ট্রাভেল পোস্ট- "মাওয়াঘাট ও পদ্মার পাড় ভ্রমনের ৭মপর্ব " II written by @maksudakawsarII

in আমার বাংলা ব্লগ13 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি নতুন এটি ব্লগ নিয়ে হাজির হলাম। আজকে আমার ব্লগের বিষয় হলো ভ্রমণ। আসলে ভ্রমণ গুলোকে আমি ব্লগের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারলে ভীষণ ভালো লাগে। তাই আমি চেষ্টা করি সপ্তাহে কমপক্ষে ভ্রমণের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ভ্রমণের পোস্টগুলো শেয়ার করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি আশা করি আপনাদের সবার আজকের পোস্টে অনেক বেশি ভালো লাগবে। নিচে আমার ভ্রমণের পোস্টটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করা হলো। কেমন হয়েছে তা অবশ্যই জানাবেন।‍

WhatsApp Image 2025-07-26 at 10.11.00_a4165454.jpg

সেদিন সকাল থেকে একের পর এক অভিজ্ঞতায় ভরে উঠছিল আমাদের মাওয়া ভ্রমণ। কখনো চা আর ধানখেতের মাঝে দিয়ে নদীর দিকে যাত্রা, কখনো বা কুড়ে ঘরের মতো সাজানো দারুণ রেস্টুরেন্টে দুলনায় বসে প্রকৃতি উপভোগ—সবই ছিল আনন্দের মুহূর্তে মোড়ানো। তবে সেই আনন্দের মাঝে হঠাৎ এক বাস্তব ধাক্কা এসে পড়ল দুপুর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে। সবার পেটে তখন বেশ ক্ষুধা লেগেছে। সকালের হালকা নাশতা আর লম্বা হেঁটে বেড়ানো—সব মিলে শরীরটা একটু ঝিমিয়ে পড়েছিল। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, এবার একটা ভালো রেস্টুরেন্টে ঢুকে ভরপেট খাওয়া যাবে। ভাবলাম যেহেতু পদ্মার পাড়ে এত সুন্দর একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি, এখানেই যদি কিছু খেয়ে নেওয়া যায়, তাহলে অতিরিক্ত ঘোরাঘুরির দরকার হবে না।

WhatsApp Image 2025-07-26 at 10.09.09_8c31417a.jpg

WhatsApp Image 2025-07-26 at 10.09.09_580e7314.jpg

WhatsApp Image 2025-07-26 at 10.09.10_b83f4d79.jpg

আমরা রেস্টুরেন্টের বাবুর্চির কাছে গেলাম মেন্যু জানতে। বিশেষ করে জানতে চাইলাম ইলিশ মাছের দাম—কারণ মাওয়া মানেই তো পদ্মার ইলিশ! ভ্রমণের সঙ্গে যেন ইলিশ খাওয়া জড়িয়ে গেছে বাঙালির মানসিকতায়। কিন্তু বাবুর্চির মুখে শুনে সবাই যেন কিছুটা থমকে গেল। তিনি বললেন—“এক হালি ইলিশ মাছ ৪০০০ টাকা!” হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়ছেন—চারটি ইলিশ মাছের দাম ৪০০০ টাকা! আমরা প্রথমে ভাবলাম বুঝি ভুল শুনেছি। আবার জিজ্ঞেস করলাম, আবার সেই একই উত্তর। সাথে তিনি যোগ করলেন, “ভাই, পদ্মার টাটকা ইলিশ, দাম একটু বেশি তো হবেই।”

WhatsApp Image 2025-07-26 at 10.09.11_165e6d4a.jpg

WhatsApp Image 2025-07-26 at 10.09.11_24ff0bb0.jpg

মাথাটা গরম হয়ে উঠল আমাদের। হালকা গরম শরীর, খালি পেট আর অতিরিক্ত দামে খাবার—এই তিন মিলে মুহূর্তে মন-মেজাজ খারাপ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বুঝে গেলাম, এখানে খাওয়ার কোনো মানেই হয় না। এই খাবার শুধু স্বাদে নয়, বাজেটেও ভীষণ ভারী হয়ে যাবে। তবে আমরা হতাশ না হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, দলকে এখানেই বসিয়ে রেখে দু-তিনজন বের হয়ে যাই আশেপাশের অন্য রেস্টুরেন্ট খুঁজে দেখার জন্য। আমাদের জানা ছিল যে একটু দূরে, মাঠের ওপরে কিছু রেস্টুরেন্ট আছে—যেখানে স্থানীয়রা বেশি খেতে যায়। হয়তো সেখানে দামটা একটু স্বস্তির মধ্যে হবে।

