শৈশবের স্মৃতি- সন্ধ্যার পড়ার টেবিল ছিল মধুর স্মৃতির
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। দিন যায় কথা থাকে। দিন কিন্তু সত্যি সত্যি চলেই যাচ্ছে। চলে যাচ্ছে সময়। সময় কখন আসে আর কখনই বা যায় সেটা টেরই পাই না। তাই ব্যস্ততার পরিমানও দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে। আজকাল যেন জীবনের সাথে যুদ্ধ করেই জীবন পার করতে হচ্ছে। তবুও সময় করে বসে পড়লাম আপনাদের জন্য একটু লেখালেখি করার জন্য। আমি আশা করি আজকের ব্লগ আপনাদের সবার অনেক বেশি ভালো লাগবে। সব সময় চেষ্টা করি ভালো ভালো ব্লগগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

AI Tools দিয়ে কভার ফটো তৈরি করা হয়েছে
শৈশবের স্মৃতি সত্যিই ভোলার নয়। জীবনের প্রতিটি দিন নতুন নতুন রঙে ভরা ছিল তখন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হত খেলার পরিকল্পনা। বন্ধুরা দরজায় দাঁড়িয়ে ডাক দিত আর আমি তাড়াহুড়ো করে বইখাতা গুছিয়ে রাখতাম যেন পড়াশোনার কাজ শেষে কোনো ঝামেলা ছাড়াই বের হতে পারি। খেলার মাঠ না থাকলেও গলির কোণে, ফাঁকা উঠানে বা রাস্তার ধারে যে কোনো জায়গাই আমাদের কাছে ছিল খেলার স্বর্গ। সারাদিন ধুলা বালিতে দৌড়ঝাঁপ করে শরীর ঘেমে ক্লান্ত হয়ে যেত কিন্তু আনন্দের কোনো শেষ থাকত না। বিকেলের শেষ আলো ম্লান হলে আমরা বুঝতাম বাসায় ফেরার সময় হয়েছে। তখন মনে হতো এই মধুর সময় যেন শেষই না হয়।
বাড়িতে ফিরে বাবার গম্ভীর মুখ আর বড় ভাইয়ের পড়ার চাপ যেন এক অদৃশ্য ভয় তৈরি করত। সেই ভয়ের মাঝেও ছিল এক ধরনের মজা। সবাই মিলে পড়ার টেবিলে বসে আমরা প্রতিযোগিতা করে জোরে জোরে পড়তাম। কার গলার জোর সবচেয়ে বেশি সেটা ছিল আমাদের গোপন খেলার মতো। ভাইবোনের সেই পড়ার শব্দে ঘর ভরে উঠত এক অদ্ভুত প্রাণচাঞ্চল্যে। মাঝে মাঝে বইয়ের পাতা উল্টে উল্টে মনে হতো আমরা যেন কোনো রহস্যের জগতে ভেসে যাচ্ছি।
মা রান্নাঘর থেকে আমাদের প্রতিযোগিতার শব্দ শুনে খুশি হতেন, কিন্তু যখন শব্দ কমে আসত তখন রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে ডাকতেন। “কি রে কি করিস পড়ার আওয়াজ কোথায়” এই প্রশ্নে হঠাৎ চমকে উঠতাম আমরা। মায়ের সেই রাগের ভিতরে লুকিয়ে থাকত ভালোবাসা আর যত্নের স্পর্শ। পড়ার ফাঁকে মা যখন নিজের হাতে বানানো নাস্তা নিয়ে আসতেন তখন সেই গন্ধ আর স্বাদে ঘরটা ভরে যেত। গরম পরোটা, মিষ্টি চা বা মৌসুমী ফলের স্বাদ যেন তখন সব কিছুর চেয়ে বেশি আনন্দ দিত। নাস্তা খেতে খেতে আমরা হাসি মজা করতাম আর নতুন করে পড়া শুরু করতাম।
বাতাসে ভেসে আসা সন্ধ্যার গন্ধে মনে হত সময় যেন থমকে আছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে চারপাশ অন্ধকার হয়ে যেত কিন্তু সেটা আমাদের জন্য কোনো সমস্যা ছিল না। সা হারিকের মৃদু আলো জ্বালিয়ে মা আমাদের আবার পড়ার টেবিলে বসাতেন। সেই আলোতে বইয়ের অক্ষরগুলো যেন আরো স্পষ্ট লাগত। আলো-আঁধারির মধ্যে আমরা গল্প বানিয়ে হাসাহাসি করতাম, আর বইয়ের পাতায় হারিয়ে যেতাম অন্যরকম জগতে। হারিকেনের হলুদ আলো আর মায়ের কণ্ঠ মিলেমিশে এক ধরনের শান্তি এনে দিত। সেই আলোতে পড়াশোনা করার অভিজ্ঞতা আজও মনে হলে মন ভরে যায়।
