তারাপীঠ ভ্রমণ ও ফটোগ্রাফি পর্ব ২

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago (edited)

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি তারাপীঠ ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্বটি আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করছি। আশা করি, দ্বিতীয় ভ্রমণ পর্বটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।



আমরা গ্রামের প্রকৃতিকে উপভোগ করতে করতে সামনের দিকে আগাতে লাগলাম। গ্রামের রাস্তার দু'পাশে বড় বড় গাছ-গাছালি দিয়ে পুরো রাস্তাটা ঢাকা ছিল। মাঝেমধ্যে সূর্যের আলো সেই গাছের আড়াল থেকে উঁকি মারছে। এই দৃশ্য উপভোগ করতে খুবই ভালো লাগছিল। আমরা যদি বাইকে না আসতাম তাহলে এত সুন্দর প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারতাম না। গ্রামের রাস্তার দুপাশে সবুজ মাঠ পেরিয়ে আমরা গ্রামে প্রবেশ করলাম। এখানে দেখতে পেলাম সেই প্রাচীনকালের মাটির ঘর। এখানে বেশিরভাগ মানুষ এই মাটির ঘরে বসবাস করে থাকে। যাদের দালান রয়েছে তাদেরও বাড়ির সামনে একটি মাটির ঘর রয়েছে। এই সভ্য সমাজের মানুষ যেখানে ইট পাথরের ভিতর বসবাস করছে সেখানে এই মানুষগুলো এখনো পর্যন্ত মাটির ঘরে বসবাস করছে। এটি কিন্তু আমাকে খুবই অবাক করেছে। আমি কিছু ছবি নিচে দিয়ে দিলাম আপনারা দেখলে বুঝতে পারবেন। ছবিগুলো তুলেছিলাম বাইকে রানিং অবস্থাতে।
IMG20250904145829.jpg

IMG20250904150339.jpg

IMG20250904150338.jpg
ক্যামেরা পরিচিতি: oppo
ক্যামেরা মডেল: oppo A53s 5G
ক্যামেরা দৈর্ঘ্য:4.05mm
তারিখ:০৩.০৯.২০২৫
সময়:১০.৪৫ মিনিট
স্থান: শিমুলিয়া


গ্রামের এই সৌন্দর্যের ভেতর রাইটিং করতে একটি আলাদা অনুভূতি হচ্ছিল। কিন্তু এই সৌন্দর্যের ভেতর বেশিক্ষণ আমরা রাইট করতে পারলাম না। কারণ গুগল ম্যাপ আমাদের আবার শহরের একটি রাস্তায় উঠিয়ে দিল। শহরের রাস্তা মানে বুঝতে পারছেন দূষিত বাতাস আর সেইসঙ্গে রয়েছে ধুলা আর বালি। যাই হোক, শহরের রাস্তাতে আমরা প্রায় আরো ১০০ কিলোমিটার পারি দিলাম। আমার একটু প্রবলেম হচ্ছিল কারণ প্রচন্ড গরমের কারণে আমার ডিহাইডেশন হচ্ছিল। আমি দাদাকে বললাম রাস্তার পাশে কিছুটা সময় রেস্ট নেওয়ার জন্য।কিন্তু দাদা বলল আর মাত্র ৫০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে তারপর আমরা তারাপীঠে পৌঁছে যাব।


আমিও ভাবলাম একবারে তারাপীঠ যে রেস্ট নিব। তারাপীঠ পৌঁছাতে আমাদের যখন ১০ কিলোমিটার বাকি তখন আবারো আমরা একটি গ্রামের রাস্তাতে প্রবেশ করলাম। রাস্তার দু'পাশে সবুজ ধানের ক্ষেত আর অনেক দূরে কিছু ঘরবাড়ি দেখতে পেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম তারাপীঠ। তারাপীঠ পৌঁছে আমাদের প্রথম কাজ ছিল আমাদের হোটেল খোজা। এখানে আগে থেকে আপনাদের বলে রাখি আমরা কিন্তু আগে থেকে হোটেল বুকিং করেছিলাম যার জন্য আমাদের ততটা সমস্যা হয়নি। যাই হোক, আমরা আমাদের হোটেলটি পেয়ে গেলাম আর হোটেলটি নিয়েছিলাম তারাপীঠ মন্দিরের একেবারে কাছে। হোটেলে যে আমাদের রিসিপশনে অপেক্ষা করতে হলো না দু মিনিটের মধ্যে সব কাজ সেরে আমরা আমাদের রুমে প্রবেশ করলাম। রুমে প্রবেশ করে দুজনে ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম নিচে খাবার খাওয়ার জন্য।


