'সাজানো সংসার গল্পের দশম পর্ব'

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে সাজানো সংসার গল্পের দশম পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, গল্পের দশম পর্বটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-fauxels-3184183 (1).jpg

সোর্স


রাকেশ তার বউ লক্ষ্মীর কথা শুনে পরের দিন প্রদীপ কে ফোন করে। ফোন ধরে প্রদীপ বলে, দাদা তুমি আবার ফোন করেছ আমি তোমাকে কতবার করে বলেছি যখন তখন আমাকে ফোন করবে না আমি সব সময় কাজের মধ্যে থাকি। রাকেশ বলে, প্রদীপ তোর সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে? প্রদীপ বলে, তোমার তো সেই একটাই কথা টাকা কবে পাঠাবো। রাকেশ বলে, প্রদীপ তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমি টাকার ব্যাপারে তোকে ফোন করিনি। প্রদীপ বলে, তাহলে কি জন্য আমাকে ফোন করেছো? রাকেশ বলে, তুই একটু বাড়িতে আসবি তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে যা ফোনে বলা সম্ভব নয়। প্রদীপ বলে, এখন আমি বাড়িতে আসতে পারবো না কারণ অফিসে অনেক কাজ রয়েছে সেগুলো করতে হবে। রাকেশ বলে, আচ্ছা ঠিক আছে অফিসের কাজ ছেড়ে খুব দ্রুত বাড়িতে আয়। প্রদীপ বলে, কি হয়েছে বলোতো? নতুন কোন ফাদ পেতেছ নাকি? রাকেশ বলে, একি বলছিস। প্রদীপ হাসতে হাসতে বলে, তোমাদের মতন মানুষকে আমি হারে হারে চিনি দাদা। আজ আমি ভালো চাকরি করছি ভালো বেতন পাচ্ছি তার জন্য হয়তো। রাকেশ বলে, ছি, ছি প্রদীপ এতটা নিচে নেমে যাবি আমি কল্পনাও করতে পারিনি। প্রদীপ কাজের অজুহাত দেখিয়ে ফোনটি কেটে দেয়। প্রদীপের কথাগুলো রাকেশের মনে খুব লেগে যায় তার দুচোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে। তখন লক্ষী তার কাছে এসে বলে,কি হয়েছে গো? তোমার চোখে জল কেন? রাকেশ বলে, জানো লক্ষী যে ভাইকে নিজের রক্ত জল করা টাকা দিয়ে পড়াশোনা করিয়েছি। জমি বন্ধক রেখে যে ভাইকে চাকরি পাইয়েছি। সে ভাই আজ আমাকে টাকার খোটা দিচ্ছে। লক্ষ্মী বলে, তুমি ভেঙে পড়ো না ও তো ছোট ভাই তোমার ওর কথাতে কিছু মনে করো না। শহরে থাকে শহরের মানুষের সঙ্গে মিশতে মিশতে হয়তো একটু পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু দেখো ওর নিজের ভুল ঠিক বুঝতে পারবে।


