বাঁশির সুরে জেগে ওঠা শৈশবের স্মৃতি।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
গ্রামের মেলা মানেই রঙিন জীবন, নানা ধরনের খেলনা, মুখরোচক খাবার আর নানান রকম ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের সমাহার। এর মাঝে একটি বিশেষ জিনিস সবসময় আলাদা করে চোখে পড়ে, সেটা হলো বাঁশের বাঁশি। দেখতে যেমন সুন্দর, সুরেও তেমনই মধুর। এই বাঁশির ধ্বনি শুধুমাত্র একটুকরো সঙ্গীত নয়, এটি এক একটি স্মৃতির জানালা খুলে দেয় শৈশবের সেই নির্ভেজাল দিনগুলোর। যেখানে আনন্দের জন্য প্রযুক্তি ছিল না, ছিল অনুভব, সম্পর্ক আর প্রকৃতির কাছাকাছি থাকবার অভ্যাস।
এই ছবিটি তোলা হয়েছে একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা থেকে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে সারি সারি বাঁশের তৈরি বাঁশি। প্রতিটি বাঁশিতে রয়েছে শিল্পীর হাতে পোড়ানো নকশা, যা শুধু দেখলেই বোঝা যায় এ এক নিপুণ হাতের কাজ। এই বাঁশিগুলোর দিকে তাকিয়ে আমার মনে পড়ে গেল সেই ছোটবেলার এক অমূল্য স্মৃতি।
আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমার নানু বাড়িতে। আমার নানুবাড়ি একটি গ্রামে, প্রকৃতির কোলে সাজানো শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশ। সেখানে আমার মামার একটি বিশাল বাসা ছিল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মামা বসতেন রাস্তায়, শরীরে হাওয়া লাগিয়ে বাঁশি বাজাতেন। সেই বাঁশির সুর এতটাই মায়াবী ছিল যে, আমি দূর থেকে শুনে ছুটে যেতাম। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম কীভাবে মামার আঙুলগুলো দ্রুত গতিতে ছুটে বেড়ায় বাঁশির ছিদ্রের ওপর। একদিন সাহস করে বলেই ফেললাম, মামা, আমাকে একটা বাঁশি কিনে দাও।
মামার বাঁশিটা বড় ছিল, আমি সেটা বাজাতে পারছিলাম না। পরদিন সকালে মামা আমাকে একটা ছোট বাঁশি কিনে এনে দিলেন মেলা থেকে। সেই বাঁশি পেয়ে আমার আনন্দের সীমা ছিল না। সারাদিন শুধু হালকা হালকা সুর তুলতে চাইতাম, মামার মতো বাজাতে চাইতাম। যতদিন নানুবাড়িতে ছিলাম, সুরে সুরে সময় কেটে যেত। তবে আমাদের বাড়িতে ফিরে আসার পর সেই বাঁশিটাও হারিয়ে গেল, আর সেই বাঁশির মতো আনন্দও যেন হারিয়ে গেল কালের অতলে।
আজকের এই ছবিটি আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে সেই সোনালি শৈশবে। যেখানে মেলার বাঁশির সুর মানেই ছিল একটি আলাদা অনুভব, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, ঘরের মানুষদের ভালোবাসা, আর সাদামাটা জীবনের পরিপূর্ণতা।
বর্তমান সময়ে এই বাঁশির চল অনেকটাই কমে এসেছে। ইলেকট্রনিক গ্যাজেট আর ডিজিটাল সাউন্ডের যুগে মানুষ বাঁশির মতো প্রাকৃতিক সুর ভুলে যাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে এখনো কিছু মেলায় বাঁশির দোকান দেখা যায়, কিন্তু তা আগের মতো প্রাণবন্ত নয়। সেই বাঁশির দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে যখন কেউ বাজিয়ে দেখায়, তখন যেন মনে হয় পুরো গ্রামের বাতাসে আবার ছড়িয়ে পড়ে সেই হারিয়ে যাওয়া সুর।
আমার মামা এখন আর বাঁশি বাজান না। বয়সের ভারে তিনি অবসর নিয়েছেন বাঁশির সুর থেকে। তবে তার শেখানো সেই ছোট্ট চেষ্টা আজও আমার মনে গেঁথে আছে। আমি হয়তো বাঁশি বাজাতে পারি না, কিন্তু বাঁশির প্রতি ভালোবাসা আজও অটুট।
আমার বিশ্বাস, যদি আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই ধরণের ঐতিহ্যগুলো দেখাই, জানাই,তাহলেই হয়তো তারা আবার ফিরে পাবে আমাদের সংস্কৃতির হারিয়ে যাওয়া এই সুরময় অধ্যায়। সেই স্মৃতির এক টুকরো অংশ।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | রিয়েলমি সি-৫৩ |
ফটোগ্রাফার | @joniprins |
স্থান | ব্রাহ্মনবাড়িয়া,ঢাকা, বাংলাদেশ |
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
https://x.com/RamimHa74448648/status/1950979406891196606?t=YdMwbxxHMGxtlBWqWmssIQ&s=19
আসলেই বাঁশির প্রচলন বর্তমানে তেমন দেখাই যায় না।যদিও আমাদের মধ্যে অনেকেই বাঁশির ব্যবহার করেন নাম সংকীর্তনের জন্য।কিন্তু সেই শখের বশে কেউ আর বাঁশি বাজায় না।সুন্দর বিষয় নিয়ে লিখেছেন, ধন্যবাদ আপনাকে।