তারাপীঠে কিন্তু অনেক খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে কিন্তু আমাদের কষ্ট করে সেই সব রেস্টুরেন্টে যেতে হলো না। কারণ আমাদের হোটেলের নিচ তালাতে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আমি যেয়ে সঙ্গে সঙ্গে মটন বিরিয়ানি, চিকেন হান্ডি, মটন হান্ডি এবং এগ রাইস এগুলো অর্ডার করলাম। দাদা ও কিন্তু একই খাবার অর্ডার করেছিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আমাদের অর্ডার আসতে শুরু করল। আমাদের দুজনের এত খাবার দেখে আশেপাশের মানুষ কিন্তু আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল 🙂🙂। কিন্তু আমি সে সবের দিকে তেমন একটা খেয়াল না করে আমি কিন্তু খাওয়া শুরু করে দিলাম কারণ আমার প্রচুর ক্ষুধা লেগে গেছিল।

IMG20250904115036.jpg

IMG20250903135410.jpg

IMG20250903135450.jpg

IMG20250903135422.jpg
ক্যামেরা পরিচিতি: oppo
ক্যামেরা মডেল: oppo A53s 5G
ক্যামেরা দৈর্ঘ্য:4.05mm
তারিখ:০৩.০৯.২০২৫
সময়:০৪.২৩ মিনিট
স্থান: তারাপীঠ


খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রুমে যেয়ে দুজনে রেস্ট নিলাম। রেস্ট নিতে নিতে কখন যে দু চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। রাত দশটার দিকে দাদা আমাকে বলল রাতে খাবার খাওয়ার কথা কিন্তু আমি দাদাকে বললাম আমার খাওয়ার ইচ্ছা নাই আমি ঘুমাবো। এই বলে আবারও আমি ঘুমিয়ে পড়লাম দাদা ও আমার সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ল। সকাল হতেই স্নান করে বেরিয়ে পড়লাম পূজা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। আমরা একটি দোকানে যেয়ে পূজা দেওয়ার জন্য ৩০১ টাকা দিয়ে প্রসাদ কিনলাম। এরপর একটি পুরোহিত কে নিয়ে আমরা মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভিতরে যেয়ে দেখি সাধারণ মানুষদের জন্য আলাদা একটি লাইন রয়েছে আর ভিআইপিদের জন্য আলাদা একটি লাইন রয়েছে।আমরা এখানে সময় নষ্ট না করে কিছু টাকা দিয়ে আমরা ভিআইপি লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ভিআইপি লাইনে এসে দেখি এখানেও অনেক বড় লাইন রয়েছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর সেই শুভ সময় টি এল মায়ের মুখ দর্শন করার। এখানে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল তাই কোন রকম ছবি তুলতে পারলাম না। কিন্তু এত কষ্ট করে যখন এসেছি তখন ছবি না তুলে পারি কি করে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু ছবি তুলে নিলাম।সেইসব ছবি আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করছি।
IMG20250904141624.jpg

IMG20250904094522.jpg

IMG20250904094527.jpg

IMG20250904094441.jpg

IMG20250904090314.jpg

ক্যামেরা পরিচিতি: oppo
ক্যামেরা মডেল: oppo A53s 5G
ক্যামেরা দৈর্ঘ্য:4.05mm
তারিখ:০৪.০৯.২০২৫
সময়:০৭.১২ মিনিট
স্থান: তারাপীঠ


মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করতেই মায়ের জবা ফুলের রাঙ্গা চরণ দুখানা দেখতে পেলাম। মায়ের চরণ দুখানা দেখে আমার নিমিষের ভিতর কেন জানি দু চোখের জল চলে এলো। এরপর মায়ের মুখ খানা দেখতে পেলাম তখন আমার দু চোখের জল আর মানতে চাইল না অঝোরে ঝরতে লাগল। মায়ের কাছে এলে সবাই মায়ের কাছে কোন না কোন কিছু চায় কিন্তু আমি চাইতে পারলাম না। কারণ আমার কোন চাওয়া পাওয়া ছিল না। আমি শুধু এটুকু বলেছিলাম আমি যে এত দূর পথ পাড়ি দিয়ে তোমার কাছে আসতে পেরেছি তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি মনে করি, ঈশ্বরের কাছে কোন কিছু চাইতে নেই। কারণ তিনি না চাইতেই আমাদের অনেক কিছু দেয় কিন্তু হয়তো আমরা সেগুলো বুঝতে পারি না। যাইহোক, মায়ের পূজা শেষ করে মায়ের প্রসাদ নিয়ে চলে এলাম রুমে। এসে আবারো ফ্রেস হয়ে নিচে চলে গেলাম সকালে নাস্তা করার জন্য।

আজ পর্বটি এখানে শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  

Wow, @saikat890, what a fantastic first part to your Tarapith travelogue! The way you've captured the essence of rural Bengal, transitioning from the serene village landscapes to the bustling town, is truly captivating. I especially loved the contrast you drew between the traditional mud houses and the modern city life – that really resonates! The photos are beautiful, giving us a real sense of being right there with you on your journey. And the descriptions of the food… Mutton biryani and chicken handi – sounds absolutely delicious!

I'm really looking forward to the second part, especially after that glimpse into the temple visit. Thanks for sharing your experience and photos with us! I am excited to see more.