কয়েকদিন পর প্রদীপ গাড়ি চালিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসে। বাড়ির সামনে এসে গাড়িতে হন দিতেই তখন তার বৌদি ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে তাদের বাড়ির সামনে বড় একটি গাড়ি। আর গাড়িতে দেখতে পায় প্রদীপ বসে রয়েছে। তখন সে দেরি না করে দৌড়ে তার মাকে ডাক দেয় আর বলে মা দেখে যাও তোমার ছেলে এসেছে গাড়িতে করে। তার মা ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে তার ছেলে প্রদীপ। প্রদীপ গাড়ি থেকে নেমে সোজা মায়ের কাছে এসে বলে,কি হয়েছে দাদা এত জরুরী বাড়িতে আসতে বলল। তার মা বলে, সে কথা না হয় পরে হবে তুই আয় ভিতরে এসে বস। তখন প্রদীপ বলে, আচ্ছা ঠিক আছে আমি ঘরেতে বসছি। প্রদীপ ঘরেতে যায় আর তার মা লক্ষীকে বলে, বৌমা তুমি প্রদীপের জন্য একটু শরবত করে নিয়ে এসো আর সঙ্গে কিছু খাবার আর হাত পা কাটা নিয়ে এসো। লক্ষ্মী প্রদীপের খাবার তৈরি করতে চলে যায়। এরপর খাবারগুলো প্রদীপের কাছে এনে দেয়। তখন প্রদীপ বলে, আমি এসব খাব না দাদাকে ফোন দিয়ে বলো দ্রুত বাড়িতে আসতে। লক্ষ্মী বলে, আমি তোমার দাদাকে ফোন করেছি খুব শীঘ্রই তোমার দাদা বাড়িতে চলে আসবে। তুমি কিছু খেয়ে নাও? প্রদীপ বলে, বৌদি তুমি এসব নিয়ে যাও এত নোংরা খাবার আমি খাই না। প্রদীপের মুখে এই কথাটা শুনে তার বৌদি খুবই কষ্ট পায়। বৌদি হেসে দিয়ে বলে না ভাই নোংরা নয় তুমি নিশ্চিন্তে খেতে পারো। প্রদীপ বলে, বৌদি তোমাকে একটা কথা বলি তোমরা এত গরমে থাকো কি করে? দাদাকে বল নতুন বাড়ি তৈরি করতে আর ঘরে এসি লাগাতে। বাড়ি তৈরি করতে যত টাকা লাগবে আমি দিয়ে দেব। লক্ষ্মী বলে, তুমি শহরে থাকো তো তাই গ্রামের আবহাওয়াটা তোমার এখন আর শরীরে ভালো লাগে না। আমরা গ্রামের মানুষ আমাদের শহরের মতন জীবন যাপন করাটা সাজে না।


প্রদীপ ও লক্ষীর মধ্যে কথোপকথন করতে করতে তার ভিতর চলে আসে রাকেশ। রাকেশ এসে তার ভাইকে বলে, কেমন আছিস তুই? প্রদীপ বলে, হ্যাঁ দাদা আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? রাকেশ বলে, আমি ভালো আছি। বাড়ির সামনে গাড়িটা দেখলাম ওই গাড়িটা কি তোর? প্রদীপ বলে, হ্যাঁ দাদা কোম্পানি আমার কাজে খুশি হয়ে আমাকে গাড়িটি উপহার দিয়েছে। রাকেশ বলে, খুব ভালো হয়েছে খুব ভালো তুই আরো অনেক বড় হ এটাই তো আমি চাই। রাকেশ লক্ষ্মীকে বলে, কি গো? তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছ আমার ভাই এসেছে আমরা আজ সবাই একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করব। প্রদীপ বলে, না দাদা আমার হাতে সময় নেই তুমি আমাকে কি জন্য ডেকেছো সেটা বল। রাকেশ বলে, বলবো ভাই বলবো আগে খাওয়া দাওয়া করি তারপর না হয় সব কথা বলব। লক্ষ্মী তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো মুরগিটা মেরে কষাকষা ঝোল কর তো প্রদীপ মুরগির মাংস খেতে খুব পছন্দ করে। লক্ষী দেরি না করে চলে যায় রান্না করতে। রাকেশ প্রদীপ কে বলে, চল দুই ভাই মিলে স্নান করতে যাই তারপর সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসব। প্রদীপ না না করা সত্ত্বেও রাকেশ তাকে জোর করে নিয়ে যায়। কারণ এটাই হচ্ছে ভাইয়ের ভিতর ভাইয়ের আলাদা একটা ভালোবাসা। ছোট ভাই যতই অপমান করুক না কেন দাদারা সে কথা মনে রাখেনা। কারণ পরিবারের দাদা হল বাবার সমান। বাবা যেমন সন্তানের উপর রাগ করে থাকতে পারে না তেমন দাদারা ও ছোট ভাইদের উপর রাগ করে থাকতে পারে না।

আজ গল্পের পর্বটি এখানে শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  

@punicwax here!

Wow, @saikat890, another captivating episode in your "Sajano Sangsar" series! I'm really enjoying following the unfolding family drama. The tension between Rakesh and Pradeep is palpable, and you've captured the emotional complexities of their relationship beautifully.

The scene where Pradeep dismisses the food offered by his sister-in-law, Lakshmi, is particularly powerful and highlights the shifting dynamics within the family. I'm eager to see how Rakesh will navigate these challenges and if Pradeep will come to understand the hurt he's causing.

বন্ধুরা (Friends), have you been following this story? What are your predictions for the next installment? Share your thoughts below! @saikat890, keep up the great work!