জেনারেল রাইটিং:- "ভদ্রতার আড়ালে অন্যায়ের প্রশ্রয় — নীতির পথে আমার সিদ্ধান্ত”
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমিও আছি ভালোই। তবে ব্যস্ত এ নগরে কতটুকু সময় ভালো থাকতে পারবো সেটা বলা মুশকিল। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় যান্ত্রিক জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছুকে বন্ধ করে দিয়ে দূরে কোথাও সবুজ গাছের ছায়ায় নিজেকে একটু স্বস্থির ছায়া দিতে। কিন্তু ঐ যে বাস্তবতা, সেটা তো বড়ই নিষ্ঠুর আর নির্মম। কোন কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না। সে যাই হোক বাবা । চলুন মূল পোস্টে ফিরে যাওয়া যাক।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের মানুষগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কে আমার লেখার যাদুতে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। জানিনা কতটুকু আপনাদের মাঝে নিজের মনের কথা গুলো কে শেয়ার করতে পারি। আজ চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল রাইটিংটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা যেন এক অদ্ভুত নাট্যমঞ্চ। এখানে প্রতিদিন অসংখ্য চরিত্র আসে-যায়, কেউ নায়ক হয়ে ওঠে, কেউ খলনায়ক, আর কেউ থাকে নীরব দর্শক হয়ে। কিন্তু আমি যতই এই নাটক দেখি, ততই আমার চোখে ধরা পড়ে এক ধরনের কষ্টকর দৃশ্য—যেখানে অন্যায়কারীরা তাদের ভুল করেও প্রশ্রয় পায়, আর সৎ মানুষগুলো অবহেলিত থেকে যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, অনেকেই এমনভাবে অন্যায়কারীদের সঙ্গে মিশে, হাসি-তামাশা করে, তাদের ভুল এড়িয়ে যায় যে মনে হয় তারা যেন কোনো ভুল করেইনি। এই আচরণ শুধু যে অন্যায়কে স্বাভাবিক করে তোলে তা নয়, বরং সমাজে এমন এক বার্তা পাঠায়—যে অন্যায় করলেও সহজে মেনে নেওয়া যায়, যদি আপনার প্রভাব থাকে বা আপনি সঠিক সম্পর্কের মধ্যে থাকেন। এটা আমার চোখে ভীষণ উদ্বেগজনক বিষয়।
অন্যদিকে, যেসব মানুষ সৎ, সরল, নীতিবান—যারা অভিনয়ের আড়ালে নিজেদের লুকাতে পারে না, মিথ্যা বলে সুবিধা নিতে পারে না, কিংবা কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না—তাদের প্রতি এই সমাজ অনেক সময় সহানুভূতিহীন হয়ে পড়ে। বরং এমন মানুষদের ওপর অযথা দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাদের মনোভাবকে ভুল বোঝা হয়, আর প্রয়োজন ছাড়া তাদের সঙ্গে কেউ কথা বলে না। সৎ মানুষরা যে স্বচ্ছ নীতি মেনে চলে, সেটাই যেন তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। আমি বারবার লক্ষ্য করেছি, মানুষ অন্যায়কারীদের সঙ্গে হাসিমুখে সম্পর্ক রাখে, কিন্তু সৎ মানুষদের দূরে সরিয়ে দেয়। কেন এমন হয়? হয়তো কারণ অন্যায়কারীরা তোষামোদের মাধ্যমে নিজেদের জায়গা বানিয়ে নেয়। তারা হাসি, প্রশংসা, উপহার—এসব দিয়ে সম্পর্ককে আঁকড়ে রাখে। আর সৎ মানুষরা সম্পর্কের জন্য মিথ্যা বলতে বা কারও ভুল আড়াল করতে রাজি নয়। ফলে অনেকে তাদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না।
আমার কাছে বিষয়টা সবসময়ই কষ্টদায়ক ছিল। আমি ভাবতাম, যদি সবাই অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে, বরং প্রশ্রয় দেয়, তাহলে ন্যায় কোথায় দাঁড়াবে? তখনই বুঝলাম, নীরবতাও অনেক সময় অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো। যখন আমরা কোনো ভুলকে দেখেও চুপ থাকি, তখন আসলে সেই ভুলকে আমরা শক্তি জোগাই। অন্যায়কারী আরও সাহসী হয়ে ওঠে, কারণ সে জানে—তার ভুলের জবাবদিহি করার কেউ নেই। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে, অন্যায়কারীদের প্রতি ভদ্রতার নামে মিথ্যা হাসি দেওয়া আসলে নিজেকেই প্রতারণা করা। তাই আমি এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি—অন্যায়কারীদের সঙ্গে কেবল প্রয়োজনীয় কথা বলব, তার বাইরে কোনো ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা সৌজন্যতা দেখাব না। আমি চাই না, আমার ভদ্রতা তাদের জন্য অন্যায় চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়ে দাঁড়াক।