WhatsApp Image 2025-07-26 at 10.09.10_4f5efbee.jpg

পদ্মার পাশ ঘেঁষে হেঁটে হেঁটে আমরা রওনা দিলাম সেই বিশাল মাঠের দিকে। দুপুরের রোদ পড়ছিল মাথার ওপর, কিন্তু মনটাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম। এই সময়টাতে একটু ক্লান্তি জমে যায় বটে, কিন্তু মাথায় তখন একটা উদ্দেশ্য—“বাকি সবাই যেন ভালোভাবে খেতে পারে।” রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকান, কিছু ফলের ঠেলা, আর কিছু হালকা চা-স্ন্যাকসের দোকান পেরিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম সেই বিশাল ফাঁকা মাঠের ধারে যেখানে সারি সারি রেস্টুরেন্ট। জায়গাটা তুলনামূলকভাবে বেশি খোলামেলা। এখানকার রেস্টুরেন্টগুলো কিছুটা ছাউনি দিয়ে তৈরি, আবার কিছু একতলা পাকা ঘর। বেশিরভাগই স্থানীয় মালিকানাধীন, যারা পর্যটকের চেয়ে স্থানীয় খদ্দেরদের বেশি সেবা দেন।

WhatsApp Image 2025-07-26 at 10.09.09_8bd38bef.jpg

প্রথমেই ঢুকলাম একটা মাঝারি মানের রেস্টুরেন্টে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল খাবারগুলো একদম সরল এবং দামও তুলনামূলকভাবে বেশ কম। একজন পরিচ্ছন্ন পোশাকের ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বললেন, “ভাই ইলিশও আছে, তবে এক পিস ৩৫০–৪০০ টাকার মধ্যে। আপনারা চাইলে অন্য মাছের থালাও আছে—ট্যাংরা, পুঁটি, চিংড়ি।” ভাবলাম আরও একটু ঘুরে দেখি। যেহেতু বিশাল মাঠের মধ্যে এতগুলো দোকান তাহলে কেন এক দোকান থেকেই নিবো। তো আমরা চেষ্টা করলাম অন্য দোকানে যেয়ে দাম করার। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল সেখানকার দোকানদার দের টানাটানি। ওমা কি আর বলবো। কোন দোকান রেথে কোন দোকানে যাবো। এরপর আমরা মোটামুটি বেশ কিছু দোকানে গিয়ে যাচাই করলাম। আর এখানকার মাছের দাম শুনে আমরা একটু হাফ ছেড়ে বাচঁলাম। তারপর আমরা নিজেদের মধ্যে একটু কথা বলে নিলাম। তারপর মোট ৬টি মাছ দাম করলাম। আমরা বললাম ২০০০ টাকা দিবো। আর এই দুই হাজার টাকাতেই তারা এক দোকানদার রাজি হয়ে গেল। শুনে আমরা একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মনে হলো—অবশেষে সত্যিকারের ‘মাওয়া অভিজ্ঞতা’ হবে ইলিশ খেয়েই, তাও একটু স্বস্তির দামে। এরপর ফোন দিয়ে সবাইকে জানালাম যে এখানেই ভালো মাছ আছে তোমরা আসলে আমরা দাম ফাইনাল করবো। তারপর আমাদের বাকী মানুষদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

WhatsApp Image 2025-07-26 at 10.09.10_4c9564f4.jpg

মাওয়া ভ্রমণের এই পর্বটি আমাদের শিখিয়েছে এক সহজ কথা—ভ্রমণের সব আনন্দ শুধু চোখে দেখা নয়, অনেক সময় তা হয় খুঁজে পাওয়ার মধ্যে। আমরা যদি শুধু প্রথম রেস্টুরেন্টের দাম শুনে হতাশ হয়ে ফিরে যেতাম, তাহলে হয়তো এই দারুণ মাছগুলোও দেখা হতো না আর দলবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া, খোঁজ করা, এবং সঠিক জায়গা বেছে নেওয়াও হতো না। যাই হোক আমরা সেদিন মাছের সাথে আর কি খেয়েছিলাম তা জানার জন্য আমার আগামী পর্বের দিকে চোখ রাখুন

পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীভ্রমণ
ক্যামেরাVivo y18
পোস্ট তৈরি@maksudakawsar
লোকেশনবাংলাদেশ

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️