আপুর সাথে আড়ং এ কিছু সোপিস কেনার অনুভূতি

in আমার বাংলা ব্লগ15 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি, বেচেঁ আছি আর সুস্থ আছি । আর বেচেঁ থাকাটাই হলো বড় পাওয়া। আমাদের চারপশে যা অবস্থা হচ্ছে বা শোনা যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে যে সুস্থ ও বেচেঁ থাকাটাও হচ্ছে আল্লাহর একটি সবচেয়ে বড় নেয়ামত। আর সুস্থ আছি বলেই আপনাদের মঝে হাজারও সমস্যার মধ্য দিয়েও কোন না কোন ভাবে এসে হাজির নতুন নতুন ব্লগ নিয়ে। সেইরকম ভাবে আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে এলাম ।আজ আমি আপনাদের মাঝে লাইফ স্টাইল পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। তাহলে চলুন কি নিয়ে আজ আমার লাইফস্টাইল ব্লগাটি দেখে আসি।

image.png

কয়েকদিন আগে আপুর সাথে আড়ং এ যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আসলে বিষয়টা ছিল বেশ হঠাৎই। আপুর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জন্মদিন সামনে, তাই ওর জন্য কিছু কেনাকাটা করতে হবে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো সাধারণ দোকানেই কিছু কিনব। কিন্তু আপু বলল আড়ং থেকে কিছু বিশেষ কিছু নেওয়া যায়। শুনেই আমারও বেশ আগ্রহ তৈরি হলো। তাই আমরা দুজন রওনা দিলাম আড়ং এর পথে। আড়ং এ ঢোকার সাথে সাথেই চোখে পড়ল সুন্দর সুন্দর সাজানো জিনিসপত্র। সবকিছুতেই এক ধরনের আলাদা আকর্ষণ আছে। প্রতিটি ফ্লোরই আলাদা আলাদা ভাবে সাজানো। কিন্তু আমার সবচেয়ে ভালো লাগলো সেই ফ্লোরটা যেখানে সোপিসগুলো সাজানো ছিল। ছোট ছোট শো-পিস, ভাস্কর্য, হস্তশিল্প আর নানান ধরনের সৃজনশীল কাজের সমাহার সেখানে চোখের সামনে যেন নতুন এক দুনিয়া খুলে দিল। প্রতিটি জিনিস যেন তার ভেতরে লুকিয়ে রেখেছে একটা গল্প। দেখলেই মনে হয় কারো হাতের পরিশ্রম আর মনের শিল্পীসত্তা সেখানে গেঁথে আছে।

WhatsApp Image 2025-09-06 at 19.25.29_41da17b3.jpg

আপু বেশ মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন সোপিস দেখতে শুরু করল। একটার পর একটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল। আমিও ওর সাথে সাথে এগুলো দেখছিলাম। কিছু জিনিস এত সুন্দর ছিল যে চোখ ফেরানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তবে শুধু দেখলেই তো হবে না, কিনতেও হবে। আপু যেটা খুবই সিরিয়াসলি করতে লাগল। ও তো স্বভাবতই একটু দামাদামি করতে ভালোবাসে। তাই দোকানদারকে বলল দাম একটু কমাতে। কিন্তু সমস্যা হলো আড়ং এক দামের দোকান। সেখানে কোনো দর কষাকষি চলে না। শুধু যেটা পছন্দ হবে সেটা নিতে হবে আর ঠিক দামটাই দিতে হবে।

WhatsApp Image 2025-09-06 at 19.25.29_c5bbcd66.jpg

প্রথমে আপু একটু বিরক্ত হল, কারণ ওর তো মনে হচ্ছিল একটু কম দাম হলে ভালো হয়। কিন্তু শেষমেশ যখন দেখল দাম কমানো যাবে না তখন মেনে নিলো এবং কিনে নিলো দুটো সোপিস। আমি লক্ষ্য করলাম ওর পছন্দের সোপিসগুলো সত্যিই আলাদা ধরনের। ওগুলো হাতে নিয়েই আমার মনে হলো এগুলো কারো জন্মদিনের উপহার হিসেবে খুব মানানসই হবে। সেদিন পুরো শপিং এর সময়টাতেই আমার মনটা বেশ ভালো ছিল। আসলে আপুর সাথে এমন শপিং করা আমার খুবই ভালো লাগে। সাধারণত যখন একা কোথাও যাই তখন শপিংটা তেমন মজা লাগে না। কিন্তু আপুর সাথে থাকলে সবকিছুই যেন অন্যরকম হয়। আমরা হাঁটতে হাঁটতে নানান বিষয়ে গল্প করি। কখনও হাসাহাসি করি, আবার কখনও সিরিয়াস হয়ে কিছু আলোচনা করি। একসাথে কাটানো সেই সময়টা আসলে শুধু কেনাকাটার সময় নয়, বরং আমাদের দুজনের জন্য একটা সুন্দর স্মৃতি হয়ে যায়।

