"যমুনার তীরে মতি সাহেবের ঘাট"

in আমার বাংলা ব্লগ20 hours ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

বাংলাদেশকে বলা হয় নদীর দেশ। এই দেশের শিরা-উপশিরার মতো ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য নদী। আমাদের জীবন, সংস্কৃতি, আর প্রতিদিনের গল্প সবকিছুতেই মিশে আছে নদীর ছোঁয়া। আর এই নদীগুলোর মধ্যে যমুনা হলো অন্যতম বড় এবং শক্তিশালী একটি নদী। এর বিশাল ঢেউ আর অফুরন্ত জলরাশি দেখলে একদিকে যেমন মনে ভয় জাগে, তেমনি এর সৌন্দর্যে মন ভরে যায়। এই যমুনাই লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার উৎস, তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।

1000092988.jpg

আমাদের শহর সিরাজগঞ্জের ঠিক পাশ দিয়েই এই বিশাল যমুনা নদী বয়ে চলেছে। সম্প্রতি আমি এই যমুনার পাড়ে অবস্থিত খুব পুরোনো একটি ঘাটে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঘাটটির নাম ‘মতি সাহেবের ঘাট’।এই ঘাটটি একসময় খুব জমজমাট ছিল, কিন্তু এখন এর চেহারা অনেকটাই বদলে গেছে। আজ আমি সেই ঘাটে কাটানো এক সুন্দর বিকেলের গল্পই আপনাদের বলব।

মতি সাহেবের ঘাট নামটি শুনলেই মনে প্রশ্ন জাগে, কে ছিলেন এই মতিন সাহেব? যার নামে এত পুরোনো একটি ঘাট পরিচিতি পেল? স্থানীয় বয়স্কদের সাথে কথা বললে জানা যায়, অনেক অনেক বছর আগে এই ঘাটটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। তখন তো এখনকার মতো এত রাস্তাঘাট বা গাড়ি ছিল না, মানুষের যাতায়াত আর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান পথই ছিল এই নদী। ভাবুন তো একবার, সেই সময়ে এই ঘাটটি কতই না ব্যস্ত ছিল।বড় বড় সওদাগরি নৌকা এসে ভিড়ত এখানে। পাট, ধান, মসলাসহ নানা জিনিসপত্র ওঠা-নামা করত। শ্রমিকদের হাঁকডাক, ক্রেতা-বিক্রেতার কোলাহলে দিনরাত মুখর থাকত পুরো এলাকা। হয়তো সেই সময়েরই কোনো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বা সম্মানীয় ব্যক্তি ছিলেন এই মতি সাহেব, যার নামেই ঘাটটি পরিচিতি পায়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নদীর ওপর নির্ভরশীলতা কমেছে, তাই সেই পুরোনো জাঁকজমক এখন আর নেই।

1000089488.jpg

এখন সেই বড় বড় বাণিজ্যিক নৌকার দেখা মেলে না। মতি সাহেবের ঘাট এখন মূলত জেলেদের। সারাদিন যমুনার বুকে মাছ ধরে বিকেলে তারা তাদের ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো নিয়ে এই ঘাটে ফিরে আসে। আমি যেদিন গিয়েছিলাম, সেদিনও ঠিক তাই দেখলাম। বিকেলের নরম আলোয় নদীর পাড়ে সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে অনেকগুলো ডিঙি নৌকা। নৌকাগুলো দেখতে বহুদিনের পুরোনো, রোদে পুড়ে আর পানিতে ভিজে তাদের রঙ হয়েছে বিবর্ণ। অনেক নৌকার ওপরেই নীল বা ধূসর রঙের ত্রিপল দিয়ে ছাউনির মতো করে বানানো, যা জেলেদের রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচায়।

1000089487.jpg

ঘাটে পৌঁছে দেখি, জেলেরা যে যার মতো কাজ করছে। কেউ সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে নৌকার পাটাতনে গা এলিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে, কেউ মনোযোগ দিয়ে তার ছেঁড়া জাল সেলাই করছে, আবার কয়েকজন মিলে গল্প করছে দিনের মাছ ধরার অভিজ্ঞতা নিয়ে। তাদের চেহারায় ছিল সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমের ছাপ, কিন্তু চোখেমুখে ছিল এক ধরনের শান্তি। যমুনার বিশালতার কাছে তাদের এই জীবনসংগ্রাম হয়তো অনেক ছোট, কিন্তু তাদের দেখে মনে হলো, এই ছোট ছোট আনন্দ নিয়েই তারা সুখী।

20250725_181638.jpg

20250725_181103.jpg

সেদিনের পরিবেশটা ছিল অসাধারণ। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পুরো আকাশজুড়ে ছিল মেঘের আনাগোনা, যেন কোনো শিল্পী তার তুলি দিয়ে ধূসর আর সাদা রঙে আকাশটাকে সাজিয়ে রেখেছে। মেঘের ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে বিকেলের সোনালি রোদ এসে পড়ছিল নদীর পানিতে, আর তাতে পুরো নদীটা চিকচিক করছিল।

নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে যত দূর চোখ যাচ্ছিল, দেখছিলাম শুধু পানি আর পানি। যমুনার থৈ থৈ জলরাশি আর তার ওপর দিয়ে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস মনটাকে মুহূর্তেই শান্ত করে দিচ্ছিল। ছোট ছোট ঢেউগুলো এসে শান্তভাবে পাড়ে আছড়ে পড়ছিল, যেন তারা কোনো পুরোনো দিনের গল্প শোনাতে চায়। চারদিকে ছিল এক শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ। শহরের কোলাহল, গাড়ির হর্ন, ব্যস্ততা কোনোকিছুই এখানে ছিল না। ছিল শুধু নদীর কুলকুল শব্দ, বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ আর জেলেদের টুকটাক কথাবার্তা। এমন একটা পরিবেশে এলে মনটা আপনাআপনিই ভালো হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল, এখানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিই।

20250725_181633.jpg

20250725_181653.jpg

আমি এই সুন্দর মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখার জন্য অনেকগুলো ছবি তুলেছি। চেয়েছিলাম, এই শান্ত প্রকৃতি, জেলেদের সহজ জীবন আর মেঘে ঢাকা আকাশের নিচের এই অসাধারণ দৃশ্যটা যেন স্মৃতিতে থেকে যায়। সিরাজগঞ্জের মতি সাহেবের ঘাটে কাটানো সেই বিকেলটা আমার জন্য শুধু একটা ভ্রমণ ছিল না, এটা ছিল প্রকৃতি আর সাধারণ মানুষের জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখার একটা সুযোগ। এই অভিজ্ঞতা আমার মনে গেঁথে থাকবে।আপনাদের মাঝে দারুণ এই মুহূর্ত এবং সিরাজগঞ্জ শহরের যমুনা নদীর মতি সাহেবের ঘাটের সৌন্দর্য শেয়ার করতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।আশা করছি আপনারা সবাই পোস্টটি দারুন ভাবে উপভোগ করেছন।


প্রত্যেকটা ছবি তোলার লোকেশন এবং ডিভাইসের নামঃ

Location
Device:Samsung A33 (5G)

আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

ফোনের বিবরণ

মোবাইলSamsung A33 (5G)
ধরণ"যমুনার তীরে মতি সাহেবের ঘাট"
ক্যমেরা মডেলA33 (48+8+5+2)
ক্যাপচার@mohamad786
অবস্থানসিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Posted using SteemX

Sort:  
 20 hours ago 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

🎉 Congratulations!

Your post has been manually upvoted by the SteemX Team! 🚀

SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem ecosystem.

🔗 Visit us: www.steemx.org

✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5

banner.jpg