জেনারেল রাইটিং- “ক্ষমতার ছায়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মেধার আলো”

in আমার বাংলা ব্লগyesterday

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার জেনারেল রাইটিংটি দেখে আসি যে কি বিষয় নিয়ে লেখলাম। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমার জেনারেল রাইটিং এর বিষয় হলো " ক্ষমতার ছায়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মেধার আলো।"


image.png

source

একটি সভ্য সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি হলো শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের ভেতরে আলো জ্বালায়, তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে, সত্যকে চিনতে শেখায়। আবার একটি সমাজের শক্তি প্রকাশ পায় ক্ষমতার মাধ্যমে। ক্ষমতা থাকলে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে। কিন্তু সমস্যা তখনই হয়, যখন ক্ষমতা শিক্ষার জায়গা দখল করে নেয়। তখন সমাজ থেকে হারিয়ে যায় ন্যায়বিচার, যোগ্যতা আর মানবিকতা। আজকের বাস্তবতায় আমরা প্রায়ই দেখতে পাই—শিক্ষা নয়, বরং ক্ষমতার জোরেই সব কিছু চলছে। এই সত্যটা কষ্টদায়ক হলেও অস্বীকার করার উপায় নেই।

শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সচেতন করা, যুক্তিবাদী চিন্তা শেখানো, নৈতিকতা গড়ে তোলা এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলা। একজন শিক্ষিত মানুষ শুধু বই মুখস্থ করে জ্ঞান অর্জন করে না—সে মানবিক হয়, ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য বোঝে, নিজের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলে এবং সমাজকে আলোকিত করতে শেখে। একসময় আমরা শুনতাম, “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।” আজকের দিনে মনে হয় এই কথাটি বদলে গিয়ে হয়েছে, “ক্ষমতাই উন্নতির সিঁড়ি।” এই ভুল মানসিকতা শুধু একটি প্রজন্মকে নয়, পুরো সমাজকেই অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ক্ষমতা সবসময় খারাপ কিছু নয়। বরং সঠিক হাতে ক্ষমতা থাকলে তা দিয়ে সমাজের কল্যাণ হয়। ন্যায়ভিত্তিক, গণমুখী এবং জবাবদিহিমূলক ক্ষমতা হলে তাতে দেশের উন্নতি হয়, মানুষ স্বস্তি পায়। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় আমরা যা দেখি তা একেবারেই ভিন্ন। ক্ষমতা মানে হয়ে দাঁড়িয়েছে পদ, পরিচয়, টাকা, প্রভাব, ভয় আর দমন। আজ যে যত বড় পদে আছে, তার কথাই শেষ কথা। সে যদি ভুলও করে, কেউ সাহস করে মুখ খোলে না। অন্যদিকে একজন শিক্ষিত, মেধাবী মানুষ চুপ করে থাকে—কারণ তার পেছনে কোনো প্রভাবশালী নেই, নেই রাজনৈতিক ছায়া।

আমাদের চারপাশে অসংখ্য উদাহরণ আছে যেখানে মেধা হেরে যাচ্ছে ক্ষমতার কাছে। ধরা যাক চাকরির বিষয়টি। একজন ছাত্র ভালো রেজাল্ট করেছে, পড়াশোনায় দক্ষ, প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে—শুধু এই কারণে যে তার পরিচিত কেউ প্রভাবশালী নয়। আর অন্যদিকে, রাজনৈতিক সুপারিশে বা ক্ষমতার জোরে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কেউ চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু একটি ঘটনা নয়, বরং প্রতিদিনের বাস্তবতা।

রাফি নামের একজন যুবক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স করেছে। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণও হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাদ দেওয়া হলো—কারণ তার জন্য সুপারিশ করার মতো কেউ নেই। অন্যদিকে তার সহপাঠী তানভীর, যে পড়াশোনায় ততটা ভালো নয়, কিন্তু রাজনৈতিক লিংক থাকায় সহজেই চাকরি পেয়ে গেল। এই ধরনের ঘটনা শুধু রাফি বা তানভীরের নয়, আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর ফলে একদিকে মেধাবীরা হতাশ হচ্ছে, অন্যদিকে অযোগ্যরা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে যাচ্ছে।

