জেনারেল রাইটিং- অধিকারহীন মানুষের সমাজ, বিচার নেই, আশারও আলো নেই

in আমার বাংলা ব্লগyesterday

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার জেনারেল রাইটিংটি দেখে আসি যে কি বিষয় নিয়ে লেখলাম। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমার জেনারেল রাইটিং এর বিষয় হলো "অধিকারহীন মানুষের সমাজ, বিচার নেই, আশারও আলো নেই।

image.png

[source](AI দিয়ে তৈরি)

আজকের সমাজে আমরা প্রায়শই এমন একটি দৃশ্য দেখি—অসংখ্য মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা দপ্তরে, নানা দারে। কারো চোখে হতাশা, কারো মুখে ক্লান্তি, আবার কেউ দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ—কেবল একটা স্বাক্ষরের অপেক্ষায়। তারা কেউ ক্ষতিপূরণ পায় না, কেউ সঠিক চিকিৎসা পায় না, কেউ জমির কাগজ হারিয়ে ফেলে, তো কেউ চাকরির আশায় গলায় দড়ি দেয়। অথচ তারা সমাজেরই অংশ। তারাও মানুষ, তারাও নাগরিক। তাহলে কেন তারা আজও তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত? এই প্রশ্নটি আমরা কেউ জোরে বলতে পারি না। কারণ আমরা যেন সবাই কিছুর কাছে বন্দি—কে জানে, ভয়? চাপ? না কি নিজের সুবিধার মোহ?

যে দেশে একজন অসুস্থ বৃদ্ধ হাসপাতালে গিয়ে দিনের পর দিন শুধু টিকিট কাটার অপেক্ষায় থাকে, অথচ কোনো প্রভাবশালী ফোন করলেই মিনিটে চিকিৎসা পায়—সে দেশে ন্যায্যতা কোথায়? একজন মা তার সন্তানের জন্য স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে হয়রান হয়, অথচ আরেকজন বাবা টাকা ছড়িয়ে সোজাসাপ্টা ভর্তির কাগজ হাতে পান—তখন বোঝা যায়, এই সমাজে অধিকার একটি শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত, আর বঞ্চনা বাকি সবার জন্য। একজন যুবক বেকার, সে সারাদিন চাকরির খোঁজ করে, পরীক্ষায় ভালো করেও চাকরি পায় না, কারণ সেখানে কোটা আছে টাকার, পরিচয়ের, রাজনীতির। এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম বঞ্চনার উত্তরাধিকার হয়ে বয়ে চলেছে কেবল হতাশা আর হাহাকার।

সমস্যা শুধু প্রাপ্য না পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আরও বড় সমস্যা হলো—এই মানুষগুলোর কথা শোনার কেউ নেই। কেউই চায় না এই ‘ঝামেলাপূর্ণ’ মানুষগুলোর গল্প শুনতে।অফিসে গেলে বলা হয়, “আজ না, কাল আসেন।” থানায় গেলে বলা হয়, “আগে দরখাস্ত দেন, পরে দেখা যাবে।” মন্তব্য করলে বলা হয়, “তোমার সমস্যা নিয়ে সরকার পড়ে আছে নাকি?” কিন্তু সরকার কিসের জন্য? সমাজ কিসের জন্য? রাষ্ট্রব্যবস্থা কাদের জন্য? উত্তর একটাই—মানুষের জন্য। আর মানুষ মানেই কেবল ধনী বা ক্ষমতাবান নয়, বরং সেই গরিব, নীরহ, নিরীহ মানুষেরাও, যারা আজও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে লড়ছে।

এই প্রশ্ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যখন হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে, তখন কেউ তো এগিয়ে আসতে পারত। কেউ তো বলতে পারত—“না, এটা ঠিক হচ্ছে না।” কিন্তু না, কেউ বলে না। কেউ সাহস করে না। কারণ— প্রতিবাদ করলে হয়রানি, মামলা, হুমকি—এই ভয় সবার মনকে বন্দি করে রেখেছে। কেউ চায় না নিজের সুবিধা হারাতে। তাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ না খুলে নিজেকে ‘স্মার্ট’ ভাবতে পছন্দ করে। “আমি তো ভালো আছি, আমার কী?”—এই মানসিকতা সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে গভীর সংকটের দিকে। কেউ অন্যায়ের বিচার চাইলে জানে, সে আরেকটি কঠিন যুদ্ধের সামনে পড়বে। মামলা, কোর্ট, ঘুষ, সময়... এসব মিলিয়ে মানুষ বিচার চাওয়ার আগ্রহই হারিয়ে ফেলে।

