ট্রাভেল পোস্ট- "মাওয়াঘাট ও পদ্মার পাড় ভ্রমনের চতুর্থ পর্ব " II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি নতুন এটি ব্লগ নিয়ে হাজির হলাম। আজকে আমার ব্লগের বিষয় হলো ভ্রমণ। আসলে ভ্রমণ গুলোকে আমি ব্লগের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারলে ভীষণ ভালো লাগে। তাই আমি চেষ্টা করি সপ্তাহে কমপক্ষে ভ্রমণের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ভ্রমণের পোস্টগুলো শেয়ার করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি আশা করি আপনাদের সবার আজকের পোস্টে অনেক বেশি ভালো লাগবে। নিচে আমার ভ্রমণের পোস্টটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করা হলো। কেমন হয়েছে তা অবশ্যই জানাবেন।
.png)

আজকাল জীবনের ব্যস্ততা এতটাই বেশী যে মানসিকতা একদম ভালো রাখতে পারি না। অফিসের অযথা কাজের চাপ, সাংসারিক, পারিবারিক সব কিছু মিলিয়েই যেন জীবনটা হয়েগেছে দূর্বিসহ। এমন দূর্বিসহ জীবন কে যদি কিছুটা স্বস্থি দেওয়া যায় তাহলে কিন্তু জীবন ফিরে পায় কিছুটা শান্তি আর নতুন ঠিকানা। আর তেমন একটু স্বস্থি আর শান্তির জন্যই কিছুদিন আগে পরিবারের সকল কে নিয়ে বেড়িয়ে ছিলাম একটি ডে ট্যুরে। মানে ঢাকার কাছেই মাওয়া ঘাট আর পদ্মার পাড়ে সারাটা দিন সবাই মিলে ঘুরে বেডিয়ে ছিলাম কিছুটা আনন্দ নিয়ে। আজ সেই ঘুরে আশার গল্পই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি। হয়তো পুরো গল্প শেষ করতে করতে ১০০ পর্ব ও লেগে যেতে পারে। তাতে কিন্তু আমার কোন দোষ নেই। তাহলে চলূন আজ আমরা মাওয়া ঘাট আর পদ্মা নদীর পাড়ে ঘুরে আসার চতুর্থ পর্ব দেখে আসি।

সেদিন নদীর পাড়ে গিয়ে বেশ মনটা ভরে গিয়েছিল। তাই ভাবলাম যে আজ সারাটাদিন পদ্মার মাঝে হারিয়ে যাবো। কিন্তু ততক্ষনে সবার মনে ঢুকে গেল একটু চা খেতে হবে। মানে সবার তখন চা খাওয়ার নেশা জেগে উঠেছে। আর সে কারনেই আমরা খুঁজতে লাগলাম মালাইয়ের চাযের দোকান। আমরা একেবারে নদীর পাড়েই পেয়ে গিয়েছিলাম সেই মালাইয়ের চায়ের দোকান। তো মজা করে নদীর দৃশ্য দেখতে দেখতে চা খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম। যাই হোক এক সময়ে আমাদের চা খাওয়া শেষ হয়ে যায়। তারপর আমরা শুরু করে দেই আমাদের ভ্রমনের স্বাদ নেওয়া। সেদিন মালাইয়ের চা খুঁজে পেয়েছিলাম পদ্মার পাড়ে? জানার জন্য আমার এই ভ্রমন পোস্টের আগামী পর্বের দিকে চোখ রাখুন।

চা খেতে খেতে দাঁড়িয়ে ছিলাম ঘাটের এক কোণায়। দূর থেকে চোখে পড়ল ধান খেতের সবুজ সমারোহ। ধানের গাছগুলো যেন একসাথে মাথা নাড়ছে বাতাসের ছোঁয়ায়। তার ঠিক পাশে নদীর চর। সেই চরে অনেকে গোসল করছে, কেউ পরিবার নিয়ে এসেছে, কেউ শুধু বসে আছে জলে পা ডুবিয়ে। আরেকপাশে বাঁধা রয়েছে কিছু নৌকা আর স্পিডবোট—একা দাঁড়িয়ে থাকা যেন জলযানের বিশ্রাম। এই দৃশ্য আমাদের ভিতরে যেন এক নতুন কৌতূহলের জন্ম দিল। আমরা ভাবলাম, কেবল দূর থেকে দেখলে হবে না, নদীর কাছাকাছি যেতে হবে, ছুঁয়ে দেখতে হবে প্রকৃতিকে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ধান খেতের ভেতর দিয়ে সেই চরের কাছে যাব।

ঘড়ির কাঁটা তখন ঠিক ১২টা। সূর্য মাথার ঠিক ওপরে, আর রোদ যেন তপ্ত লোহার মতো পুড়িয়ে দিচ্ছে চারদিক। গরমে কারো শরীর আর মন কোনো কিছুই স্থির থাকছে না। আমরা তখন চা হাতে বসে দূরে তাকিয়ে দেখি বিশাল পদ্মা নদী। ঢেউগুলো তাপের মাঝেও চোখে আরাম এনে দেয়। অথচ চোখ যেন আটকে গেল এক জায়গায়—নদীর ধারে কিছু মানুষ গা ধুয়ে নিচ্ছে, কেউ পানিতে নেমে খেলছে, আর কেউ ঠাণ্ডা জলে বসে স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছে। সেই দৃশ্য দেখে আমাদের ভেতরেও এক অসম্ভব টান তৈরি হলো। প্রখর রোদের উত্তাপে ক্লান্ত মন চাইলো একটু স্বস্তি, একটু প্রশান্তি, একটু পদ্মার ঠাণ্ডা ছোঁয়া। চোখাচোখি হলো। কেউ কিছু বলার আগেই মনে হলো, সবাই বুঝে ফেলেছি—চলো, কাছে যাই। শুধু দূর থেকে দেখে তো শান্তি আসছে না, নিজের পা দিয়ে জলে না নেমে শান্তি কোথায়!

