আপন কফি হাউজ হতে কফি খাওয়ার অনুভূতি
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি, বেচেঁ আছি আর সুস্থ আছি । আর বেচেঁ থাকাটাই হলো বড় পাওয়া। আমাদের চারপশে যা অবস্থা হচ্ছে বা শোনা যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে যে সুস্থ ও বেচেঁ থাকাটাও হচ্ছে আল্লাহর একটি সবচেয়ে বড় নেয়ামত। আর সুস্থ আছি বলেই আপনাদের মঝে হাজারও সমস্যার মধ্য দিয়েও কোন না কোন ভাবে এসে হাজির নতুন নতুন ব্লগ নিয়ে। সেইরকম ভাবে আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে এলাম ।আজ আমি আপনাদের মাঝে লাইফ স্টাইল পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। তাহলে চলুন কি নিয়ে আজ আমার লাইফস্টাইল ব্লগাটি দেখে আসি।

খিলগাঁওয়ের হৃদয়ে ছোট্ট কিন্তু জমজমাট একটি নাম হচ্ছে আপন কফি হাউজ। এই কফি হাউজের জনপ্রিয়তা এতটাই যে আশপাশের অনেক এলাকার মানুষ এখানে শুধু এক কাপ কফির স্বাদ নিতে আসে। বিকেলের দিকে অথবা ছুটির দিনে এখানে গেলে বোঝা যায় ঠিক কতটা ব্যস্ত এই জায়গাটি। কফি খেতে এলে প্রথমেই চোখে পড়ে লম্বা অপেক্ষার লাইন। অনেক সময় সিট পেতে বেশ ধৈর্য ধরতে হয়। এই ধৈর্যের মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে এক ধরনের আনন্দ যা আসলেই কফি প্রেমীদের কাছে বিশেষ অনুভূতি তৈরি করে।

সেদিন আমিও আমার আপুর সাথে সেখানে গিয়েছিলাম। আমরা দুজনই কফি ভালোবাসি আর বিশেষ করে আমি চকলেট ফ্লেভারের কফির জন্য ভীষণ পাগল। বিকেলের দিকে যখন আমরা আপন কফি হাউজে পৌঁছালাম তখন ভেতরে জায়গা পাওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছিল। কাচের দরজা খুলেই ভেতরে ঢুকতেই উষ্ণ কফির গন্ধ নাকে এসে লাগলো। সেই গন্ধ যেন তৎক্ষণাৎ মনের সব ক্লান্তি দূর করে দিল। চারপাশে কফির মেশিনের মৃদু শব্দ, মানুষজনের কথাবার্তা আর কফির সুগন্ধ একসাথে এক অসাধারণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। আমরা সিট খুঁজতে খুঁজতে ভেতরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। সময় যেন একটু ধীরে চলছিল কিন্তু চারদিকের উচ্ছ্বাস আর কফির ঘ্রাণ অপেক্ষাকে সহজ করে দিচ্ছিল।

প্রায় পনেরো মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থাকার পর অবশেষে আমরা একটি খালি টেবিল পেলাম। সিটে বসতেই যেন একরকম স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম। চারপাশের পরিবেশের দিকে তাকিয়ে মনে হলো এই কফি হাউজ শুধু কফি খাওয়ার জায়গা নয়, এটি মানুষের গল্প শোনার আর নিজেদের গল্প বলার একটি মিলনস্থল। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, প্রিয়জনের সাথে মিষ্টি মুহূর্ত কিংবা একা বসে নিজের সময় কাটানোর জন্যও জায়গাটি একেবারে উপযুক্ত। আমরা বসার পর মেন্যু হাতে নিয়ে প্রথমেই চোখ পড়লো চকলেট কফির দিকে। দামটাও বেশ সাশ্রয়ী মনে হলো। দুটো চকলেট কফির জন্য ৩২০ টাকা দিতে হবে জেনে আমরা খুব খুশি হলাম।

অর্ডার করার পর যখন কফি তৈরি হচ্ছিল তখন আমরা দুজন চারপাশের সৌন্দর্য আর মানুষের হাসিমুখ দেখতে দেখতে সময় কাটাচ্ছিলাম। কিছু টেবিলে বন্ধুদের প্রাণখোলা হাসি, কোথাও গম্ভীর আলোচনা আবার কারো হাতে বই নিয়ে কফির চুমুক—সব মিলিয়ে এক অনন্য পরিবেশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের টেবিলে গরম ধোঁয়া ওঠা দুটো চকলেট কফি এসে পৌঁছালো। কফির গাঢ় রঙ, উপরের দিকের হালকা ফেনা আর মিষ্টি চকলেটের গন্ধ মুহূর্তেই মন ভরে দিল। প্রথম চুমুক দিতেই বুঝলাম কেন এত মানুষ এই কফি হাউজের কফির প্রশংসা করে। কফির স্বাদ ছিল মোলায়েম, তিক্ততার সাথে চকলেটের মিষ্টতা এমনভাবে মিশে ছিল যে প্রতিটি চুমুকই এক অনন্য অনুভূতি দিচ্ছিল।