WhatsApp Image 2025-09-06 at 19.25.28_8c7e7200.jpg

আড়ং এর ভেতরটা সত্যিই ভিন্ন এক জগৎ। প্রতিটি কোণায় যেন শিল্পের ছোঁয়া লেগে আছে। সাজানো জামাকাপড়, ব্যাগ, অলংকার সবকিছুই যেন আলাদা সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। তবে আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছিল সেই সোপিসের ফ্লোর। কারণ সেখানে প্রতিটি জিনিস একেকটা শিল্পকর্ম। কিছু ছিল কাঠ দিয়ে তৈরি, কিছু মাটির কাজ, আবার কিছু ধাতুর নিখুঁত গড়ন। প্রতিটি জিনিসে কারিগরের আন্তরিকতা বোঝা যাচ্ছিল। আর এগুলো দেখে আমার মনে হচ্ছিল একদিন হয়তো আমি নিজেও এমন কিছু সংগ্রহ করব আমার নিজের ঘরের জন্য। সেদিনের কেনাকাটা শেষে আমরা যখন বাইরে বের হলাম তখন দুজনের মুখেই তৃপ্তির হাসি ছিল। যদিও আপু মনে মনে ভাবছিল দামাদামি না করতে পারায় একটু আফসোস রয়ে গেল। তবে আমি বুঝতে পারছিলাম ওও খুশি হয়েছে কারণ সত্যিই সুন্দর কিছু জিনিস কিনতে পেরেছে। আমিও ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল এই সাদামাটা দিনের মধ্যেও কত সুন্দর একটা মুহূর্ত লুকিয়ে আছে।

WhatsApp Image 2025-09-06 at 19.25.28_505104fb.jpg

আসলে জীবনে এরকম ছোট ছোট মুহূর্তই আমাদের আনন্দ দেয়। হয়তো বড় কোনো আয়োজন নয়, কিন্তু আপুর সাথে একসাথে শপিং করা, হাসাহাসি করা, কোনো দোকানে ঘুরে বেড়ানো এগুলোই আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে। একসাথে কাটানো সময়গুলো মনে জমে থাকে স্মৃতির মতো। কিছুদিন পর যখন এই মুহূর্তগুলোকে মনে পড়বে তখন হয়তো মনে হবে হ্যাঁ আমরা একসাথে এমন সুন্দর সময় কাটিয়েছিলাম। আমার কাছে সেদিনের সবচেয়ে ভালো লাগা বিষয় ছিল আপুর সাথে সময় কাটানো। কারণ উপহার বা জিনিসপত্র যতই দামী বা সুন্দর হোক না কেন, সেই মুহূর্তে একসাথে থাকা আর আনন্দ ভাগ করে নেওয়াই আসল বিষয়। আমি মনে করি জীবনের আনন্দটা আসলে লুকিয়ে থাকে এই ছোট ছোট অভিজ্ঞতার ভেতর। হয়তো প্রতিদিনই আমরা অনেক কাজ করি, অনেক দায়িত্ব পালন করি, কিন্তু এর মধ্যেই যদি একটু সময় বের করে প্রিয়জনদের সাথে কাটানো যায়, তাহলেই জীবনটা অনেক বেশি রঙিন হয়ে ওঠে।

WhatsApp Image 2025-09-06 at 19.25.28_cb5cdf8d.jpg

সেদিন আড়ং এ গিয়ে শুধু কেনাকাটা হয়নি, বরং আমি উপলব্ধি করেছি সম্পর্কের সৌন্দর্য। আপু যেভাবে যত্ন নিয়ে উপহার বেছে নিল, আমি যেভাবে ওর সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিটি জিনিস দেখলাম, সেসব আসলে আমাদের বন্ধনকে আরও শক্ত করল। এই বন্ধনই আসল সম্পদ। আমি জানি ভবিষ্যতে হয়তো আরও অনেকবার এভাবে শপিংয়ে যাবো। আবারও হয়তো কোনো ফ্লোরে দাঁড়িয়ে নানান জিনিস দেখবো, হয়তো আবার আপু দামাদামি করতে চাইবে, আবারও হয়তো দোকানদার বলবে এখানে এক দাম। কিন্তু এসবের মধ্যেই তৈরি হবে নতুন নতুন স্মৃতি। আর একদিন এইসব স্মৃতি মনে করলে মনটা ভরে যাবে এক অদ্ভুত শান্তি আর আনন্দে।

WhatsApp Image 2025-09-06 at 19.25.27_d981af3f.jpg

আমার পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা। আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

image.png