আমার হাজবেন্ড , আমার বোনেরা আর আমি—সবাই একসাথে উঠে দাঁড়ালাম। চায়ের কাপ খালি হলো আর মনে বাসা বাঁধল নতুন এক কল্পনা—পদ্মার ধারে গিয়ে পা ডুবিয়ে বসে থাকব, রোদের ক্লান্তি ধুয়ে যাবে জলে। কিন্তু নদীর ধারে পৌঁছানো কোনো সহজ কাজ ছিল না। সামনে কোনো পাকা রাস্তা নেই। আছে শুধু ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে একটা সরু কাঁচা আইল। সূর্যের তাপে পথের মাটি ছিল নরম, কোথাও কোথাও জলে ভিজে কাদা হয়ে গেছে। আমরা সেই পথেই এগিয়ে চললাম। রোদের তেজে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে, গায়ের ঘাম জামা ভিজিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু নদীর জন্য, সেই এক ফোঁটা ঠাণ্ডা জলের স্পর্শ পাওয়ার জন্য, এই কষ্ট যেন একেবারেই গায়ে লাগছে না। দু’পাশে সবুজ ধানখেত। সূর্যের আলোয় সেই সবুজ যেন চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মাঝেমাঝে বাতাস বইছে, গায়ে একটু ছায়া এনে দিচ্ছে ধানের পাতাগুলো।

পা ফেলতেই কাদা। কোথাও কোথাও তো এমন নরম যে এক পা দিয়ে নামলেই গোড়ালি পর্যন্ত ঢুকে যাচ্ছে। হঠাৎ আমার ছোট বোন পিছলে গিয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। সে সামলে উঠে হেসে বলল, “এই কাদার মধ্যে হাঁটাটা মনে হচ্ছে কোনো অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপ!” তাকে দেখে আমরাও হেসে উঠলাম। সত্যি বলতে কি, এই কাদা-পথই যেন আমাদের ভ্রমণের আসল সৌন্দর্য হয়ে উঠলো। শহরে হলে এই কাদায় কেউ নামতো না, কেউ হাঁটতো না, অথচ এখানকার কাদা আমাদের কাছে হয়ে উঠেছে পদ্মার পথে পৌঁছানোর গোপন সিঁড়ি। আমার হাজবেন্ড একটু পেছনে হাঁটছিলেন, আর মাথার ঘাম হাত দিয়ে মুছছিলেন। আমি তাকিয়ে বললাম, “এই রোদে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে?” তিনি হেসে বললেন, “না, কিন্তু একবার পা ডুবালেই সব কষ্ট ধুয়ে যাবে।” বোনেরা কেউ ঘাস ছুঁয়ে দেখছে, কেউ ছবি তুলছে, কেউ শুধু পা দেখে দেখে হাঁটছে। সময় যেন থমকে গেছে। রোদ যতই তীব্র হোক না কেন, মন যেন একরকম শান্তিতে ভরে যাচ্ছে। আমরা সবাই জানি, সামনে অপেক্ষা করছে পদ্মা। কিন্তু পথটাও তো কম সুন্দর নয়! হাঁটতে হাঁটতে কাদায় পা আটকে যাওয়া, ধানগাছের পাতায় হাত বুলিয়ে যাওয়া, বাতাসে একটু জিরিয়ে নেওয়া—এই সবই যেন হয়ে উঠল পদ্মার আগমনের প্রাক-মুহূর্ত।

এক পর্যায়ে একটু খোলা জায়গায় দাঁড়ালাম। দূরে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পদ্মা। সেই বিশাল জলরাশি, সূর্যের আলোয় চকচক করছে। শরীর গরমে ক্লান্ত, কিন্তু মন তখনই এক আনন্দে নেচে উঠলো। আর মাত্র একটু—তারপরই পদ্মা, ঠাণ্ডা জল, আর এক নতুন গল্পের শুরু। এই পর্বে আমরা নদীর ধারে পৌঁছাইনি। শুধু হাঁটছি, গ্রীষ্মের রোদের মাঝে, কাদা-পথ পেরিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে। পদ্মার ছোঁয়া তখনও পায়নি আমাদের পা, কিন্তু মন যেন আগেই ছুঁয়ে ফেলেছে সেই জলের শীতলতা। চোখ রাখুন পদ্মার পাড়ের বাকী গল্প জানতে।
আশা করি আগামী পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারবো যে আমরা কত টাকা ভাড়া দিয়ে কেমন করে সেই স্বপ্নের মাওয়া ঘাটে পৌঁছেছিলাম। আর মাওয়া ঘাটে পৌঁছে সেদিন কি কি করেছিলাম। সে পর্যন্ত আমার সাথেই থাকুন।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | ভ্রমণ |
---|---|
ক্যামেরা | Vivo y18 |
পোস্ট তৈরি | @maksudakawsar |
লোকেশন | বাংলাদেশ |
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
