"যমুনার বুকে আজজের বিকেল"
ভাদ্র মাসের এক পড়ন্ত বিকেলে, আকাশ জুড়ে মেঘেদের খেলা, সূর্যের সোনালী আভা তখনো পুরোপুরি অস্ত যায়নি। এমন এক সন্ধ্যায়, অনেকদিন পর সিরাজগঞ্জে ফিরেছি। আর সিরাজগঞ্জে থাকা মানেই প্রতিদিন বিকেল হলেই মনটা যেন ছুটে যেতে চায় যমুনার পারে। সেই চিরচেনা ঢেউ আর মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। গতকালই এসে পৌঁছেছি, তাই বন্ধু নাহিদ আর আশিককে নিয়ে আজ বিকেলে চলে গেলাম যমুনার তীরে।
নৌকা ঘাট থেকে একটা ছোট নৌকা ভাড়া করলাম। নৌকাটা একদমই সাধারণ, কাঠ আর বাঁশ দিয়ে তৈরি, উপরে একটা ছাউনি আছে। এই ধরনের নৌকাই আমাদের কাছে বেশ আরামদায়ক লাগে। কারণ খোলা হাওয়ায় ভেসে যেতে যেতে চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। নৌকায় উঠে বসতেই এক স্নিগ্ধ বাতাস আমাদের মনকে জুড়িয়ে দিল। চারিদিকে শান্ত জলরাশি, দূরে জেলেদের ছোট ছোট নৌকা। দূরে কোথাও পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ। এই পরিবেশটা মনকে এক অদ্ভুত শান্তি দেয়।
আস্তে আস্তে নৌকাটা মাঝনদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আমরা তিনজন এক পাশে বসে গল্প করছিলাম আর ছবি তুলছিলাম। নাহিদ তার ফোন বের করে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিল, আর আশিক একমনে নদীর দিকে তাকিয়ে ছিল। নদীর ঢেউয়ের তালে তালে নৌকাটা যখন দুলছিল, তখন মনে হচ্ছিল যেন আমরা প্রকৃতির কোলে দোল খাচ্ছি। এই অনুভূতিটা অসাধারণ।নদীর তীর থেকে ভেসে আসছিল মানুষজনের কোলাহল, কিন্তু মাঝনদীতে এসে সেই শব্দগুলো প্রায় শোনা যাচ্ছিল না। শুধু শোনা যাচ্ছিল নদীর মৃদু ঢেউয়ের শব্দ। আকাশে সূর্যটা তখন লাল হতে শুরু করেছে। এই দৃশ্যটা যেন এক শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি। আকাশ আর নদীর জল একাকার হয়ে গিয়েছিল। আমরা তখন সবাই গল্প করা বন্ধ করে এই অপরূপ দৃশ্যটা উপভোগ করছিলাম।
নৌকায় বসে আমাদের অনেক পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছিল। শৈশবের সেই দিনগুলো, যখন আমরা একসাথে নদীতে গোসল করতাম, নৌকা নিয়ে ঘুরতাম, আর সারাদিন হাসি-তামাশা করতাম। এই স্মৃতিগুলো আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলছিল।সূর্যটা যখন পুরো ডুবে গেল, তখন আকাশ জুড়ে এক নতুন রঙ খেলা শুরু করল। কমলা, লাল, বেগুনি - কত রঙের সমাহার। এই দৃশ্যটা এতটাই সুন্দর ছিল যে আমাদের সবার মন ভরে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল যেন প্রকৃতি আমাদের জন্য এক বিশেষ মুহূর্ত তৈরি করে রেখেছে।
আমরা যখন ঘাটে ফিরে এলাম, তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চারিদিকে আলো জ্বলে উঠেছে। মানুষজন তখনও ঘাটে ভিড় করে আছে। আমরা নৌকা থেকে নেমে ঘাটের উপরে গিয়ে বসলাম। সেখানেও কিছুক্ষণ গল্প করলাম। এই সন্ধ্যাটা আমাদের জন্য অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সব মিলিয়ে, যমুনার পাড়ে কাটানো এই সময়টা আমাদের জন্য ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। শহুরে জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে দূরে, প্রকৃতির মাঝে, বন্ধুদের সাথে কাটানো এই মুহূর্তগুলো আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ফোনের বিবরণ
মোবাইল | Samsung A33 (5G) |
---|---|
ধরণ | "যমুনার বুকে আজজের বিকেল" |
ক্যমেরা মডেল | A33 (48+8+5+2) |
ক্যাপচার | @mohamad786 |
অবস্থান | সিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ |
X-Promotion
নৌকাটি ছোট এবং সাধারণ হলেও এরকম নৌকাগুলিতে নদীতে ঘোরার অনুভূতি ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যমুনার বুকে আপনার বন্ধুদের নিয়ে সুন্দর সময় কাটিয়েছেন তার একাংশ অনুভূতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।