা হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতির সাথে মিশে যাচ্ছিলাম।

একটা সময় দাঁড়িয়ে পড়লাম এক কোণায়। দূরে নদীর আভাস দেখা যাচ্ছিল। বাতাসে নদীর শীতলতা মিশে, তৃষ্ণার্ত শরীরকে একরকম প্রশান্ত করে দিচ্ছিল। চারদিকে মাছ কেনার ব্যস্ততা, আর আমরা শুধু দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি আমাদের সঙ্গীদের জন্য। একদিকে মন焦 রোদ, আরেকদিকে বাজারের হাঁকডাক, তার মাঝেও যেন একটা শান্তি কাজ করছিল আমাদের মধ্যে। কারণ এমন অভিজ্ঞতা আমাদের শহুরে জীবনে কোথায়?

মাঝে মাঝে আমরা দোকানির সাথে কথা বলছিলাম, জানতে চাচ্ছিলাম মাছ কোথা থেকে আসে, কোন সময়ে বেশি আসে, কিভাবে তারা দাম নির্ধারণ করে। তাদের মুখে ছিল সরলতা, পরিশ্রমের গন্ধ। কোনো কৃত্রিমতা নেই, নেই বড়লোকি ভান। তাদের সেই আন্তরিকতা আমাদের মন ছুঁয়ে যাচ্ছিল। আমরা দেখছিলাম, এই বিশাল মাঠের প্রতিটি কোণ যেন জীবন্ত—কেউ মাছ নিচ্ছে, কেউ দরদাম করছে, কেউ শুধু তাকিয়ে দেখছে। শিশুদের কৌতূহলী চোখ, বড়দের হিসেবি দৃষ্টি, আর দোকানিদের জোরালো কণ্ঠে হাঁকডাক—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম পরিবেশ।

এক সময় মনে হলো, অপেক্ষার সময়টুকু আর যেন কেটে না যায়। তবে ওদের আসার আগে আমরা আরেকবার আগের সেই দোকানে ফিরে গেলাম, যেখানে মাছের দাম ২০০০ টাকায় ৬টি বলেছিল। দোকানদার আমাদের দেখে হাসিমুখে বললো, “কি আপা, ভাবছি?” আমরা হেসে বললাম, “ভাবছি তো, বাকিরা আসলে জানাবো।” সে তখন বললো, “আপনারা আসলে ভালো বুঝে দাম করেছেন, এখনো সেই দামেই দিবো, যদি পরে আসেন।” এই কথাগুলো শুনে ভালো লাগলো। কারণ অনেক সময়ই দেখা যায় দাম ঠিক করে রাখলে পরে আর সেই দাম মানা হয় না। কিন্তু এখানে দোকানির কথায় ছিল এক ধরণের সততা। এই অনুভবটা একটা গ্রামীণ বিশ্বাসের মতো, যেখানে কথা দেওয়া মানেই প্রতিশ্রুতি।

আমরা আবারো হাঁটতে শুরু করলাম। এবার হাঁটার গতি একটু ধীর। চারদিকে তাকিয়ে সবটুকু দৃশ্য মনে গেঁথে নিচ্ছি। মাঝে মাঝে দূরে তাকিয়ে দেখি কেউ মাছ হাতে নিয়ে ছবি তুলছে, কেউ ভিডিও করছে, কেউ হুট করে দরদাম করে ফেলছে। এর মধ্যেই মোবাইলে খবর এলো—ওরা এসে গেছে। মনটা হঠাৎ একটু তৃপ্তিতে ভরে উঠলো। ভাবলাম, পুরো সময়টা আমরা একসাথে না থাকলেও, এই সময়টুকু আমাদের দুজনের জন্য একধরনের ছোট্ট ভ্রমণ হয়ে রইল।

শেষ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে থাকলাম আবার সেই জায়গায়, যেখান থেকে সবকিছু শুরু হয়েছিল। অপেক্ষা, দাম ঠিক করা, ঘুরে দেখা, ডাকাডাকি—সবকিছুর ভেতরে এক চিরচেনা সম্পর্কের গভীরতা ছিল। এই সাধারণ অভিজ্ঞতাটাও আমাদের মনের মাঝে এক চিরস্থায়ী জায়গা করে নিলো। সব কিছু মিলিয়ে সেই দিনটি হয়ে উঠেছিল শুধু মাছ কেনার দিন নয়, বরং ছিল দুটি মানুষের কিছু সুন্দর মুহূর্ত ভাগ করে নেওয়ার দিন।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | ভ্রমণ |
---|---|
ক্যামেরা | Vivo y18 |
পোস্ট তৈরি | @maksudakawsar |
লোকেশন | বাংলাদেশ |
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