তবে এই পথ বেছে নেওয়া সহজ ছিল না। আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা হলো—সবাইকে হাসিমুখে গ্রহণ করো, ভুল হলেও মেনে নাও। অন্যায়কারীদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখলে অনেকে অভদ্র বা অহংকারী বলে। কিন্তু আমার কাছে এর চেয়ে বড় বিষয় হলো নিজের নীতি ও আত্মসম্মান রক্ষা করা। আমি বিশ্বাস করি, সম্পর্ক তখনই অর্থবহ যখন তা সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি দেখেছি, অন্যায়কারীরা কখনও কখনও এমন ভান করে যেন তারা নির্দোষ, যেন তাদের ভুল ছিল একেবারেই তুচ্ছ। আর আশেপাশের মানুষ সেই ভান মেনে নেয়, কারণ তারা সত্য বললে হয়তো সম্পর্ক নষ্ট হবে বা নিজের অসুবিধা হবে। এই আপসের সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিচ্ছে। অন্যদিকে, সৎ মানুষরা নিজের নীতি আঁকড়ে ধরে রাখলেও, তাদের প্রায়ই একা লড়তে হয়।
আমার কাছে এই অবস্থা যেন এক ধরনের সামাজিক ব্যাধি। একদিকে প্রশ্রয় পাওয়া অন্যায়কারী, অন্যদিকে অবহেলিত সৎ মানুষ—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। আর এই ভারসাম্যহীনতা যত বাড়ে, সমাজে ন্যায়ের স্থান তত সংকুচিত হয়। আমি চাই না, আমার জীবন এই দ্বৈত মানসিকতার মধ্যে কাটুক। তাই আমি চেষ্টা করি নিজের চারপাশে এমন মানুষ রাখতে যারা সত্যকে মূল্য দেয়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভয় পায় না, আর প্রয়োজন হলে ভুল স্বীকার করতে জানে। আমি বিশ্বাস করি, সত্যের পথে চলতে গেলে সম্পর্ক হারানোর ভয় রাখা উচিত নয়। কারণ সম্পর্ক যদি সত্য সহ্য করতে না পারে, তবে তা আসলে সম্পর্ক নয়, বরং একটি মুখোশ মাত্র।
যারা শুধু অন্যায়ের প্রশ্রয় দিয়ে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তাদের থেকে দূরে থাকা আমার কাছে এখন আত্মরক্ষার মতো। এই দূরত্ব আমাকে আরও শক্তিশালী করেছে, কারণ আমি জানি—আমি নিজের নীতি বিক্রি করিনি। আর এই আত্মতৃপ্তি অন্য সব কিছুর চেয়ে বড়। আমার স্বপ্ন একদিন আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে পারব যেখানে সৎ মানুষরা অবহেলিত হবে না, বরং সম্মানিত হবে। যেখানে অন্যায়কারীরা ভদ্রতার নামে আড়াল পাবে না, বরং তাদের ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে, কিন্তু প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ন্যায় ও সততার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলার সংস্কৃতি যদি তৈরি হয়, তবে এই সমাজ শুধু সুস্থই হবে না, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ন্যায়কে মূল্য দিতে শিখবে।
আমি জানি, পরিবর্তন একদিনে আসবে না। কিন্তু যদি প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে ন্যায়ের পথে দৃঢ় থাকে, অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়, তবে ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন সম্ভব। আর আমি সেই পরিবর্তনের পথে নিজের ছোট্ট ভূমিকা রাখতে চাই—প্রয়োজন ছাড়া অন্যায়কারীদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না রাখা, এবং সৎ মানুষদের পাশে থাকা। আমার কাছে এটাই জীবনের প্রকৃত সাফল্য—নিজেকে সত্যের পথে রাখা, যদিও তার জন্য অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। আর এই সাফল্যের স্বাদ অন্য সব কিছুর চেয়ে গভীর, কারণ এর মধ্যে থাকে আত্মমর্যাদা, নীতি, এবং এক অটুট শান্তি।
কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের ব্লগটি। আশা করি আপনাদের মতামত জানিয়ে ধন্য করবেন।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