এই সমাজের একটি ভয়াবহ দিক হলো—সবার হাত-পা যেন বাঁধা। কেউ রাজনৈতিক দলে জড়িত, কেউ কর্পোরেট চাকরির চাপে চুপ, কেউ আবার শুধু ‘লাইভ টিকতে’ চায় বলে মুখ বন্ধ রাখে। সাংবাদিক চায় সত্য বলতে, কিন্তু সম্পাদক বলেন, “এটা ছাপা যাবে না।”শিক্ষক চায় শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে, কিন্তু প্রধান শিক্ষক বলেন, “বেশি কথা বলো না, সমস্যা হবে।” চাকরিজীবী চায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, কিন্তু অফিস বলে, “চুপ থাকো, না হলে বাদ দিবো।” এভাবেই সবাই নীরবে সহ্য করছে। এক একজন বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মী, সচেতন নাগরিক হয়ে উঠতে পারত সমাজের বিবেক—কিন্তু তারা নিজেরাই আজ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নীরব দর্শক।

আজ আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে টাকা, পরিচয়, রাজনৈতিক সংযোগ—এই তিনটি থাকলে আপনি সবকিছু পেয়ে যাবেন। আর যদি এই তিনটির একটিও না থাকে, তাহলে আপনি সমাজে অবাঞ্ছিত। একজন খেটে খাওয়া রিকশাচালক সারাদিন রোদে ঘাম ঝরিয়ে ৫০০ টাকা রোজগার করে। কিন্তু কোনো VIP গাড়ি তার রিকশা চাপা দিলে তার আর কেউ খোঁজ নেয় না। একজন ভিক্ষুক যদি পথের পাশে বসে থাকে, পুলিশ তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু একজন ব্যবসায়ী রাস্তা দখল করে দোকান বানিয়ে বসলে পুলিশ ‘ভাড়া’ নিয়ে চুপ থাকে। এই বৈষম্যই বলে দেয়—এই সমাজ আসলে দুর্বলদের জায়গা নয়।

এই প্রশ্নটা যখন মাথায় আসে, তখন মনে হয় আমরা খুব অসহায়। কিন্তু না, আসলে আমরা কিছুই করি না—এই হতাশাই আমাদের দুর্বল করে তুলেছে। আমরা যদি চাই, আমরা পরিবর্তন আনতে পারি: অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, অন্তত সামাজিকভাবে আওয়াজ তুলি। কারো কষ্টকে হালকা করে দিলে সেটাই মানবতা। আমরা যদি শিশুদের মধ্যে ন্যায়ের বোধ গড়ে তুলি, ভবিষ্যৎ সমাজে এতোটা বঞ্চনা থাকবে না। কারণ গণমাধ্যমের শক্তি অনেক, যদি তারা চায়। সমাজের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে এখন একটা পোস্ট-ই যথেষ্ট হতে পারে।

এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের হাতেই। সমাজটা আমাদেরই, রাষ্ট্রটাও আমাদের। কিন্তু আমরা যদি চুপ করে থাকি, তাহলে যারা অন্যায় করে তারাই এগিয়ে যাবে। আমরা যেন এমন সমাজ গড়ি যেখানে— প্রভাবশালীদের আগে দরিদ্রের কথা শোনা হয়, ন্যায়বিচার শুধু কাগজে না, বাস্তবেও প্রতিষ্ঠা পায়, আর কেউ নিজেকে অধিকারহীন মনে না করে। আজ যদি আমরা নিজেরা নিজেদের দায়িত্ব না নিই, তাহলে কাল হয়তো আমরাও এই ভাঙা সমাজের আরেকটি “অসহায় মুখ” হয়ে উঠব। যে মুখ ন্যায্য দাবি জানাবে, কিন্তু শুনবে না কেউ।

আজকের সমাজে আমরা প্রায়শই এমন একটি দৃশ্য দেখি—অসংখ্য মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা দপ্তরে, নানা দারে। কারো চোখে হতাশা, কারো মুখে ক্লান্তি, আবার কেউ দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ—কেবল একটা স্বাক্ষরের অপেক্ষায়। তারা কেউ ক্ষতিপূরণ পায় না, কেউ সঠিক চিকিৎসা পায় না, কেউ জমির কাগজ হারিয়ে ফেলে, তো কেউ চাকরির আশায় গলায় দড়ি দেয়। অথচ তারা সমাজেরই অংশ। তারাও মানুষ, তারাও নাগরিক। তাহলে কেন তারা আজও তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত? এই প্রশ্নটি আমরা কেউ জোরে বলতে পারি না। কারণ আমরা যেন সবাই কিছুর কাছে বন্দি—কে জানে, ভয়? চাপ? না কি নিজের সুবিধার মোহ?

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

image.png