আমি ধীরে ধীরে কফির স্বাদ উপভোগ করছিলাম। প্রতিটি চুমুক যেন ক্লান্ত শরীরে নতুন উচ্ছ্বাস জাগাচ্ছিল। আপুও একইভাবে কফির প্রশংসা করতে করতে চুমুক দিচ্ছিল। আমরা কথা বলছিলাম নানা বিষয়ে। কখনো শৈশবের গল্প, কখনো ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, আবার কখনো একেবারেই নির্দিষ্ট কোন বিষয় ছাড়া গল্প। এই কফি হাউজের ভেতরে বসে সময় যেন থমকে গিয়েছিল। বাইরের ব্যস্ত শহরের শব্দ যেন এখানে এসে হারিয়ে গেছে। শুধু ছিল আমাদের হাসি, গল্প আর কফির উষ্ণ স্বাদ। কফি খাওয়ার সময় চোখে পড়লো দেয়ালে ঝোলানো সুন্দর কিছু ছবি আর আলোর সাজসজ্জা। হালকা সঙ্গীত ভেসে আসছিল স্পিকারের মাধ্যমে যা পরিবেশকে আরও আরামদায়ক করে তুলেছিল। এখানে বসে মনে হলো শহরের কোলাহলের মধ্যেও কীভাবে একটি ছোট্ট জায়গা মানুষকে এতটা প্রশান্তি দিতে পারে। আপন কফি হাউজ যেন শুধু কফির স্বাদই নয়, একটি অভিজ্ঞতা উপহার দেয়। কফি শেষ করার পরও আমরা তাড়াহুড়া করিনি। টেবিলে বসে চারদিকের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে বুঝলাম, এই জায়গাটির সৌন্দর্য শুধু কফির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানে যারা আসে তারা আসলে কিছু শান্ত সময়ের খোঁজে আসে। হয়তো কারও দিনের ক্লান্তি দূর করতে, কারও মন ভালো করতে, কারও গোপন গল্প ভাগাভাগি করতে। এখানকার প্রতিটি টেবিলে হয়তো অনেক গল্পের জন্ম হয়, অনেক স্মৃতি তৈরি হয়।

আমরা ধীরে ধীরে আমাদের কফি শেষ করলাম। শেষ চুমুকের পরও কাপে যে গাঢ় গন্ধ রয়ে গিয়েছিল তা যেন দীর্ঘ সময় মনে থেকে গেল। ৩২০ টাকায় এত সুন্দর একটি মুহূর্তের স্বাদ পাওয়া সত্যিই আনন্দের। শুধু কফির স্বাদ নয়, এখানকার প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য আসলে অনেক বেশি। আপন কফি হাউজে আসার পুরো অভিজ্ঞতাটি ছিল একেবারে বিশেষ। লম্বা অপেক্ষার পর সিট পাওয়া থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে কফি খাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তেই ছিল আনন্দ আর তৃপ্তি। খিলগাঁওয়ের ব্যস্ত জীবনে এমন একটি জায়গা সত্যিই অসাধারণ। যারা কফি ভালোবাসেন তারা একবার এখানে এলে বুঝবেন কেন এত মানুষ এই জায়গার প্রশংসা করে। বাড়ি ফেরার সময় মনে হচ্ছিল সেই কফির উষ্ণতা যেন এখনো জিভে লেগে আছে। মনে হচ্ছিল আবার কখনো আপুর সাথে অথবা বন্ধুদের নিয়ে এখানে আসতে হবে। এই কফি হাউজ শুধু কফির জন্য নয়, এক টুকরো শান্ত সময়ের জন্যও একেবারে পারফেক্ট। শহরের মধ্যে একটু স্বস্তি খুঁজে পেতে চাইলে এবং সত্যিকারের চকলেট কফির স্বাদ নিতে চাইলে আপন কফি হাউজ অবশ্যই সবার তালিকায় থাকা উচিত।

পরিশেষে আপনাদের সকলের মঙ্গল কামনা করে শেষ করছি। এতক্ষন আমার এই ব্লগটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য সকল কে অনেক ধন্যবাদ।
পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা আমার ইউজার নাম @mahfuzanila আমমি পছন্দ করি ঘোরাঘুরি ও ভ্রমন ছবি আঁকা, বিভি ন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে দারুণ পছন্দ করি। আর বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে,মন খারাপ থাকলে গান শুনতে ও গান গাইতে ঘুরতে যেতে আর সবচেয়ে বেশী ঘুমাতে।
@tipu curate
;) Holisss...
--
This is a manual curation from the @tipU Curation Project.
Upvoted 👌 (Mana: 3/9) Get profit votes with @tipU :)