জেনারেল রাইটিং-নিঃস্বার্থ জীবনের নীরব যন্ত্রণা
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমিও আছি ভালোই। তবে ব্যস্ত এ নগরে কতটুকু সময় ভালো থাকতে পারবো সেটা বলা মুশকিল। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় যান্ত্রিক জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছুকে বন্ধ করে দিয়ে দূরে কোথাও সবুজ গাছের ছায়ায় নিজেকে একটু স্বস্থির ছায়া দিতে। কিন্তু ঐ যে বাস্তবতা, সেটা তো বড়ই নিষ্ঠুর আর নির্মম। কোন কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না। সে যাই হোক বাবা । চলুন মূল পোস্টে ফিরে যাওয়া যাক।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের মানুষগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কে আমার লেখার যাদুতে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। জানিনা কতটুকু আপনাদের মাঝে নিজের মনের কথা গুলো কে শেয়ার করতে পারি। আজ চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল রাইটিংটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

বোকা মানুষ বলতে আমরা সাধারণত যাদের বুঝি, তারা আসলে মনের দিক থেকে অদ্ভুতভাবে সৎ এবং সরল হয়। তাদের মনে কোনো জটিলতা নেই, কথার মধ্যে কোনো গোপন ফাঁদ নেই, আর জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে তারা সোজাসাপ্টা হতে চায়। ঠিক এই সরলতাই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি, আবার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। কারণ পৃথিবী সবসময় সরল হয় না। অনেকেই নিজের স্বার্থের জন্য সুযোগ খুঁজে বেড়ায়, আর বোকা মানুষদের সেই খোলা বিশ্বাসই তাদের জন্য সহজ দরজা খুলে দেয়।
তারা পরিবারের প্রতি এতটা দায়িত্বশীল যে নিজের ইচ্ছে, নিজের স্বপ্ন, নিজের সুখ সবকিছুর থেকে আগে পরিবারের চাহিদাকে রাখে। সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে রাতের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের চিন্তার কেন্দ্র শুধু পরিবারের সুখ আর নিরাপত্তা। সন্তানের পড়াশোনা, বাবা-মায়ের স্বাস্থ্য, সংসারের খরচ, ভবিষ্যতের সঞ্চয়—সবকিছুতেই তারা নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিতে চায়। কিন্তু অনেক সময় সেই দায়িত্ববোধকেই পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্যবহার করে ফেলে। যখন কোনো কঠিন কাজের বোঝা আসে, তখন সবার আগে ডাকা হয় সেই বোকা মানুষটিকে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বা আনন্দ ভাগ করার সময়ে তাকে হয়তো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। দিনশেষে যদি কিছু ভুল হয়, পরিবারের দোষ-ত্রুটির গ্লানি এসে পড়ে তার কাঁধে।
বন্ধু বা আত্মীয়ের ক্ষেত্রেও গল্পটা আলাদা নয়। বোকা মানুষরা বন্ধুত্বকে বিশ্বাসের জায়গা মনে করে। বন্ধুর দুঃখে তারা ছুটে যায়, রাতে ঘুম ভেঙে হলেও পাশে দাঁড়ায়। তারা ভাবে সবাই নিশ্চয়ই তার মতোই আন্তরিক। কারও অর্থনৈতিক সমস্যা হলে নিজের সঞ্চয় ভেঙে সাহায্য করতে দ্বিধা করে না। কিন্তু যখন নিজের জীবনে সংকট আসে, তখন বোঝা যায় অনেক বন্ধুই শুধু সুবিধার সময় পাশে থাকে। অনেক আত্মীয় আছে যারা আনন্দের দিনে হাসিমুখে আসে, কিন্তু কষ্টের সময় খোঁজও নেয় না। তবুও বোকা মানুষগুলো মন থেকে কাউকে দোষ দেয় না, বরং ভাবে হয়তো সবাই ব্যস্ত ছিল বা সময়ের অভাবেই আসতে পারেনি।
কর্মজীবনেও তারা প্রায়ই ঠকতে থাকে। সহকর্মীর কোনো কাজ বাকি থাকলে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়, অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে দ্বিধা করে না। বস কোনো নতুন প্রকল্পে বিশ্বাসযোগ্য মানুষ খুঁজলে এই সরল কর্মীর ওপরই ভরসা করেন। কিন্তু কৃতিত্ব দেওয়ার সময় বা পদোন্নতির সময় নামটা থাকে অন্য কারও। এই মানুষগুলো প্রতিবাদ করতে শেখেনি, তারা ভাবে সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ তাদের পরিশ্রমের ফল ভোগ করে অন্য কেউ, আর তারা নীরবে পরের দিনের কাজের প্রস্তুতি নেয়।
