বউচি খেলা — ছেলেবেলার অমলিন আনন্দ

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে মনমানসিকতা ভালো নেই। আর মনমানসিকতা যদি ভালো না থাকে তাহলে শরীর মন অচল হয়ে পড়ে। তারপরেও আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি শৈশবের কিছু কথা নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার শৈশবের কিছু স্মৃতির অনুভূতি জেনে আসি।

image.png

ছেলেবেলার স্মৃতির মাঝে বউচি খেলার কথা উঠলে চোখে যেন এক অন্যরকম উজ্জ্বলতা ফুটে ওঠে। আমার ও আমার বন্ধুদের জীবনের এক বিশেষ অংশ ছিল এই খেলা, যা শুধু আনন্দই নয়, কৌশল, বন্ধুত্ব আর সাহসের এক অপরিসীম উৎসব। সরকারি কোয়ার্টারের ছোট ছোট গলিগুলো বউচির জন্য আমাদের মাঠ হয়ে উঠত, যেখানে প্রতিদিন আমরা দৌড়ঝাঁপ করে, হাসাহাসি করে কাটাতাম আমাদের মূল্যবান সময়। বউচি খেলা ছিল দলবদ্ধ খেলা। একজন বউচি থাকতো, যার কাজ ছিল অন্য সবাইকে ধরার চেষ্টা করা, আর অন্যরা পালাত। খেলা শুরু হলে সবাই বেশ সতর্ক থাকত, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খেলা রূপ নেয় এক বিশাল উত্তেজনায়। পালানো আর ধরা পড়ার মাঝে আমরা যেমন শারীরিক চর্চা করতাম, তেমনি বন্ধুত্ব ও কৌশল শেখার সুযোগ পেতাম।

আমাদের বউচি খেলার নিয়ম ছিল সহজ, তবে খেলোয়াড়রা নিজেদের মতো করে নতুন নিয়ম তৈরি করত এবং মজার উপায় বের করত। কেউ কখনো বউচি ধরা পড়ার আগে বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করত, আবার কেউ লুকিয়ে থাকার জন্য নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করত। এই ছোট ছোট কৌশল আমাদের মেধা ও চপলতা বৃদ্ধি করত। বর্ষার দিনে বউচি খেলার আনন্দ এক অন্যরকম। বৃষ্টির পানি জমে থাকা পুকুর আর কাদা আমাদের খেলার মাঠকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলত। আমরা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েও থামতাম না, বরং আরও বেশি প্রাণপণ দৌড়াতে থাকতাম। বৃষ্টির ঠাণ্ডা জল আর কাদামাটির মাখামাখিতে খেলাধুলার সেই স্মৃতি আজও মনে ভাসে, যেন আজকের দিন।

শীতের সকালে গরম কাপড় পরে বউচি খেলা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করত। আমরা দৌড়ে শরীর গরম করতাম, আবার ঠাণ্ডায় গরম চা খেতে গিয়ে নতুন শক্তি অর্জন করতাম। বউচির মাধ্যমে আমাদের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হত, কারণ দলবদ্ধভাবে খেলতে গিয়ে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস তৈরি হতো। বউচি খেলা কেবল আনন্দের উৎস ছিল না, বরং তা আমাদের মধ্যে শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ এবং সহযোগিতার গুণাবলী গড়ে তুলতে সাহায্য করত। আমরা শিখতাম কীভাবে দল হিসাবে কাজ করতে হয় এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও হার না মানতে হয়।

আমাদের সরকারি কোয়ার্টারের সেই ছোট ছোট রাস্তা, উঠোন আর গাছের ছায়া বউচির জন্য এক আদর্শ মাঠ ছিল। সেখানে আমরা হেসে-খেলে একে অপরকে শক্তিশালী বানাতাম। বউচি ধরা পড়া কিংবা পালানো—এসব ঘটনা আমাদের মাঝে হাসি আর গল্পের ঝর্ণা সৃষ্টি করত। আজও যখন সেই সময়গুলো মনে পড়ে, মনে হয় বউচি খেলা ছিল আমাদের জীবনের সোনালী এক অধ্যায়, যা বন্ধুত্বের গাঁথুনিতে অটুট থেকে গেছে। আমরা সবাই সেই দিনগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ, যেখানে খেলা ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।

কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অনেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

image.png