জেনারেল রাইটিং- " নিজের কষ্টের কথা কাউকে বুঝিয়ে বলা যায় না ”

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার জেনারেল রাইটিংটি দেখে আসি যে কি বিষয় নিয়ে লেখলাম। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমার জেনারেল রাইটিং এর বিষয় হলো "মানুষের জীবনের সব স্বপ্নগুলো পূরণ হয় না কেন?"

sad-9077558_1280.jpg

source

আমরা সবাই কমবেশি কষ্ট পাই। জীবনের পথে চলতে গিয়ে কখনও পরিবার, কখনও বন্ধু, কখনও প্রেম, আবার কখনও নিজের ভেতরের দ্বন্দ্ব থেকে জন্ম নেয় একেক রকম কষ্ট। কিন্তু সমস্যা হলো — সেই কষ্টগুলো আমরা খুব কম সময়ই অন্যকে ঠিক করে বোঝাতে পারি। অনেক সময় মন চায় কাঁদতে, কিছু বলতে, কিন্তু মুখ খুললেই মনে হয়, “ও তো বুঝবে না”। এই লেখায় আমরা খুঁজে দেখব কেন আমরা নিজেদের কষ্ট অন্যদের বোঝাতে পারি না, এবং কীভাবে এই অনুভূতি সামলানো যায়।

প্রত্যেক মানুষ নিজের মতো করে জীবন দেখে, অনুভব করে। আপনার যেটা খুব কঠিন, অন্য কারো কাছে সেটা সামান্যই মনে হতে পারে। যেমন — কেউ হয়তো কোনো কথায় ভীষণ কষ্ট পেলেন, কিন্তু যিনি কথাটি বলেছেন, তিনি বুঝতেই পারলেন না তাঁর কথায় এতটা ব্যথা হতে পারে।এই ‘বোঝার ফারাক’টা তৈরি করে দেয় এক মানসিক দেয়াল। আমরা ভাবি, “বলেও তো লাভ নেই, সে বুঝবে না”। কষ্ট শুধু একটি অনুভব নয়, সেটি অনেক সময় জটিল স্মৃতি, পরিস্থিতি, মানসিক দ্বিধা, অপরাধবোধ, ভয় আর হতাশার মিশ্রণ। এত জটিল অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা খুব কঠিন। আমরা হয়তো বলতে চাই, কিন্তু ঠিক শব্দ খুঁজে পাই না। এভাবেই বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যাই। চোখ ভিজে ওঠে, কিন্তু মুখে কিছুই আসে না। অনেকেই মনে করেন, যদি কষ্টের কথা বলি, তাহলে অন্যরা হয়তো দুর্বল ভাববে। কেউ হয়তো বলবে, “তুমি তো সব সময় এমন করো” বা “এতে এমন কী হয়েছে?” — এই ভয়ও আমাদের থামিয়ে দেয়। বিশেষ করে সমাজে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই ভয় বেশি কাজ করে — "ছেলে হয়ে কাঁদছো কেন?", "তোমার তো শক্ত হওয়া উচিত!" — এমন কথাগুলো মনের কষ্ট আরও গোপন করে ফেলে দেয়।

অনেক সময় আমরা কাউকে মনের কথা বলি, কিন্তু সেই মানুষটি হয়তো গুরুত্ব দেয়নি, কানে তুলেনি, বা আরও কষ্টের কথা শুনিয়ে দিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা মনে রেখে আমরা পরের বার চুপ থাকি। একবার বিশ্বাসভঙ্গ হলে আবার কথা বলার সাহস আসতে চায় না। আধুনিক জীবনে সবাই নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। কাজের চাপ, পরিবার, প্রযুক্তি — প্রতিটি মানুষই যেন নিজের জীবনের লড়াইয়ে ব্যস্ত। তাই কষ্টের কথা বলতেও ভয় লাগে — “ও তো নিজের জীবনেই জর্জরিত, আমার কথা শুনবে কেন?” এই ভাবনা আমাদের কথা গিলে ফেলতে শেখায়।

আমাদের সমাজে এখনও মানসিক কষ্টকে ‘লাক্সারি’ সমস্যা মনে করা হয়। যেমন কেউ যদি বলেন, “আমার মন খারাপ, আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি”, তখন অনেকেই বলেন, “এসব ভাবলে চলবে না”, “নেতিবাচক চিন্তা বাদ দাও”, “তোমার তো সবই আছে”। এই অজ্ঞতা মানুষের কষ্টকে ছোট করে ফেলে। আর মানুষ বুঝে যায় — কষ্টের কথা বললেও কেউ সিরিয়াস হবে না। নিজের কষ্ট কাউকে বোঝানো সত্যিই সহজ নয়। কারণ প্রতিটি কষ্ট নিজের মতো করে গড়া — তাতে আবেগ, অভিজ্ঞতা আর অনুভব জড়িয়ে থাকে। কিন্তু তাই বলে চুপ করে থাকলে কষ্ট বাড়তেই থাকে। মনে রাখুন, কথা বললে পথ খোলা যায়। হয়তো সবাই বুঝবে না, কিন্তু একজন মানুষ যদি মন দিয়ে শোনে, সেই একটিই অনেক সময় অনেক বড় প্রশান্তি দিতে পারে। তাই সাহস রাখুন। দরকার হলে ধীরে ধীরে বলুন, নিজেকে সময় দিন। এবং যদি কেউ কখনও আপনাকে তাঁর কষ্টের কথা বলতে চায় — তাকেও সময় দিন। কারণ কষ্ট শেয়ার করতে পারা মানেই অর্ধেকটা হালকা হয়ে যাওয়া।

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

image.png