অনেক অফিস বা প্রতিষ্ঠানে আমরা দেখি বড়পদের কর্মকর্তা শিক্ষায় অযোগ্য, কিন্তু ক্ষমতার দাপটে তার কথাই ফাইনাল। তিনি অন্যায় সিদ্ধান্ত নিলেও সবাই তা মেনে নিতে বাধ্য। নিচের কর্মচারীরা তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না, কারণ প্রতিবাদ করলে বদলি, মামলা কিংবা চাকরি হারানোর ভয় থাকে। এই ভয় মানুষকে করে তোলে নির্বাক, আর সমাজ হারায় তার সত্য বলার সাহস। শিক্ষিত সমাজ যখন ভয়ে চুপ থাকে, তখন অন্যায়ের শক্তি আরও বেড়ে যায়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও এখন ভিন্ন নয়। শিক্ষক নিয়োগ, প্রমোশন, ভর্তি কিংবা পরীক্ষার ফলাফল—সব জায়গায় ক্ষমতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। অনেক যোগ্য শিক্ষক উপেক্ষিত থাকেন শুধু এজন্য যে তারা তোষামোদ করতে পারেন না। আর যারা প্রভাবশালী মহলের কাছে মাথা নত করতে পারেন, তারা সহজেই সুযোগ পান। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, যা হওয়া উচিত ছিল জ্ঞানের মন্দির, তা পরিণত হচ্ছে ক্ষমতার খেলাঘরে।

মিডিয়াও এখন অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতার প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। আজ একজন সৎ, শিক্ষিত বা নীতিবান মানুষের ভালো কাজ হয়তো খবরের পাতায় জায়গা পায় না। কিন্তু বিত্তশালী বা ক্ষমতাবানদের সামান্য ঘটনা নিয়েও বড় করে প্রচার হয়। একজন গবেষক বা সমাজকর্মীর বছরভর কঠোর পরিশ্রম হয়তো কেউ জানেও না, কিন্তু কোনো অভিনেতা বা রাজনীতিকের বিলাসী জীবন নিয়ে রিপোর্ট হয়। এর মানে হলো শিক্ষিত মানুষের অবদানকে আমরা মূল্য দিচ্ছি না। ফলস্বরূপ, সমাজে গুরুত্ব পাচ্ছে সেইসব লোক যারা বিতর্ক, দম্ভ আর প্রভাব দেখাতে জানে।

আজকাল আমরা প্রায়ই শুনি—“ভালো মানুষ হয়ে চলা যায় না।” কেন মানুষ এ কথা বলে? কারণ তারা দেখে, শিক্ষিত ও নীতিবানরা নীরব থেকে যায়, কিন্তু ক্ষমতাবানরা চিৎকার করে নিজেদের ভুলকেও সঠিক প্রমাণ করে তোলে। আর সমাজ সেটি মেনে নেয়। যে প্রজন্ম এসব দেখছে, তারা ধীরে ধীরে শিখে নিচ্ছে—“পড়াশোনা করে লাভ নেই, বরং যেভাবেই হোক ক্ষমতা অর্জন করো।” এই মানসিকতা ভয়াবহ। এতে জন্ম নিচ্ছে এক ধরনের মনোভাব যেখানে লক্ষ্য নয়, বরং কৌশলই মুখ্য। নীতি নয়, প্রয়োজনই হয়ে যাচ্ছে সবকিছু।

তবে সবই অন্ধকার নয়। এখনো কিছু মানুষ আছেন যারা সত্যিকারের শিক্ষা ধারণ করেন। তারা আপস করেন না, অন্যায়ের সঙ্গে হাত মেলান না, মাথা নত করেন না। তারা হয়তো সংখ্যায় কম, কিন্তু তাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে শিক্ষা এখনো বেঁচে আছে। তবে তাদের পথ সহজ নয়। তারা অবহেলা সয়ে চলেন, সম্মান না পেয়েও সংগ্রাম করেন। তারা সমাজের আলো হয়ে থাকেন, যদিও চারপাশে অন্ধকার ঘিরে ধরে।

ক্ষমতার প্রয়োজন আছে—এটা সত্যি। একটি সমাজ চালাতে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং উন্নয়ন করতে ক্ষমতা অপরিহার্য। কিন্তু সেই ক্ষমতা যদি অশিক্ষিত, অভব্য, নীতিহীন মানুষের হাতে যায়, তবে তা সমাজ ধ্বংস করে দেয়। আবার শিক্ষা যদি ক্ষমতার স্বীকৃতি না পায়, তবে মানুষ শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তখন সমাজে অন্যায়, দুর্নীতি আর অযোগ্যতার দাপট বেড়ে যায়।

আমাদের এখন প্রয়োজন এমন এক সমাজ, যেখানে শিক্ষা ও ক্ষমতা পরস্পরের পরিপূরক হবে। শিক্ষা হবে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক, আর ক্ষমতা থাকবে শিক্ষিত ও যোগ্য মানুষের হাতে। তবেই সমাজে ন্যায়, সত্য এবং উন্নতি নিশ্চিত হবে। না হলে আমরা চলতে থাকব অযোগ্যদের দাপটে, আর মেধাবীরা চুপচাপ হারিয়ে যাবে অন্ধকারে।

আমার পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা। আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

image.png