নারীকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে

আমি @arpita007 বাংলাদেশ থেকে। কেমন আছেন সকল বাংলাদেশী এবং ইন্ডিয়ান বন্ধু -বান্ধবীগণ? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজকে ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে আবার নতুন একটি ব্লগ নিয়ে ।

সোর্স

সমাজের অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ অপরিহার্য। একটি দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা যদি নারী হয়, তাহলে সেই দেশের উন্নয়নের জন্য নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। আর নারীর ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি হলো—আত্মনির্ভরশীলতা। একজন নারী যখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখে,অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হয়, নিজ সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে।তখনই সে প্রকৃত অর্থে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। তাই বলা যায়, নারীর আত্মনির্ভরশীলতা শুধু প্রয়োজনীয় নয়, বরং সমাজ ও জাতির উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

আত্মনির্ভরশীলতা অর্থ শুধু অর্থ উপার্জনের ক্ষমতা নয়, বরং নিজের জীবন নিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস, জ্ঞান ও দক্ষতার বিকাশ। একজন আত্মনির্ভরশীল নারী তার পরিবারে যেমন সম্মান ও মর্যাদা লাভ করে, তেমনি সমাজে তার একটা দৃঢ় অবস্থান গড়ে ওঠে।

নারীর আত্মনির্ভরশীলতা জরুরি কেন? প্রথমত, এটি নারীর আত্মসম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় সহায়ক। অনেক নারী এখনও পরিবারের বা সমাজের উপর নির্ভরশীল জীবন যাপন করেন। তারা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন না, এমনকি কখনো কখনো নির্যাতনের শিকার হলেও প্রতিবাদ করতে পারেন না, কারণ তাদের হাতে আর্থিক ও সামাজিক শক্তি নেই। কিন্তু একজন আত্মনির্ভরশীল নারী অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন, নিজের ও সন্তানদের অধিকার রক্ষা করতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, আত্মনির্ভরশীল নারী পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারেন। বর্তমান সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। শুধু পুরুষের আয়ে পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। একজন শিক্ষিত ও কর্মরত নারী যদি পরিবারের আয়ে অংশীদার হন, তাহলে পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে, সন্তানদের শিক্ষাদান সহজ হয়, এবং সার্বিকভাবে পরিবারের মান উন্নয়ন ঘটে।

তৃতীয়ত, আত্মনির্ভরশীল নারীরা সমাজে নেতৃত্ব দিতে পারেন। রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা সবক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলে সমাজে ন্যায়বিচার, মানবিকতা ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীর দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহানুভূতির গুণ সমাজকে করে তোলে আরও সুন্দর ও মানবিক।

তবে নারীর আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে তুলতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, শিক্ষার প্রসার। একটি শিক্ষিত নারীই তার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে সচেতন হতে পারে। তাই প্রতিটি কন্যাশিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি, কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ এবং আইনি সহায়তা নারীদের জন্য সহজলভ্য করতে হবে।

এছাড়া সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও জরুরি। অনেক সমাজেই এখনো নারীর বাইরে কাজ করাকে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। এই মানসিকতা বদলাতে হবে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকে যৌথভাবে নারী-স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতার পক্ষে ইতিবাচক বার্তা প্রচার করতে হবে।

নারী শুধু পরিবার গঠনের জন্য নয়, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনেরও এক অপরিহার্য শক্তি। একজন আত্মনির্ভরশীল নারী কেবল নিজের জীবনের মান উন্নয়ন করেন না, বরং তার চারপাশের মানুষদেরও সাহস, উদ্দীপনা ও আশার আলো দেখান। তিনি তার সন্তানদের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের বীজ বপন করেন।

শেষ কথা হলো, নারীর আত্মনির্ভরশীলতা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি সময়ের দাবি। একটি উন্নত, সমতা ভিত্তিক এবং মানবিক সমাজ গঠনে নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে, তাদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলাই হবে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সমাজ, রাষ্ট্র এবং পরিবার—সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে যেন প্রতিটি নারী আত্মনির্ভর হতে পারে, নিজেকে চিনতে পারে, এবং বিশ্বকে জানাতে পারে আমি নারী,আমি পারি।

আমি অর্পিতা নওশিন তিশা। আমি বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার শখের মধ্যে রান্না করতে ভালোবাসি এবং গল্পের বই পড়তেও ভালোবাসি । তাছাড়া অবসর সময়ে ছবি আঁকতে,গান শুনতে এবং বিভিন্ন ধরনের কমেডি, থ্রিলার, হরর মুভি দেখতে পছন্দ করি। এছাড়াও হিন্দি ডাবিং করা নাটকগুলো দেখতে পছন্দ করি।