তাদের জীবনে সুখ নামের পাখিটি যেন চিরকাল ধরাছোঁয়ার বাইরে। ছোটবেলায় হয়তো কোনো স্বপ্ন ছিল—কোথাও ভ্রমণ করা, নিজের জন্য কিছু কেনা, কোনো শখ পূরণ করা। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই স্বপ্নগুলো দায়িত্বের পেছনে হারিয়ে যায়। নতুন কোনো শখ জাগলেও সংসারের খরচ বা পরিবারের প্রয়োজনের কথা ভেবে তারা সেটি মনের কোণে চেপে রাখে। এমনকি নিজের শরীর খারাপ হলেও চিকিৎসার আগে পরিবারের অন্যদের যত্ন নিতেই তারা ব্যস্ত থাকে। তবে তাদের এই ত্যাগের মধ্যেও এক ধরনের শান্তি লুকিয়ে থাকে। তারা জানে না নিজের জন্য বাঁচা কী, কিন্তু অন্যের হাসির মধ্যে তারা নিজের আনন্দ খুঁজে নেয়। সন্তানের মুখের ছোট্ট হাসি, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের শান্ত ঘুম, ভাইবোনের সাফল্য—এসবের মধ্যেই তারা নিজেকে পূর্ণ মনে করে। যদিও অনেক সময় এই আনন্দ একতরফা থেকে যায়, কারণ অন্যরা হয়তো বোঝেই না যে এই শান্ত মুখের পেছনে কতটা ত্যাগ লুকিয়ে আছে।
বোকা মানুষগুলো যতবার আঘাত পাক, তবুও আবার নতুন করে বিশ্বাস করতে শেখে। কেউ তাদের ঠকালে, তারা মনে করে হয়তো পরিস্থিতি এমন ছিল বা সে মানুষটা তখন ভুল বুঝেছিল। তাই পরেরবারও যখন কেউ সাহায্য চায়, তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে হাত বাড়িয়ে দেয়। তাদের মনে প্রতিশোধ বা ঘৃণা জমে না। অনেকেই এই গুণটিকে দুর্বলতা ভাবে, কিন্তু আসলে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। তাদের চোখে পৃথিবী এখনও সুন্দর। তারা ভাবে মানুষের মধ্যে ভালো দিকটাই আসল, খারাপটা সাময়িক। তাই প্রতারণার পরও তারা মানবতার ওপর ভরসা রাখে। এমনকি যে মানুষ একদিন কষ্ট দিয়েছে, তাকেই হয়তো আবার বিপদে সাহায্য করে। তাদের জন্য ভালোবাসা দেওয়া মানে কোনো হিসেব নয়, কোনো লাভক্ষতির খেলা নয়।
তবে সমাজের এক বড় অংশ এই সরলতাকে সহজ সুযোগ হিসেবে নেয়। কেউ তাদের অনুভূতি নিয়ে খেলে, কেউ তাদের সময় নিয়ে। অনেক সময় তারা বুঝতেও পারে না যে তারা ব্যবহৃত হচ্ছে। কেউ টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেয় না, কেউ কাজের কৃতিত্ব কেটে নেয়, কেউ শুধু প্রয়োজনের সময় খোঁজ নেয়। কিন্তু এই মানুষগুলো তবুও নিজের সৎ মন হারায় না। তাদের জীবনের গল্প যদি খেয়াল করি, দেখব তারা সমাজের আসল ভরসা। পরিবারে শান্তি থাকে তাদের নীরব ত্যাগে, বন্ধুত্বে উষ্ণতা আসে তাদের আন্তরিকতায়, কর্মক্ষেত্রের ভারসাম্য থাকে তাদের দায়িত্ববোধে। যদি একদিন এই মানুষগুলো হঠাৎ বদলে যায়, স্বার্থপর হয়ে পড়ে, তাহলে সমাজের সম্পর্কগুলো ভেঙে পড়বে। তাই তাদের সরলতা আসলে মানবতার এক অমূল্য সম্পদ।
আমাদের উচিত এই মানুষগুলোর কদর করা। তাদের ভালোবাসা আর সততাকে দুর্বলতা ভেবে ঠকানো নয়, বরং তাদের পাশে দাঁড়ানো। ছোট্ট একটি ধন্যবাদ, সামান্য যত্ন বা প্রশংসা তাদের জীবনে অপার আনন্দ আনতে পারে। আমরা যদি তাদের একটু সময় দিই, একটু সম্মান করি, তবে তাদের মনও খুশিতে ভরে উঠবে। হয়তো তখন তারা বুঝবে যে তাদের ত্যাগ বৃথা যায়নি। বোকা মানুষদের জীবন আসলে ধৈর্য আর ভালোবাসার এক অবিরাম যাত্রা। যত প্রতারণা, যত কষ্ট আসুক, তারা সৎ থাকার পথই বেছে নেয়। হয়তো তারা বড় কোনো পুরস্কার পায় না, অর্থ বা খ্যাতি অর্জন করে না, কিন্তু তাদের হৃদয়ের শক্তিই পৃথিবীকে নীরবে বদলে দেয়। একদিন হয়তো তারা নিজের মতো মানুষের কাছেই সত্যিকারের সুখ খুঁজে পাবে। আর যদি না-ও পায়, তবু তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রমাণ করবে যে সত্যিকারের শক্তি অর্থ বা ক্ষমতায় নয়, বরং সৎ হৃদয় আর অসীম সহনশীলতায়।
এই কারণেই বোকা মানুষদের আমরা যতই অবহেলা করি না কেন, তারা আসলে পৃথিবীর আলোর দিকটাকে বাঁচিয়ে রাখে। তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, আর অন্তহীন সহানুভূতিই প্রমাণ করে যে মানবতার জয় সবসময় সৎ হৃদয়ের হাতেই থাকে।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