গরমের দিন হোক বা শীতের রাত, আমাদের আনন্দের জগৎ ছিল একটাই। শীতকালে ঘন কুয়াশায় ঢাকা সকালগুলো যেন জাদুর মতো লাগত। মোটা কম্বলের নিচে বসে চুপচাপ গল্প শোনা আর বাইরে থেকে ভেসে আসা পাখির ডাক আমাদের দিন শুরু করত এক মায়াবী আবেশে। খেলাধুলার ফাঁকে কখনো আমরা নদীর ধারে যেতাম, কখনো ঘাসের ওপর বসে আকাশের মেঘ গুনতাম। জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো তখন এত বড় আনন্দ এনে দিত যা আজকের ব্যস্ত জীবনে কল্পনাও করা যায় না।
বন্ধুদের সাথে কাটানো সময় ছিল সবচেয়ে মধুর। গাছের ডালে দোল খাওয়া, লুকোচুরি খেলা বা হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া সবই ছিল একেকটা রঙিন গল্প। বৃষ্টির সময় আমরা সবাই মিলে মাটিতে জলকেলি করতাম, ঘাসে গড়িয়ে হাসির রোল তুলতাম। মাটির গন্ধ আর বৃষ্টির শব্দ মিলেমিশে এক অসাধারণ অনুভূতি এনে দিত। তখন মনে হতো এই পৃথিবীর সব সুখ আমরা পেয়েছি।
শৈশবের সেই দিনগুলো শুধু আনন্দের ছিল না, ছিল শেখারও। বড়দের কাছ থেকে শাসন পেলেও তাতে ছিল অশেষ ভালোবাসা। পড়াশোনার চাপের মধ্যে লুকিয়ে ছিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। বাবা যখন রাতে গল্প শোনাতেন, তাতে জীবনের শিক্ষা লুকিয়ে থাকত। মায়ের রান্নার গন্ধ, ভাইবোনের খুনসুটি আর বন্ধুদের সাথে খেলার মুহূর্তগুলো আজও হৃদয়ে গেঁথে আছে।
এখন সময়ের সাথে সবকিছু বদলে গেছে। শহরের কোলাহল, প্রযুক্তির ব্যস্ততা আর জীবনের নানা চিন্তা শৈশবের সেই সরল আনন্দগুলোকে আরও অমূল্য করে তুলেছে। অনেক কিছু অর্জন করেছি, অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, কিন্তু শৈশবের সেই নির্ভেজাল দিনগুলো ফিরে পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে মনে হয় যদি একদিনের জন্যও সেই সময়টা ফিরে আসত।
শৈশবের স্মৃতি যেন এক অমূল্য সম্পদ। যতই বয়স বাড়ুক, জীবনের কোলাহল বাড়ুক, সেই স্মৃতিগুলো হৃদয়ের গভীরে অটুট থেকে যায়। ধুলা বালির খেলা, মায়ের ডাকে পড়ার টেবিলে বসা, হারিকেনের আলোয় বই পড়া আর বন্ধুদের সাথে হাসি মজা করার মুহূর্তগুলো আজও মনকে ভরিয়ে দেয় আনন্দে। এই স্মৃতিগুলোই আমাদের বর্তমান জীবনে শক্তি জোগায়, মনে করিয়ে দেয় সরলতার সৌন্দর্য আর পরিবারের উষ্ণতা। জীবনের সব অর্জনের মাঝেও শৈশবের সেই মধুর দিনগুলো তাই চিরকাল মনে গেঁথে থাকবে, হৃদয়ের গভীরে অমলিন হয়ে।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy

প্রত্যেকের জীবনের শৈশবটা ছিল সোনালী অতীত এর কারণ হলো তখন শুধুমাত্রই খাওয়া দাওয়া আর আনন্দ ছিল অপরিসীম সবকিছুতেই ছিল সীমাহীন আনন্দ ছোট ছোট জিনিস গুলির মধ্যেও খুবই চমৎকার সময় উপভোগ করেছিলাম তারই একটি অংশ হলো সন্ধ্যাবেলায় পড়ার টেবিল। এটা ছিল এক মধুর স্মৃতি।
সন্ধ্যা হলেই পড়ার টেবিলে চলে যেতাম। আর সেই সময় গুলো খুবই মধুর ছিল। অনেক ভালো লেগেছে এই লেখাগুলো পড়ে। শৈশবের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম আপু।